কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সবুজের অভিযান’ কবিতায় চিরগতিময় তারুণ্যের অফুরন্ত প্রাণশক্তির জয়গান গেয়েছেন। কবি চিন্তা-চেতনা-মনন পাশ্চাত্য দার্শনিক বেগস-এর গতিতত্ত্বের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। আর তারই ফসল ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থ। গতিই জীবন, স্থিতিই মৃত্যু। গতিবাদের এই চিরন্তন সত্যের উপর এই কবিতাটি প্রতিষ্ঠিত।
এই কবিতায় কবি গতির প্রতীক যৌবন এবং স্থিতির প্রতীক প্রবীণের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতকে নিখুঁত ভাষায় কাব্যরূপ দান করেছে। যৌবন দুরন্ত, দুর্বার সমস্ত রক্ষনশীলতার কারাগার আঘাতে আঘাতে চূর্ণ করে সে সত্যের পথে এগিয়ে চলে।
অন্যদিকে সমাজের উচ্চাসনে বসা জড়ত্বের পূজারী প্রবীণগণ কুসংস্কারের অচলায়তনে বন্দী। কবির চেতনাই এরা ‘আধমরা’। জরাগ্রস্ত প্রবীণরা তাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় চেতনা বন্ধ করে চিত্রপটে আঁকা ছবির মতো অচল হয়ে সমস্ত প্রগতি ও সামাজিক বিকাশ রুদ্ধ করে বসে আছে।
কবির বিশ্বাস, নব যৌবন দুরন্ত প্রাণশক্তির দুর্বার বেগে এগিয়ে গেলে রক্ষনশীল সমাজ হঠাৎ আলোর ঝলকানি স্বরূপ উপলদ্ধি করতে পারবে এবং তাদের মানসিকতার জাগরণ ঘটেবে। বিপদসঙ্কুল অজানা পথে আঘাত এলেও জয়ের লক্ষ্যে বেহিসেবী পথ চলাই যৌবনের আনন্দ। তাই কবি অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরা নবজীবনের বার্তা বাহকদের সমাজের জীর্ণজরাকে সরিয়ে নতুন কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য উদাও আহ্বান রেখেছেন।