বাংলা সাহিত্যে প্রথম ও শ্রেষ্ঠতম মহাকাব্য মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’। কাব্যটি ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এরপর হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ড একত্রে ‘প্রকাশিত হয়। মধুসূদন এ কাব্যের কাহিনি নিয়েছেন রামায়ণ থেকে। মধুসূদনের প্রিয় চরিত্র ছিল রাবণ। সেই দাস্তিক রাবণ চরিত্রের হাহাকারই মধুকবি এখানে তুলে ধরেছেন। কাব্যের ঘটনা তিন দিন দুই রাত্রি। কাব্যের সূচনায় বীররসের কথা বললেও সমাপ্তি ঘটেছে করুণ রসে। রাবণ রাজার হাহাকার কাব্যে বড়ো হয়ে উঠেছে। কাব্যটি ন-টি সর্গে সমাপ্ত।
এ কাব্যে মধুকবি রাবণরাজার স্বদেশ রক্ষা করার বৃত্তান্ত ফুটিয়ে তুলতে অগ্রসর হয়েছেন। কাব্যের নাম মেঘনাদের নামে হলেও মধুসূদনের দৃষ্টি রাবণের প্রতি। এজন্যে ষষ্ঠ সর্গে মেঘনাদের মৃত্যুর পরও আর তিনটি সর্গ বর্তমান। পুত্রহত্যাকারীর প্রতিশোধস্পৃহা ও সন্তান হারানোর যন্ত্রণা লিপিবদ্ধ করতে মধুকবিকে তিনটি সর্গ রচনা করতে হয়। মধুসূদন কাব্যের কাহিনি রামায়ণ থেকে নিলেও চরিত্র পরিকল্পনায়, মহাকাব্যিক উপস্থাপনায় পাশ্চাত্যের সাহায্য নিয়েছেন। প্রমীলার সাহসিকতা, সীতা-সরমার বিলাপ, বিভীষণের ধর্মারক্ষা ও লক্ষণের জন্য রামের আত্মচিন্তা-এই বিষয়গুলি মধুসূদন দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ কাব্য সম্পর্কে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন-“মাইকেল যে অচল অটল শূদ্রসমুজ্জ্বল ধবলগিরির উজ্জ্বলঙ্গ শৈলচূড়ার চিত্র অঙ্কন করলেন বাংলা সাহিতো তা অভিনব। এর প্রথম কয়েক ছত্রেই সে যুগের রসিক ও নবীন পাঠক বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলা কাব্যে নতুন প্রতিভার উদয় হয়েছে, যা দলছাড়া, কুলহারা-একক মহিমায় আসীন।”