ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করো। এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলা একটা প্রাণবন্ত চলমান ভাষা । বহু বছরের ধীর ও ধারাবাহিক বিবর্তনে বাংলা ভাষার বর্ণ ও সংযুক্ত বর্ণের মূল ধ্বনির নানা পরিবর্তন ঘটেছে । ধ্বনির পরিবর্তনশীলতা বাংলা ভাষাকে আরো আন্তরিক ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে । এই পরিবর্তনের পিছনে যে যে কারণগুলি রয়েছে সেগুলি হল —(১) ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু, (২) উচ্চারণে অসাবধানতা ও উচ্চারণ-কষ্ট লাঘবের জন্য ,(৩) অন্য কোনো ভাষার প্রভাবের জন্য , (৪) শ্রবণ ও বোধের ত্রুটির জন্য এবং সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব জনিত কারণে ধ্বনির পরিবর্তন ঘটে ।

শ্রেণীবিভাগ—এই সমস্ত কারণ গুলি মাথায় রেখে ভাষা বিজ্ঞানীরা ধ্বনি পরিবর্তনকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন । এগুলি হল —

(১) ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম 

(২) ধ্বনির লোপ বা ধ্বন্যালোপ

(৩) ধ্বনির স্থানান্তর

(৪) ধ্বনির রূপান্তর ।

(১) ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম (Sound Addition) — উচ্চারণকে সহজ ও সরল করবার জন্য বা উচ্চারণের অক্ষমতার জন্য যখন কোন শব্দের আদিতে, মধ্যে ও অন্তে নতুন কোনো ধ্বনির আগমন ঘটে, তখন সেই জাতীয় ধ্বনি পরিবর্তনকে ধ্বন্যাগম বলে । এই ধ্বন্যাগম দুই প্রকারের যথা (i) স্বরাগম ও (ii) ব্যঞ্জনাগম ।

(i) স্বরাগম (Vowel Addition) :- শব্দের প্রথমে, মধ্যে ও অন্তে যখন কোনো স্বরবর্ণের আগমন ঘটে তখন তাকে স্বরাগম বলে । স্বরাগম তিন প্রকারের—

(ক) আদি স্বরাগম (Vowel Prothesis )— যেমন স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্টেশন > ইস্টিশন, স্টেট > এস্টেট । অর্থাৎ শব্দের প্রথমে আ, ই, এ ধ্বনির আগমন ঘটেছে ।

(খ) মধ্য স্বরাগম (Vowel Insertion)— শ্লোক > শোলোক,  রত্ন > রতন, প্রীতি > পিরীতি -এখানে শব্দের মধ্যে ও, অ , ই ধ্বনিগুলির আগমন ঘটেছে ।

(গ) অন্ত স্বরাগম (Vowel Catathesis)— বেঞ্চ > বেঞ্চি, সত্য > সত্যি,  ল্যাম্প > ল্যাম্পো প্রভৃতি -এখানে ই, ও অ স্বরধ্বনি গুলো শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ।

(ii) ব্যঞ্জনাগম (Consonant Addition) শব্দ মধ্যে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলে ব্যঞ্জনাগম । ব্যঞ্জনাগম ও তিন প্রকার — (ক) আদি, (খ) মধ্য ও (গ) অন্ত ব্যঞ্জনাগম ।

(ক) আদি ব্যঞ্জনাগম (Consonant Prothesis)—উজু > রুজু , ওঝা > রোজা , এখানে শব্দের আদিতে ‘র’ এর আগমন ঘটেছে ।

(খ) মধ্য ব্যঞ্জনাগম (Glide Insertion)— অম্ল > অম্বল, বানর > বান্দর, পোড়ামুখী > পোড়ারমুখী প্রভৃতি । এখানে ব, দ, র ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি শব্দের মধ্যে এসেছে ।

(গ) অন্ত ব্যঞ্জনাগম (Consonant Catathesis)— সীমা > সীমানা , ধনু > ধনুক, নানা > নানান – শব্দের শেষে ‘না’, ‘ক’, ‘ন’ বর্ণের আগমন ঘটে শব্দগুলিকে সরলীকরণ করা হয়েছে ।

Table of Contents

আরো পড়ুন-

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করো। এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

টীকা লেখো: সমীভবন, অপিনিহিতি।

উপসর্গযোগে তিনটি শব্দ গঠন করো।

সমাস কাকে বলে ? সমাস কয় প্রকার ও কী কী ? সমাসের যে-কোনো দুটি প্রকারভেদের বিস্তৃত আলোচনা করো।

প্রত্যয় কাকে বলে ? বাংলা প্রত্যয় বিষয়ে বিশদে আলোচনা করো।

বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে ? বিপর্যাস বা বর্ণ বিপর্যয় বা ধ্বনি বিপর্যয় কাকে বলে

উদাহরণসহ সংজ্ঞা দাও- স্বরসংগতি, সংকর শব্দ, জোড়কলম, বর্ণ বিপর্যয়।

ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি উল্লেখ করে এর প্রধান ধারাগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ? দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।

বিভক্তি কাকে বলে ? শূন্য বিভক্তি বলতে কী বোঝ ? তির্যক বিভক্তি কাকে বলে ?

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading