রাজনীতিতে ভোটের ব্যাখ্যা সম্পর্কে টিকা লেখ?

রাজনীতিতে ভোটের ব্যাখ্যা-

ভোট হল, কোনো সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা প্রতিনিধি নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কোনো সভা, সমিতি বা নির্বাচনী এলাকায়, মতামত প্রকাশের একটি মাধ্যম বা পদ্ধতি। সাধারণত আলোচনা, বিতর্ক বা নির্বাচনী প্রচারণার পর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ দায়িক্ত লাভ করেন। একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করেন। ভোটদানের অধিকার সম্পন্ন ব্যক্তিদের বলা হয় “ভোটার”। ভোট সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে সকল ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও ব্যবহার করা যায়। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে কোন ভোটগ্রহণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে হলে দলসমূহের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যার ভিত্তিতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ থাকা অত্যাবশ্যকীয়।

ভোটগ্রহণ আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক নানা ভাবে হতে পারে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ সাধারণত ব্যালটের মাধ্যমে, যেমন কোনো রাজনৈতিক সমিতির সদস্য নির্বাচন বা কর্মক্ষেত্রে দায়িক্ত নির্ধারণে সংঘঠিত হয়। আর অনানুষ্ঠানিক ভোটদান মৌখিকভাবে, বা হাত তোলার মাধ্যমে অথবা বৈদ্যুতিকভাবে ঘটতে পারে।

রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে, নির্বাচকমণ্ডলী পছন্দের প্রার্থীদের সরকার গঠনের জন্য মনোনীত করেন। নির্বাচনে অধিকাংশ প্রার্থী কোন না কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে বেশ কিছু সংখ্যক দল থাকলেও, নির্বাচন সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় দুটি প্রতিপক্ষ দলের মধ্যেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের, ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপি বা বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর কথা বলা যেতে পারে। পরোক্ষ গণতন্ত্রে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তি, অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্বাচকমণ্ডলীর আকাঙ্ক্ষা এবং দলের নীতির প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে, নির্বাচিত ব্যক্তি নীতিসমূহ বাস্তবায়নে স্বাধীন এবং তৃতীয় কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট নীতিগুলি পাস করার প্রয়োজন হয় না।

যখন বেশিরভাগ ভোটার একই প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেন তাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বলা হয়। প্রত্যেক ভোটারের মতামত গ্রহণ করা হলেও অনেক দেশই ভৌগোলিক এলাকা (যেমন জয়লাভ করা কেন্দ্র সংখ্যার) ভিত্তিতে বিজয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করে। উদাহরণ স্বরূপ, যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী এলাকার বিজয়ী ব্যক্তির, সবসময় সর্বাধিক স্বতন্ত্র ভোট নাও থাকতে পারে। অনেক উদার গণতান্ত্রিক দেশে ভোটারগণ গোপন ব্যালট ব্যবহার করেন যাতে তারা রাজনৈতিক গোপনীয়তা বজায় রেখে প্রভাবমুক্তভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ব্যালট উন্মুক্ত থাকলে, অনেক সময় সময় ভোটার সামাজিক চাপ, জ্ঞানের অভাব, বা অধিকাংশ যাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে মনে করে তার পক্ষে দাঁড়ানোর তাড়না থেকে, কিছু নির্দিষ্ট দলকে ভোট দিতে বাধ্য হতে পারে। গোপন ব্যালট ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য হলো আরো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান জনগণ সুরক্ষিত বোধ করবে এবং যাকে সেরা প্রতিনিধি বলে মনে করেন তাকে নিঃসংকোচে ভোট দিতে সক্ষম হবেন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়। অবশ্য ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের মাধ্যমেও ভোটগ্রহণ করা যেতে পারে, যা ভারত, ব্রাজিল এবং ফিলিপাইনে ব্যবহৃত হয়। ভোটদান ঐচ্ছিক বা বাধ্যতামূলক দুই-ই হতে পারে। বেশিরভাগ দেশেই ভোটদান ঐচ্ছিক, তবে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া সহ বেশ কিছু দেশে এটি বাধ্যতামূলক।

Share
Scroll to Top

Discover more from Online Learning

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading