বাংলা শব্দভাণ্ডার
বাংলা শব্দভাণ্ডার হলো বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সকল শব্দের সমষ্টি। এটি খুবই সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়, কারণ বাংলা ভাষা বিভিন্ন উৎস থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে এবং নিজস্ব ধারা ও নিয়ম অনুযায়ী নতুন শব্দও তৈরি করেছে। বাংলা শব্দভাণ্ডারের প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এবং উৎস নিম্নরূপ:
১. তৎসম শব্দ:
সংস্কৃত ভাষা থেকে অবিকৃতভাবে বাংলায় ব্যবহৃত শব্দ। এদের উচ্চারণ এবং অর্থ প্রায় একই থাকে।
উদাহরণ:
- গুরু
- বিদ্যা
- মাতা
২. তদ্ভব শব্দ:
সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি হলেও উচ্চারণে ও ব্যবহারে কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় ব্যবহৃত শব্দ।
উদাহরণ:
- অগ্নি → আগুন
- সর্প → সাপ
- দন্ত → দাঁত
৩. দেশি শব্দ:
বাংলা ভাষার আদি বা দেশীয় শব্দ, যা বাংলা ভাষার প্রাচীন ভাষারূপ থেকে এসেছে। এগুলি সাধারনত স্থানীয় উৎস থেকে উদ্ভূত।
উদাহরণ:
- মা
- পানি
- মাটি
৪. অর্ধতৎসম শব্দ:
সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি হয়েছে কিন্তু বাংলায় কিছু পরিবর্তনের সাথে ব্যবহৃত হচ্ছে।
উদাহরণ:
- গুরু → গুরু (পরিবর্তিত)
- কৃষ্ণ → কৃষ্ণ (পরিবর্তিত)
- দেবতা → দেবতা (পরিবর্তিত)
৫. বিদেশি শব্দ:
ভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা ভাষা বহিরাগত ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে।
উদাহরণ:
- পানজাবি (ফার্সি)
- চা (চীনা)
- টেবিল (ইংরেজি)
৬. সমসাময়িক শব্দ:
বর্তমান সময়ে প্রচলিত নতুন নতুন ধারণা, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গঠিত বা গ্রহণকৃত শব্দ।
উদাহরণ:
- কম্পিউটার
- ইমেইল
- মোবাইল
৭. পরিভাষা:
বিশেষ কোনো বিষয় বা ক্ষেত্রের নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত বিশেষ শব্দ বা শব্দগুচ্ছ।
উদাহরণ:
- মাইক্রোবায়োলজি: জীবাণুবিজ্ঞান
- অ্যালগরিদম: সমস্যার সমাধানের ধাপ বা প্রক্রিয়া
বাংলা শব্দভাণ্ডারের বৈশিষ্ট্য:
- বহুজাতিকতা: বাংলা ভাষা বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে, যা ভাষাকে বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধ করেছে।
- ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতিফলন: বাংলা শব্দভাণ্ডারে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সমাজের প্রতিফলন দেখা যায়। যেমন, বিভিন্ন বিদেশি শব্দ বাংলা ভাষায় গ্রহণ করা হয়েছে যা ঐতিহাসিক সময়ে বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন জাতির সাথে যোগাযোগের প্রমাণ দেয়।
- পরিবর্তনশীল: সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন ধারণা, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে নতুন শব্দ সৃষ্টি ও গ্রহণ করা হয়।
বাংলা শব্দভাণ্ডার খুবই বৈচিত্র্যময় এবং এর মধ্যে বিভিন্ন উৎসের শব্দ সংমিশ্রণ হয়েছে, যা বাংলাকে একটি সমৃদ্ধ ভাষায় পরিণত করেছে।
আরো পড়ুন
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত বানান-বিধির পরিচয় দাও।
পরিভাষাচর্চার প্রয়োজনীয়তা লেখো।
উদাহরণসহ পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত বানান-বিধির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি লেখো।
পরিভাষা লেখোঃ (যে-কোনো ছ’টি)
বাংলা উচ্চারণ-বিধির সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বাংলা শব্দভাণ্ডার বিষয়ে আলোচনা করো।বাংলা শব্দভাণ্ডারের বৈশিষ্ট্য
বিসর্গ (ঃ) চিহ্নের ব্যবহার দেখিয়ে তিনটি শব্দ লেখো।
পরিভাষা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
হাইফেন চিহ্ন, সেমিকোলন এবং ড্যাস চিহ্নের ব্যবহার দেখিয়ে একটি করে বাক্যে এগুলির প্রয়োগ দেখাও।
অর্ধতৎসম শব্দ কাকে বলে? উদাহরণ দাও। অর্ধতৎসম শব্দের বৈশিষ্ট্য
বাংলা বাক্যে কমা (,) কখন ব্যবহৃত হয় তা উদাহরণ সহযোগে দেখাও।
গত্ব-বিধান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
‘কি’ এবং ‘কী’ কখন ব্যবহার হয় তা উদাহরণসহ লেখো।
বাংলা শব্দভাণ্ডারের অন্তর্গত চারটি আগন্তুক শব্দের উদাহরণ দাও।
উদাহরণসহ সাধু ও চলিত গদ্যরীতির পার্থক্য আলোচনা করো।