রবীন্দ্রনাথের প্রথম পর্যায়ের কাব্যগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে পরিচয়দাও। – রবীন্দ্রনাথের প্রথম পর্যায়ের কাব্যগুলির মধ্যে রয়েছে ‘কবিকাহিনী’, ‘বনফুল’,

রবীন্দ্রনাথের পদ্মাপারের কাব্যগুলির মধ্যে রয়েছে ‘সোনারতরী’, ‘চিত্রা’ ও ‘চৈতালি’। ‘সোনারতরী’ কাব্যটি প্রকাশিত হয় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে। কাব্যটি উৎসর্গ করেন দেবেন্দ্রনাথ সেনকে। এ কাব্যের ভূমিকায় কবি জানিয়েছেন-“বাংলাদেশকে তো বলতে পারি না বেগানা দেশ; তার ভাষা চিনি, তার সুর চিনি। ক্ষণে ক্ষত্রে যতটুকু গোচরে এসেছিল তার চেয়ে অনেকখানি প্রবেশ করেছিল মনের অন্দরমহলে আপন বিচিত্র রূপ নিয়ে।” এ কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতা হল ‘সোনার তরী’, ‘বর্ষাযাপন’, ‘যেতে নাহি দিব’, ‘সমুদ্রের প্রতি’ ও ‘বসুন্ধরা’। কাব্যের প্রথম কবিতা ‘সোনার তরী’ ও শেষ কবিতা ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’-র মধ্যে এক আশ্চর্য মিল রয়েছে। ‘সোনার তরী’-তে যার সন্ধান পেয়েছিলেন, সেই নারীই যেন কবিকে নিয়ে গেছে নিরুদ্দেশের পথে-“আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে হে সুন্দরী/বলো কোন পারে ভিড়িবে, তোমার সোনার তরী।” ‘চিত্রা’ কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতার মধ্যে রয়েছে-‘প্রেমের অভিষেক’, ‘এবার ফিরাও মোরে’, ‘অন্তর্যামী’, ‘জীবনদেবতা’ ও ‘স্বর্গ হতে বিদায়’। ‘চিত্রা’ রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শিল্পসম্মত কাব্য। সীমার সঙ্গে সীমাতীতের মেলবন্ধন কবি এখানে লক্ষ করেছেন। ‘জীবনদেবতা’, ‘অন্তর্যামী’ কবিতায় কবি নিজের চালিকাশক্তির কথা জানিয়েছেন। আবার ‘এবার ফিরাও মোরে’ কবিতায় শুনতে পাই-“এই সব মুঢ় স্নান মূক মুখে/দিতে হবে ভাষা-এই সব শান্ত শুষ্ক ভগ্ন বুকে/ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা।” সংগতভাবেই এই কাব্য সম্পর্কে প্রমথনাথ বিশী জানিয়েছেন-“চিত্রাতে কবির প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব বৃক্ষ জীবনের মতো দুই দিকে প্রসার লাভ করিতেছে। একদিকে তাহা আপন ব্যক্তিত্বের নব নব দ্বার মোচন করিতেছে, অপর > দিকে বিশ্বকে, নানাদিক হইতে-সমাজ, রাজনীতি, সৌন্দর্যতত্ত্ব-নানাভাবে আয়ত্ত করিতে চাহিতেছে।” ‘চৈতালি’ কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হল-‘খেয়া’, ‘কালিদাসের প্রতি’, ‘দেবতার বিদায়’ ইত্যাদি। এই পর্বের কাব্যে পদ্মাতীরবর্তী জীবনের প্রকৃতি ও মানুষের কথা প্রবলভাবে এসেছে।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading