লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ ব্যাখ্যা কর। Explain social construction of Gender.

লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ ব্যাখ্যা কর

লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ (Social Construction of Gender) একটি তত্ত্ব যা ধারণা করে যে লিঙ্গ পরিচয় এবং রোলগুলি প্রাকৃতিক বা জৈবিক নয়, বরং সমাজ ও সংস্কৃতির দ্বারা নির্মিত হয়। এই তত্ত্ব অনুসারে, সমাজের ভেতরের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং ঐতিহ্যগত প্রক্রিয়াগুলি ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় এবং তাদের লিঙ্গভিত্তিক আচরণ নির্ধারণ করে।

লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণের মূল বৈশিষ্ট্য:

১. সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়:

  • সামাজিক প্রভাব: লিঙ্গ পরিচয় একটি সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের অভ্যন্তরীণ ধারণা এবং মানদণ্ড ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত আচরণ নির্ধারণ করে।
  • লিঙ্গভিত্তিক রোল: ছেলে-মেয়ে বা পুরুষ-মহিলা হিসেবে কীভাবে আচরণ করতে হবে তা সমাজ দ্বারা নির্ধারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, কিভাবে পুরুষ বা মহিলা হওয়া উচিত, তাদের কী ধরনের কাজ করা উচিত এবং তাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত—এসব ধারা সামাজিকভাবে নির্মিত।

২. সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত ভূমিকা:

  • সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ: বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজে লিঙ্গ সম্পর্কিত আলাদা মূল্যবোধ ও আচরণ থাকে। এই মূল্যবোধগুলো সমাজের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রচারিত হয় এবং ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচয় গঠনে ভূমিকা রাখে।
  • ঐতিহ্য ও রীতিনীতি: ঐতিহ্যগত রীতিনীতি এবং সামাজিক প্রথাগুলো লিঙ্গ পরিচয়ের গঠনে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, বিবাহ, পরিবার পরিকল্পনা, এবং কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক রীতি সমাজের দ্বারা নির্মিত হয়।

৩. লিঙ্গ এবং ক্ষমতার সম্পর্ক:

  • ক্ষমতার বিভাজন: লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ ক্ষমতার বিভাজনকেও প্রতিফলিত করে। বিভিন্ন লিঙ্গের ব্যক্তিরা বিভিন্ন ক্ষমতার স্তরে থাকে এবং সমাজের মধ্যে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষমতা ও সুযোগকে প্রভাবিত করে।
  • সামাজিক প্রথা: সামাজিক প্রথাগুলি এবং সাংস্কৃতিক চর্চাগুলি পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে ক্ষমতার পার্থক্য সৃষ্টি করে, যা বিভিন্ন লিঙ্গভিত্তিক অভ্যন্তরীণ সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করে।

৪. লিঙ্গ এবং পরিচয়ের প্রতিফলন:

  • পরিচয় এবং আচরণ: লিঙ্গ পরিচয় কেবলমাত্র শারীরিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং এটি সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক প্রভাবের একটি ফলস্বরূপ। ব্যক্তির শারীরিক বৈশিষ্ট্য সামাজিকভাবে গঠিত লিঙ্গ পরিচয়ের সাথে মানানসই হতে পারে না।
  • স্বীকৃতি এবং সম্মান: সামাজিকভাবে গঠিত লিঙ্গ পরিচয় সামাজিক স্বীকৃতি এবং সম্মানের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে। যে ব্যক্তি সমাজের নির্ধারিত লিঙ্গ রোলগুলি অনুসরণ করে না, তাকে প্রায়ই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়।

৫. বৈচিত্র্য ও পরিবর্তন:

  • লিঙ্গ পরিচয়ের বৈচিত্র্য: বিভিন্ন সমাজে লিঙ্গ পরিচয় ও অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা ভিন্ন হতে পারে। কিছু সমাজে লিঙ্গ পরিচয়ের অধিক বৈচিত্র্য এবং নমনীয়তা দেখা যায়।
  • পরিবর্তনের প্রক্রিয়া: লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সামাজিক পরিবর্তন, আন্দোলন, এবং শিক্ষার মাধ্যমে লিঙ্গ সম্পর্কিত ধারণা ও আচরণেও পরিবর্তন আসতে পারে।

উপসংহার:

লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণ তত্ত্ব বোঝায় যে লিঙ্গ পরিচয় এবং আচরণ সমাজ দ্বারা নির্মিত এবং সংস্কৃতির প্রভাবের ফলস্বরূপ। এটি প্রমাণ করে যে লিঙ্গ সম্পর্কিত সামাজিক প্রথা, মূল্যবোধ, এবং আচরণ প্রাকৃতিক নয় বরং সামাজিকভাবে গঠিত। লিঙ্গের সামাজিক নির্মাণকে বুঝতে পারলে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং পক্ষপাত দূর করার পথ সুগম হয় এবং একটি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা সম্ভব হয়।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading