‘সাম্যবাদী’ কবিতার মর্মার্থ বুঝিয়ে বলো।

‘সাম্যবাদী’ কবিতার মর্মার্থ

“সাম্যবাদী” কবিতার মর্মার্থ বিশ্লেষণ করতে গেলে প্রথমেই নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী ভাবধারা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা প্রয়োজন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে একজন বিপ্লবী কবি হিসেবে পরিচিত। তার লেখায় বিদ্রোহ, সাম্য এবং স্বাধীনতার কথা বারবার ফুটে উঠেছে।

“সাম্যবাদী” কবিতায় নজরুল ইসলামের সাম্যবাদী চিন্তাধারা পরিষ্কারভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি মানব সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বিভেদ, বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কবি বিশ্বাস করেন, প্রকৃত সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজের সকল মানুষ এক সমতলে আসবে, এবং সকলের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত হবে।

প্রথমেই, কবিতায় কবি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের মধ্যে যে বিভেদ রয়েছে, তা সমাজের অগ্রগতির পথে বড় বাধা। এই বিভেদ ও বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

কবিতার দ্বিতীয় অংশে, কবি ধর্মীয় ভেদাভেদ ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন, ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করা অন্যায়। সকল ধর্মের মূল কথা হলো মানবপ্রেম, এবং সকল মানুষই সৃষ্টিকর্তার সন্তান। তাই ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি করা বন্ধ করে সবাইকে একতার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।

কবিতার তৃতীয় অংশে, কবি শ্রেণীসংগ্রামের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি মনে করেন, সমাজের দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষদের মুক্তির জন্য শ্রেণীসংগ্রাম অপরিহার্য। সমাজের উপরতলার মানুষদের অত্যাচার ও শোষণ থেকে নিম্নবিত্ত মানুষদের রক্ষা করতে হবে। শ্রেণীসংগ্রামের মাধ্যমে সমাজের সকল মানুষকে সমান অধিকার ও মর্যাদা দিতে হবে।

কবিতার শেষাংশে, কবি সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে কেউ আর অন্যায় ও শোষণের শিকার হবে না। সকল মানুষ একে অপরকে ভালোবাসবে, সম্মান করবে, এবং সমাজে প্রকৃত শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সারসংক্ষেপে, “সাম্যবাদী” কবিতার মূল ভাবনা হলো সমাজের সকল মানুষকে সমান অধিকার ও মর্যাদা দেওয়া। নজরুল ইসলাম এই কবিতার মাধ্যমে সমাজের সকল প্রকার বিভেদ, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার এই সাম্যবাদী চিন্তাধারা আজও আমাদের সমাজে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading