অথবা,কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য কী, আলােচনা করাে।
রবীন্দ্রকাব্যের মােহিনীমায়ায় বাংলার কবিকুল যখন মুগ্ধ, তখন মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন কবি নিজস্বতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪ খ্রি.)। যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের উল্লেখযােগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল—‘মরীচিকা’ (১৯২৩ খ্রি.), ‘মরুশিখা’ (১৯২৭ খ্রি.), ‘মরুমায়া’ (১৯৩০ খ্রি.), ‘সায়ম’ (১৯৪০ খ্রি.), ‘ত্রিযামা’ (১৯৪৮ খ্রি.) এবং ‘নিশান্তিকা’ (১৯৫৭ খ্রি.)। ‘অনুপূর্বা’ নামে কবির একটি নির্বাচিত কবিতার সংকলনগ্রন্থও প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য:
• যতীন্দ্রনাথের কবিতায় দুঃখের প্রসঙ্গ বিভিন্নভাবে ঘুরে ফিরে আসায় তাঁকে ‘দুঃখবাদী কবি’ আখ্যা দেওয়া হলেও আসলে জীবনকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন যতীন্দ্রনাথ, তা না পেয়েই এক ধরনের হতাশায় আক্রান্ত হয়েছে তাঁর কবিমন। ধর্ম, প্রেম এবং প্রচলিত কাব্যভাবনা ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য।
• প্রকৃতির সৌন্দর্য বা রােমান্টিকতা নয়, বাস্তবের অতি প্রত্যক্ষতাই যতীন্দ্রনাথের কবিতার মূল সুর—“প্রেম বলে কিছু নাই চেতনা আমার সঙ্গে মিশাইলে সব সমাধান পাই।”
• কবি যতীন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম-পর্বের কবিতায় ঈশ্বরের অস্তিত্ব এবং তাঁর ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ধার্মিক ব্যক্তিদের আস্তিকতা এবং কপট ঈশ্বর-বিশ্বাস নিয়েও তিনি তাঁর কাব্যে সরব হয়েছেন।
• যতীন্দ্রনাথের কবিতার মূল ভিত্তি ছিল মানবতাবাদ।
• একেবারে আটপৌরে চলিত শব্দ এবং নতুন ধরনের চিত্রকল্প প্রয়ােগ করে তিনি কবিতায় নতুন ধারা নিয়ে আসেন।