হিউমের রেফারেন্স সহ ছাপ এবং ধারণাটি ব্যাখ্যা করুন।
প্রথমতঃ হিউম কারণকে কার্যের অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। এ মতবাদ স্বীকার করে নিলে দিনকে রাতের কারণ এবং রাতকে দিনের কারণ বলে মেনে নিতে হয়। কিন্তু আমরা জানি, এদের কোনােটিই কোনােটির কারণ নয়। উভয়ই অপর একটি শর্তের অধীন এবং একই কারণের সহ-কার্য। বস্তুত কারণ শুধু অপরিবর্তনীয় পূর্ববর্তী ঘটনাই নয়। শর্তহীন পূর্ববর্তী ঘটনাও বটে। “কারণ” অন্য কোনাে শর্তের অধীন না হয়েই কার্য উৎপাদন করে। কাজেই কারণ ও কার্যের মধ্যে যে অনিবার্য সম্পর্ক আছে একথা অনস্বীকার্য।
দ্বিতীয়তঃ হিউম একজন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক। তার মতে, যা অভিজ্ঞতায় পাওয়া যায় না তা সত্য নয়। কাজেই তিনি কার্যকারণের অনিবার্য ধারণাকেও অভিজ্ঞতায় পেতে চেয়েছেন। কিন্তু অনিবার্য ধারণাসমূহ হলাে অভিজ্ঞতাপূর্ব ধারণা, অভিজ্ঞতায় এগুলাে পাওয়া যায় না। কাজেই কারণের ধারণাকে অভিজ্ঞতায় খোজা বােকামীরই নামান্তর।
তৃতীয়তঃ হিসাব মত মেনে নিলে আরােহ অনুমান, বিজ্ঞানসম্মত ভবিষ্যদ্বাণী বা গণনাকার্য অর্থহীন হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তসমূহ প্রকৃতির নিয়মানুবর্তিতা নিয়ম এবং কার্যকারণ নিয়মের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং নিশ্চিত। কিন্তু হিউমের মত মেনে নিলে এগুলােকে আর নিশ্চিত বলা যাবে না, সম্ভাব্য বলতে হবে। এ অর্থে হিউমের মত অগ্রহণযােগ্য।
চতুর্থতঃ হিউম কার্যকারণ নিয়মকে ঘটনার পারম্পর্য বলে ব্যাখ্যা করেছেন। দুটি ঘটনার মধ্যে পারস্পার্য সম্পর্ক দেখা গেলই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে এ কথা বলা যাবে না। যেমন বিদ্যুতের চমক বজ্রধ্বনির মধ্যে কোনাে কার্যকারণ সম্পর্ক নেই যদিও তাদের মধ্যে পারম্পর্য বিদ্যমান রয়েছে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, হিউম কার্যকারণ সম্পর্ককে ঘটনার পূর্বাপর সম্পর্ক বলেছেন। তার মতে, কার্য ও কারাণের মধ্যে কোনাে কোনাে অনিবার্য সম্পর্ক নেই। আসলে কার্যকারণ সম্বন্ধ কেবল পূর্বাপর সম্পর্ক নয়, এ হলাে অনিবার্য সম্পর্ক। তাভিজ্ঞতাবাদী মিল নিজেও একথা স্বীকার করে নিয়েছেন। অনিবার্য সম্পর্কের ধারণা অভিজ্ঞতাপূর্ব, অভিজ্ঞতালব্ধ নয়। সুতরাং হিউমের কার্যকারণ মতবাদটি যদিও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু একেবারে ত্রুটিমুক্ত নয়।