তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস সম্পর্কে আলােচনা

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচিত্র সৃষ্টিকর্মের ইতিহাসকে মােটামুটিভাবে তিনটি পর্বে ভাগ করা যেতে পারে। 

প্রথম পর্বে আছে ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ (১৯৩২ খ্রি.), ‘পাষাণপুরী’ (১৯৩৩ খ্রি.), ‘নীলকণ্ঠ’ (১৯৪৩ খ্রি.), ‘রাইকমল’ (১৯৩৫ খ্রি.) প্রভৃতি ; 

দ্বিতীয় পর্বে আছে ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯ খ্রি.), ‘কালিন্দী’ (১৯৪০ খ্রি.), ‘কবি’ (১৯৪২ খ্রি.), ‘গণদেবতা’ (১৯৪২ খ্রি.), ‘পগ্রাম’ (১৯৪৪ খ্রি.), ‘সন্দীপন পাঠশালা’ (১৯৪৬ খ্রি.), ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৭ খ্রি.), ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ (১৯৫১ খ্রি.) প্রভৃতি ; 

তৃতীয় পর্বে আছে ‘আরােগ্য নিকেতন’ (১৯৫৩ খ্রি.), ‘বিচারক’ (১৯৫৭ খ্রি.), ‘রাধা’ (১৯৫৯ খ্রি.), ‘সপ্তপদী’ (১৯৫৮ খ্রি.), ‘উত্তরায়ণ’ (১৯৫০ খ্রি.) প্রভৃতি উপন্যাস।

তারাশঙ্করের উপন্যাস এক অস্থির সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে। জমিদারতন্ত্র ক্রমশ ভেঙে পড়ছে, পুরােনাে মূল্যবােধের অবক্ষয় দেখা দিচ্ছেআর তার জায়গা নিচ্ছে নতুন আদর্শ, নতুন সমাজবিন্যাস। তারাশঙ্করের ‘ধাত্রীদেবতা’, ‘কালিন্দী’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্গ্রাম’-এ বারবার নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই রূপান্তরের ছবি। দ্বিতীয়ত, তারাশঙ্করের উপন্যাসের বিশেষত্ব তার আঞ্চলিকতায়। রাঢ় অঞ্চলের ভূগােল এবং তার জীবনধারা শিকড়শুদ্ধ উঠে এসেছে তারাশঙ্করের রচনায়। ‘কবি’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ প্রভৃতি উপন্যাসে বেদে, কাহার ও অন্যান্য পতিত মানুষদের দৈনন্দিন জীবন, বিশ্বাস সংস্কার ও জীবনসংগ্রাম রূপ পেয়েছে। তারাশঙ্করের তৃতীয় পর্বের উপন্যাসগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ রচনা ‘আরােগ্য নিকেতন। জীবন ও মৃত্যুর একই সঙ্গে অবস্থান এবং মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শকে অনুভব করার অভিজ্ঞতা এই উপন্যাসে যেভাবে চিত্রিত হয়েছে তা বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading