অথবা, বাংলা কথাসাহিত্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো।
ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদানঃ-
বাংলা কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিক । তিনি রাঢ় বঙ্গের প্রকৃতি , মানুষ ও সংস্কৃতির রূপকার । রাঢ় অঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত , সাধারণ মানুষের জীবনের রূপকে তিনি অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন । তাঁর লেখায় কাহার , বেদে প্রভৃতি আদি জনজীবনের ছবি লক্ষ করা যায় । এই সমস্ত সম্প্রদায়ের সংস্কার , বিশ্বাস , খাদ্যাভ্যাস , অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান প্রভৃতি তিনি জীবন্তভাবে তুলে ধরেছেন ।
তাঁর রচিত উপন্যাস গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল — ‘ধাত্রীদেবতা'(১৯৩৯) , ‘কালিন্দী'(১৯৪০) , ‘গণদেবতা'(১৯৪২) , ‘পঞ্চগ্রাম'(১৯৪৩) , ‘নীলকন্ঠ'(১৯৪৩) , ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা'(১৯৪৭) , ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী'(১৯৫২) , ‘জনপদ’ , ‘রাধা’ , ‘আরোগ্য নিকেতন'(১৯৫৩) প্রভৃতি ।
তারাশঙ্করের উপন্যাস এক অস্থির সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে । জমিদারতন্ত্র ক্রমশ ভেঙে পড়ছে , পুরোনো মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখা দিচ্ছে আর তার জায়গা নিচ্ছে নতুন আদর্শ , নতুন সমাজবিন্যাস । তারাশঙ্করের ‘ধাত্রীদেবতা’ , ‘কালিন্দী’ , ‘গণদেবতা’ , ‘পঞ্গ্রাম’-এ বারবার নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে এই রূপান্তরের ছবি ।
তারাশঙ্করের উপন্যাসের বিশেষত্ব তার আঞ্চলিকতায় । রাঢ় অঞ্চলের ভূগোল এবং তার জীবনধারা শিকড়শুদ্ধ উঠে এসেছে তারাশঙ্করের রচনায় । ‘কবি’ , ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ , ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ প্রভৃতি উপন্যাসে বেদে , কাহার ও অন্যান্য পতিত মানুষদের দৈনন্দিন জীবন , বিশ্বাস সংস্কার ও জীবনসংগ্রাম রূপ পেয়েছে ।
তারাশঙ্করের উপন্যাসগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ রচনা ‘আরোগ্য নিকেতন’ । জীবন ও মৃত্যুর একই সঙ্গে অবস্থান এবং মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শকে অনুভব করার অভিজ্ঞতা এই উপন্যাসে যেভাবে চিত্রিত হয়েছে তা বাংলা সাহিত্যে অভূতপূর্ব । বিশিষ্ট অঞ্চলের জীবন আর মানুষের চরিত্র চিত্রণে তাঁর অসাধারণ দক্ষতার জন্য তাঁকে আঞ্চলিক ঔপন্যাসিকও বলা হয় ।