লক-এর মতে, মুখ্যগুণ গৌণগুণ কি ?
বস্তুবাদের স্রষ্টা এবং আধুনিক অভিজ্ঞতাবাদের জনক জন লক একজন ব্রিটিশ দার্শনিক। লকের দর্শনের উল্লেখযােগ্য বিষয় হল তার ধারণাসম্পর্কিত আলােচনা। এ ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে তিনি বস্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণ আলােচনা করেছেন। নিচে আমরা এ দুটি বিষয় নিয়ে আলােচনা করব।
মুখ্য গুণঃ কোন বিষয়ে আমাদের মনে ধারণা উৎপন্ন করার যে ক্ষমতা লক তাকে গুণ নামে অভিহিত করেন। যেমন, তুষার গােলক আমাদের মনে শুভ্রতা, শীতলতা ও গােলাকৃতির ধারণা উৎপন্ন করে। এখানে তুষার গােলকের ঐ ধারণাগুলাে উৎপন্ন করার ক্ষমতাকে গুণ বলা হয়। আর দ্রব্য আমাদের মনে যেসব ধারণা সৃষ্টি করে, তাদের সঙ্গে দ্রব্যের কতকগুলাে গুণাবলির সাদৃশ্য রয়েছে। দ্রব্যের যেসব গুণ তাদের সাদৃশ্য-ধারণা সৃষ্টি করে লক সেগুলাের নাম দিয়েছেন মুখ্য গুণ। যেমন- বিস্তৃতি, আকার, আয়তন, কাঠিন্য, গতি প্রভৃতি গুণ হল বস্তুর মুখ্য গুণ। এগুলাে বস্তুর অপরিহার্য গুণ। এ গুণগুলাে বস্তুগত, এগুলাের প্রকৃতই অস্তিত্ব আছে। সব অবস্থাতেই এ গুণগুলাে বস্তুতে অবস্থান করে।
গৌণ গুণঃ মুখ্য গুণ ছাড়াও বস্তুর এমন কিছু গুণ রয়েছে যাদের অস্তিত্ব দ্রব্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত নয় এবং মানুষের অস্তিত্বকে বাদ দিয়ে যাদের অস্তিত্বের কথা ভাবা যায় না; লক বস্তুর এসব গুণকেই গৌন গুণ বলে অভিহিত করেছে। যেমন-রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ, উষ্ণতা, শীতলতা প্রভৃতি হল বস্তুর গৌণ গুণ। গৌণ গুণগুলাের আসলে কোন অস্তিত্ব নেই, এ গুণগুলাে বস্তুর স্বরূপগত গুণ নয়। বস্তু মানুষের মনকে যেভাবে প্রভাবিত করে তা থেকেই এসব গুণের উদ্ভব। গৌণ গুণগুলাে বস্তুর মধ্যে থাকে না। এগুলাে আমাদের ইন্দ্রিয়ের ওপর বস্তুর প্রভাব মাত্র। মুখ্য গুণ ও গৌণ গুণের মধ্যে কতগুলাে পার্থক্য আছে; যেমন-(১) মুখ্য গুণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয় না, কিন্তু গৌণ গুণ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। (২) মুখ্য গুণগুলাে অপরিবর্তনীয়, কিন্তু গৌণ গুণগুলাে পরিবর্তনশীল। (৩) মুখ্য গুণগুলাে বস্তুগত, কিন্তু গৌণ গুণগুলাে ব্যক্তিগত (৪) মুখ্য গুণগুলাে প্রকৃতই বস্তুর সত্তাতে থাকে। কিন্তু গৌণ গুণগুলাে বস্তুর সত্তাতে থাকে না। পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়,বস্তুবাদের স্রষ্টা এবং আধুনিক অভিজ্ঞতাবাদের জনক জন লক একজন ব্রিটিশ দার্শনিক। লকের দর্শনের উল্লেখযােগ্য বিষয় হল তার ধারণাসম্পর্কিত আলােচনা। এ ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে তিনি বস্তুর মুখ্য ও গৌণ গুণ আলােচনা করেছেন।