সাংখ্য দর্শন ও যোগ শিক্ষার মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা কর।

প্রাচীন ভারতীয় দর্শনে আস্তিক্যবাদী যে ছয়টি দর্শনকে ষড়্দর্শন বলা হয়ে থাকে, তার অন্যতম ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য ও যোগ দর্শন। ন্যায়শাস্ত্র হলো বুদ্ধিবাদী বা যুক্তিবাদী দর্শন। ভারতীয় তর্কশাস্ত্রের উৎস ও যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালী হিসেবেই ন্যায় দর্শনকে আখ্যায়িত করা হয়। আর বৈশেষিক দর্শনের ‘পদার্থতত্ত্ব’ বা ‘বিশ্বতত্ত্বে’র জ্ঞান প্রাচীনকালে যে কোন ছাত্রের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করা হতো। বিশ্বতত্ত্বের আলোচনাই বৈশেষিক দর্শনের প্রধান আলোচনা। অন্যদিকে সাংখ্যদর্শন বা সাংখ্যশাস্ত্রকে প্রাচীনতম ভারতীয় দর্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য তথা স্মৃতি, পুরাণ ও অন্যান্য শাস্ত্র গ্রন্থগুলিতে সাংখ্যদর্শনের বিপুল প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দার্শনিক তত্ত্বের দিক থেকে সাংখ্য ও যোগ দর্শনের মধ্যে প্রভেদ খুবই সামান্য। একটি তত্ত্বমূলক, অন্যটি প্রয়োগমূলক দর্শন। যোগ দর্শনে সাংখ্যের পঁচিশটি তত্ত্বের সাথে অতিরিক্ত একটি তত্ত্ব ঈশ্বরতত্ত্ব যুক্ত করে ঈশ্বর স্বীকৃত হয়েছে বলে নিরীশ্বর-সাংখ্যের বিপরীতে যোগ দর্শনকে ‘সেশ্বর-সাংখ্য’ও বলা হয়ে থাকে। একই উপনিষদীয় পরিমণ্ডলে থেকেও দর্শনগুলির মধ্যে পারস্পরিক বৈচিত্র্য অত্যন্ত কৌতুলোদ্দীপক।

দর্শন-চর্চা জ্ঞান-চর্চারই নামান্তর। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন আমাদের বিশুদ্ধ জ্ঞানচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন। কিন্তু বিশুদ্ধ দর্শনচর্চায় বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা যে নিতান্তই হতাশাজনক তা বোধকরি বলার অপেক্ষা রাখে না। সেক্ষেত্রে রণদীপম বসু’র বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষিত ভারতীয় দর্শন সিরিজের ‘চার্বাকেতর ভারতীয় দর্শন-২ (ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য ও যোগ দর্শন)’ গ্রন্থটি এ অপবাদ মোচনে কিছুটা হলেও গতিশীলতা আনবে তা জোর দিয়েই বলা যেতে পারে

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading