জনপ্রিয় সংস্কৃতির কিছু দিক এবং কীভাবে তারা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে তা নিয়ে আলোচনা করুন

জনপ্রিয় সংস্কৃতি বা জনসংস্কৃতি বা সাধারণ সংষ্কৃতি :


বলতে সেই সমস্ত সাংস্কৃতিক উপাদানের সমষ্টিকে বোঝায় যেগুলো বিভিন্ন জনপ্রিয় গণমাধ্যম, সমাজে বহুল প্রচলিত ভাষা ও লোকাঁচারে আধিপত্য বিস্তার করে। প্রতিদিনকার জীবনের নানা চাহিদা ও মিথষ্ক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট সাংস্কৃতিক মুহূর্তগুলো সমষ্টিবদ্ধ হয়ে মূলধারার লোকজনের দৈনন্দিন জীবনের প্রকৃতি নির্ধারণ করে। রান্নাবান্না, কাপড় চোপড়, গণমাধ্যম, বিনোদন, খেলাধুলা, সাহিত্য, ইত্যাদিতে জনসংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে।অনেক সময়ই উচ্চবর্গ আর নিম্নবর্গের মধ্যে জনসংস্কৃতির সীমারেখাটি পরিষ্কার নয় ৷

সমাজের সদস্যদের দ্বারা স্বীকৃত বিভিন্ন বিশ্বাস বা অনুশীলন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অর্থাৎ ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও বিবিধ শিল্প যা পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে এবং যা একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঐ সমাজে সর্বব্যাপি ও প্রাধান্য বিস্তারকারী হয়ে থাকে তাকে জনপ্রিয় সংস্কৃতি (Popular culture) বলা হয়। জনসংস্কৃতি বলতে প্রাধান্য বিস্তারকারী ঐতিহাসিক স্থাপনা ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও বিবিধ শিল্প যা পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে মানুষ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে তার সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও অনুভূতির মিথষ্ক্রিয়াকেও বোঝানো হয়। একটি নির্দিষ্ট সমাজে যা অত্যন্ত বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সেইজন্য, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি কোন ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গী তৈরিতে জনসংস্কৃতি প্রভাব বিস্তার করে।[2] যাহোক, জনসংস্কৃতিকে ব্যাখ্যা করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে।[3] এই কারণে, জনপ্রিয় সংস্কৃতি হচ্ছে এমন কিছু যা বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে পরস্পরবিরোধী ‍উপায়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে। সাধারণভাবে সংস্কৃতির অন্যান্য রূপ যেমন: লোক সংস্কৃতি, শ্রমজীবী-শ্রেণীর সংস্কৃতি বা উঁচু সংস্কৃতির সঙ্গেে এবং বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন যেমন: মনঃসমীক্ষণ, উত্তরআধুনিকতাবাদ, এবং অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে এর বৈপরীত্য রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত জনসংস্কৃতির ধরন হচ্ছে: বিনোদন, (যেমন: চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, টেলিভিশন এবং ভিডিও গেমস) খেলাধুলা, সংবাদ, রাজনীতি, ফ্যাশন, প্রযুক্তি, এবং স্ল্যাং।

অনেকে কখনো কখনো জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে (Popular culture) তুচ্ছ এবং মূলধারায় সম্মতিসূচক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য শিক্ষা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র, সংবাদ, ভিডিওগেম ও সংস্কৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক আধেয়কে সুচিন্তিত ভাবে অতি সরলীকরণ বলে জ্ঞান করেন। এর ফলে মূল ধারার বাইরের সংস্কৃতিগুলো {লক্ষণীয়ভাবে ধর্মভিত্তিক দলগুলো (religious groups) এবং উপসংস্কৃতির দলগুলো (countercultural groups)} জনসংস্কৃতিকে অত্যন্ত সমালোচনা করে থাকে। তারা এই সংস্কৃতিকে অগভীর, ভোগবাদী, গণ উত্তেজনাকর, বা দূষিত বলে বিবেচনা করেন।

লোককাহিনী:


ঐতিহ্যবাহী লোককাহিনী অভিযোজিত হয়ে জনপ্রিয় সংস্কৃতির একটি উৎসে পরিণত হয়।[26] মূলধারার সংস্কৃতির প্রাথমিক স্তর আজ পর্যন্ত এমন একটি রূপে টিকে আছে যা গণ উৎপাদিত জনপ্রিয় সংস্কৃতির থেকে আলাদা, গণ মাধ্যমে প্রচারিত না হয়ে বরং লোকের মুখে মুখে প্রচারিত হয়, উদাহরণ স্বরূপ কৌতুক হিসেবে প্রচারিত হয়। ১৯৯০ সাল থেকে ইন্টারনেটের বিস্তৃত ব্যবহার গণমাধ্যম এবং মুখে মুখে প্রচারের পার্থক্য ঝাপসা হয়ে গেছে।
যদিও জনপ্রিয় সংস্কৃতির লোককাহিনীভিত্তিক উপাদান প্রচন্ডভাবে বাণিজ্যিক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত, লোকেদের নিজস্ব রুচি আছে আর প্রতিবার যে সাংস্কৃতিক এবং উপসাংস্কৃতিক বিষয় বা বস্তু বিক্রি হবে তা তারা কিনবে না। তারপরেও, বাণিজ্যিক সংস্কৃতির (commercial culture) দ্রব্যগুলো সম্পর্কে বিশ্বাস ও মতামত মুখে মুখে ছড়িয়েছে, এবং লোককাহিনী যেভাবে ক্রমে ক্রমে গঠিত হয়েছে সেই একই ভাবে এবং একই প্রক্রিয়ায় বাণিজ্যিক সংস্কৃতি গঠিত হয়েছে।
ব্যবহার


অনেক মানুষ বলেন সমাজের উঁচু শ্রেণীরা লোকেরা এবং অভিজাতরা (যারা গণমাধ্যম এবং জনপ্রিয় সংস্কৃতির নির্গম দ্বার নিয়ন্ত্রণ করেন) সমাজে তাদের চেয়ে অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণের জন্য জনপ্রিয় সংস্কৃতিকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। এ কথাও বলা হয়ে থাকে যে জনপ্রিয় সংস্কৃতি “সাধারণ মানুষদের” মনকে লঘু করে তোলেন, তাদেরকে আরো নিষ্ক্রিয় এবং সহজে নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে দেন, যদিও জনপ্রিয় সংস্কৃতি প্রাধান্য বিস্তারকারী সংস্কৃতি ও উপসংস্কৃতির (dominant subcultures) বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

উৎসসমূহ:

1.চলচ্চিত্র
2.টেলিভিশন অনুষ্ঠানসূচী
3.জনপ্রিয় সঙ্গীত
4.খেলাধুলা
5.পৌরসভা
6.বই
7.বেতার
8.ভিডিও গেম
9.ইন্টারনেট
10. চলচ্চিত্র
11. চলচ্চিত্র একটি বিশাল মাত্রার জনপ্রিয় সংস্কৃতি।

টেলিভিশন অনুষ্ঠানসূচী:


সম্প্রচার উদ্দেশ্যে অডিওভিজ্যুায়াল আধেয় এর একটি অংশই হচ্ছে টেলিভিশন অনুষ্ঠানসূচী। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচী কল্পিত(হাস্যরসাত্মক নাটক এবং নাটক) বা তথ্য ভিত্তিক (ডকুমেন্টারি, সংবাদ এবং আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান) হতে পারে। এগুলো সাময়িক (স্থানীয় সংবাদ পরিবেশন বা টেলিভিশনের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্র হতে পারে), অথবা ঐতিহাসিক (কল্পিত এবং তথ্য ভিত্তিক সিরিজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। এগুলো সিচুয়েশন কমেডি (situation comedy) এবং গেম শো’র মতো প্রাথমিকভাবে নির্দেশনামূলক বা শিক্ষামূলক হতে পারে।

সঙ্গীত:


জনপ্রিয় সঙ্গীত হচ্ছে এক ধরনের সঙ্গীত যার বিশাল আবেদন আছে সঙ্গীত শিল্পের (music industry) মাধ্যমে বিশাল শ্রোতাদের কাছে যা সাধারণভাবে পৌঁছানো হয়ে থাকে। সঙ্গীত বিষয়ে কোন জ্ঞান ছাড়াই এই সঙ্গীত পরিবেশন এবং উপভোগ করা যায়।[30] উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ( art music) এবং ঐতিহ্যবাহী বা “লোক” সঙ্গীতের (traditional or “folk” music) বিপরীতে এর অবস্থান।রেকর্ডিং শিল্পের (recording industry) শুরু থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত লিখিত সঙ্গীত ( written music) হিসেবে পরিবেশিত হতো। ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীতের রূপ যেমন: প্রাথমিক ব্লুজ (blues) সঙ্গীত বা প্রার্থনা সঙ্গীত (hymns) মুখে মুখে, ছোট এবং স্থানীয় দর্শকদের মধ্যে একজন থেকে আরেকজনের কাছে প্রচারিত হতো।

খেলাধুলা:


সকল ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাসহ [34] শারীরিক কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে বা সুসংঘঠিতভাবে যাতে অংশগ্রহণ করে শারীরিক সক্ষমতা এবং দক্ষতা বজায় রাখা হয় বা উন্নত করা হয় সেইসাথে অংশগ্রহণকারীরা তা উপভোগ করে আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে যা দর্শকদের বিনোদন দেয়।

বাণিজ্যিক ব্র্যান্ডিং:


নির্দিষ্ট কোন পণ্য বা সেবার বদলে একটি বাণিজ্যিক সত্বের বাণিজ্যিক নাম (brand name) অনুশীলন এবং প্রচারকে বাণিজ্যিক পণ্যচিহ্ন (Corporate branding) বলা হয়।[36]

ব্যক্তিগত পণ্যচিহ্ন:


ব্যক্তিগত পণ্যচিহ্নের মধ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে পেশাগতদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে ব্র্যান্ড এবং বিভিন্ন বিষয়কে পদোন্নতি করা, পেশাগত ব্যক্তি, ব্র্যান্ড ও এর দর্শকদের মধ্যে একটি ভাবমূর্তি তৈরি করা।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading