সাদৃশ্যমূলক অনুমান মূল্যায়নের মানদন্ড কি কি শর্তের ওপর নির্ভর করে নিম্নে তা উল্লেখ করা হল
১। যতগুলো বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্যের কথা বলা হচেছ তাদের সংখ্যা নিরূপণ করা।
আমি যে দোকান থেকে চা খেয়েছি সে দোকানের চা ভাল হয়নি বলে আমার বন্ধুকে ঐ দোকানে চা
খেতে নিষেধ করলাম। বন্ধুটি আমাকে বলতে পারে, একবার খারাপ হয়েছে বলে দোকানটাকে
বাদ করে না দিয়ে আর একটা সুযোগ দেয়া উচিত। এর জবাবে আমি যদি দেখাতে পারি যে মলি,
পলি, বানু, মিলি ও শিলা এ দোকান থেকে চা খেয়েছে এবং চা-টা খারাপ বলেছে, তাহলে ঐ
দোকান স¤পর্কে আমি যে সিদ্ধান্তকরেছিলাম তার সম্ভাব্যতা অনেক বেড়ে যাবে। সুতরাং দৃষ্টান্তের
সংখ্যা যত বেশি হবে সাদৃশ্যমূলক অনুমানের সিদ্ধান্তের সত্য হবার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।
২। দুটি বস্তুর মধ্যে যতগুলো বিষয়ে সাদৃশ্য আছে তাদের সংখ্যার ওপর সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সম্ভাব্যতার
পরিমাণ নির্ভর করে।
আমি যে দোকান থেকে এর আগে জুতা তৈরি করেছিলাম এবং যা টেকসই হয়েছিল, এবারও সেই
দোকান থেকে জুতা তৈরি করেছি। সুতরাং এবারের জুতা জোড়াও টেকসই হবে। এই সিদ্ধান্তটির
সত্য হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি হবে, যদি আশ্রয়বাক্যগুলি ঘোষণা করে যে, যে লোকটি আগের
জুতা জোড়া তৈরি করেছিল সেই লোকই বর্তমান জুতা জোড়া তৈরি করেছে, আগের জুতা জোড়ার
মতই এই জোড়াও বেশ দামী, দুটোর চামড়া একই মানের, সেলাইও একই রকমের এবং আগের
জুতা জোড়া আমি যেভাবে যত সময় পরেছি এ জোড়াও সেভাবে এবং সেই পরিমাণ সময় ব্যবহার করবো।
৩। যেসব আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেসব আশ্রয়বাক্যের পরিপ্রেক্ষিতে
সিদ্ধান্তের শক্তি বিচার করা।
রহিম একটি নতুন কেরোসিন স্টোভ কিনেছে এবং এক লিটার কেরোসিন তেলে সেই স্টোভ সাত
ঘণ্টা জ্বলে। করিমও একই নতুন স্টোভ কিনে কিছুটা সম্ভাব্যতার সাথে অনুমান করতে পারে যে,
তার স্টোভটি যেহেতু রহিমের স্টোভের মতই, অতএব তার স্টোভও এক লিটার তেলে সাত ঘণ্টা জ্বলবে।
কিন্তু একই আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে করিম ভিন্নরকম সিদ্ধান্তেও আসতে পারে। যেমন করিম যদি
সিদ্ধান্তকরে যে তার স্টোভ এক লিটার তেলে পাঁচ ঘণ্টার বেশি জ্বলবে, তবে সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা
হবে খুব বেশি।
যদি সে সিদ্ধান্তকরে তার স্টোভটি এক লিটার তেলে ছয় ঘণ্টা জ্বলবে, তবে সিদ্ধান্তটির সত্য হবার
সম্ভাবনা কম হবে। আর যদি করিম সিদ্ধান্তকরে যে, তার স্টোভটি রহিমের স্টোভের মত এক
লিটার তেলে ঠিক সাত ঘণ্টাই জ্বলবে তাহলে তার সিদ্ধান্তটি খুবই দুর্বল হবে।
৪। আশ্রয়বাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলির সাথে যে দৃষ্টান্তের সঙ্গে সিদ্ধান্তের স¤পর্ক আছে তার বৈসাদৃশ্যের সংখ্যা নিরূপণ করে সাদৃশ্যমূলক যুক্তির মূল্যায়ন করা যায়। রহিম যে নতুন স্টোভ কিনেছে তা এক লিটার কেরেসিন তেলে সাত ঘণ্টা জ্বলে। করিমও ‘নতুন’
স্টোভ কিনে সিদ্ধান্তকরলো যে, তার স্টোভও এক লিটার তেলে সাত ঘণ্টা জ্বলবে। কিন্তু এই
সিদ্ধান্তের সত্য হবার সম্ভাবনা খুবই কমে যাবে যদি দেখা যায় যে, রহিম যেখানে তার স্টোভের
ফিতা সামান্য তুলে জ্বালাতো সেখানে করিম ফিতা খুব বেশি করে তুলে জ্বালাচেছ।
৫। আশ্রয়বাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলো পর¯পর যত অসদৃশ হবে, সাদৃশ্যমূলক অনুমানের সিদ্ধান্ততত জোরালো হবে।
নীলু ঢাকা কলেজ থেকে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে বিএ পাস করেছে, কাজেই সে এমএ পরীক্ষাতেও কৃতিত্ব দেখাতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের সত্য হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। কারণ আর পনের জন ছাত্র ঐ একই কলেজ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে পাস করে এমএ পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এই যুক্তিটি আরো জোরালো হবে যদি আমরা দেখাতে পারি যে পনের জন বিভিন্ন পরিবার থেকে এসেছে। তাদের মধ্যে পরিবারগত, বিত্তগত, স¤প্রদায়গত, দেশগত ইত্যাদি নানা পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য আছে।
৬। আশ্রয়বাক্যে উল্লিখিত দৃষ্টান্তগুলি সিদ্ধান্তপ্রতিষ্ঠার পক্ষে যত প্রাসঙ্গিক হবে, সাদৃশ্যমূলক যুক্তির সিদ্ধান্তেসত্য হবার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।
যদু যে দোকান থেকে জুতা কিনেছিল মধুও সেই দোকান থেকে জুতা কিনেছে। যদুর জুতা টেকসই হয়েছিল। সুতরাং মধুর জুতাও টেকসই হবে। এই যুক্তিটি দুর্বল। কিন্তু মধু যদি বলতে পারে যে,
যদু যে দোকান থেকে জুতা কিনেছে সেও সেই দোকান থেকে কিনেছে যদুর জুতা ও তার জুতা
একই চামড়া দিয়ে তৈরি, একই নির্মাতার তৈরি এবং নির্মাণের ব্যাপারে দক্ষতার প্রকাশ উভয়
ক্ষেত্রে এক রকম, তাহলে সিদ্ধান্তটির সত্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হবে। এখানে অনুমানটি বেশ
জোরালো, কারণ আশ্রয়বাক্যে উল্লিখিত বিষয়গুলি সিদ্ধান্তপ্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রাসঙ্গিক। কিন্তু মধু যদি সিদ্ধান্তকরে যে যদুর জুতার মত তার জুতা টেকসই হবে, কারণ তার জুতার রং যদুর জুতার
মতই, তার জুতাও বেশ চকচকে, একই কাগজের বাক্সে রাখা এবং একই লোক উভয় জুতা জোড়া বিক্রি করেছে, তাহলে এই সিদ্ধান্তনিঃসন্দেহে খুবই দুর্বল হবে; কারণ সিদ্ধান্তপ্রতিষ্ঠার পক্ষে উল্লিখিত বিষয়গুলো অপ্রাসঙ্গিক। গুরুত্বপূর্ণবিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেই অনুমান জোরালো হয়, যা দশ-বারোটা অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে মিল থাকলেও হয় না।
সাদৃশ্যমূলক অনুমানের শ্রেণীবিভাগ :
সাদৃশ্যের মৌলিকতার ভিত্তিতে সাদৃশ্যমূলক অনুমানকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ১। সাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান ও ২। অসাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান। এ শ্রেণীবিভাগ নিæের ছকের মাধ্যমে দেখানো যায়
সাদৃশ্যমূলক অনুমান ও সাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান :
যে সাদৃশ্যমূলক অনুমানে বস্তুবা বিষয়ের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণঅপরিহার্য বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যের ভিত্তিতে
সিদ্ধান্তঅনুমিত হয় তাকে সাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান বলে। যেমন
দু’টি গাছের মধ্যে কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, পাতা, ফুল ইত্যাদি দিক থেকে মিল আছে।
তন্মধ্যে একটি আম গাছ।
সুতরাং অপরটিও আম গাছ।
অসাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান :
যে সাদৃশ্যমূলক অনুমানে দু’টি বস্তুর নিছক বাহ্য ও অমৌলিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তঅনুমান করা হয় তাকে অসাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান বলে। যেমন
রবি দেখতে ছবির মত।
ছবি অংকে পাকা।
সুতরাং রবিও অংকে পাকা।
সাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান অসাধু সাদৃশ্যমূলক অনুমান