“আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশের অন্তর্মানসের যে পরিচয় পাওয়া যায় তার স্বরূপ উদ্ঘাটিত করো। 

কবিতার মূলভাব :

বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি হাজার হাজার মানুষের মন ভরে দেয়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য যে কোন দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে আলাদা। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দুই পাশে শস্যক্ষেত্র, বাতাসে পাকা ধানের গন্ধ, শীতের কুয়াশা, শিমুলের ডালে বসে লক্ষ্মীপেঞ্চা, উঠোনের ঘাসে ধান ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিশুরা, কিশোররা নদীর কর্দমাক্ত পালের মধ্যে সাঁতার কাটছে প্রকৃতি এগুলোই বাংলার মানুষের মন ভরিয়ে দেয়।

কবি জীবনানন্দ দাশ তার প্রিয় জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করতে পারেন না। প্রিয় মাতৃভূমির সবুজ প্রকৃতি সব সময় কবির মনকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তাই কবি তাঁর প্রিয় ধনসিন্দ্রীর তীরে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন মৃত্যুর পরেও। কবির কাছে বাংলাদেশ সব দেশের সেরা। তাই কবি বাংলাদেশে ফিরে আসার আশা প্রকাশ করেছেন।কবি জীবনানন্দ দাশ তার জন্মভূমি বাংলাদেশকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। এই কারণে, তার স্বদেশের সবকিছু তার কাছে আশ্চর্যজনকভাবে সুন্দর হয়ে উঠেছে। তিনি তাঁর মৃত্যুর পরও বিভিন্ন ছদ্মবেশে বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি তাঁর জন্মভূমিকে ভালোবাসতেন। কখনও সে মূর্তির ছদ্মবেশে ফিরে আসতে চায়, কখনও সকালে কাকের মতো।

যে কোনো মূল্যে বাংলার মাটিতে ফিরতে হবে, এটাই কবির ইচ্ছা। কারণ, বাংলার সৌন্দর্য কবিকে যতটা মুগ্ধ করেছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সৌন্দর্য তা করতে পারেনি। উদ্দীপকের মামুনের ক্ষেত্রেও একই কাজ হয়েছে। তাই তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। তাই আমরা বলতে পারি, একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক তার দেশকে ভুলতে পারে না।

আবার আসিব ফিরে’ কবিতাটি কবির ‘রূপসী বাংলা’ কাব্য থেকে নেয়া হয়েছে।

কবি কবিতায় ফিরে আসার যে কথা টি বলেছে এখানে তিনি তার জন্মভূমি বা তার দেশের কথা উল্লেখ করেছেন ।

কবি এ কবিতায় দেখিয়েছেন যে, তিনি নিজের দেশকে খুবই ভালোবাসেন। প্রিয় জন্মভূমির অত্যমত তুচ্ছ জিনিসগুলো তাঁর দৃষ্টিতে সুন্দর হয়ে ধরা পড়েছে। কবি মনে করেন, যখন তাঁর মৃত্যু হবে তখন দেশের সঙ্গে তাঁর মমতার বাঁধন শেষ হবে না। তিনি বাংলার নদী, মাঠ, ফসলের খেতকে ভালোবেসে শঙ্খচিল বা শালিকের বেশে এদেশে ফিরে আসবেন। আবার কখনও বা ভোরের কাক হয়ে কুয়াশায় মিশে যাবেন। এমনও হতে পারে, তিনি হাঁস হয়ে সারাদিন কলমির গন্ধে ভরা বিলের পানিতে ভেসে বেড়াবেন। এমনকি দিনের শেষে যে সাদা বকের দল মেঘের কোল ঘেঁষে নীড়ে ফিরে আসে তাদের মাঝেও কবিকে খুঁজে পাওয়া যাবে। এভাবে তিনি বাংলাদেশের রূপময় প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাবেন।

কবি কেন ফিরে আসতে চেয়ে ছিলেন ?

আবার আসিব  ফিরে কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতিতে ফিরে আসতে চেয়েছেন।তিনি যে কারণে ফিরে আসতে চেয়েছেন তা উল্লেখ্য করা হলো -কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মাটি, নদী, প্রকৃতি ও মানুষকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। তাই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী কবি আবার এই বাংলায় ফিরে আসতে চান। তিনি ধান সিড়ি নদীর তীরে কোথাও জন্ম নিতে চান! হয়তো তিনি মনুষ্যরূপে জনু নাও নিতে পারেন, তবে শঙ্খচিল, শালিক বা ভোরের কাক হয়েও জন্ম নিতে পারেন। কার্তিক মাসে ফসল ঘরে তোলার পর বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্ন উৎসব। মেতে উঠা এই নবান্ন উৎসবে কুয়াশায় কবি ভেসে আসবেন একদিন কাঠাল ছায়ায়। হয়তো বা হাঁস হবেন। সারাদিন তার কেটে যাবে কলমির গন্ধ ভরা বাংলার খাল-বিলের জলের উপর ভেসে ভেসে। তিনি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেতকে গভীরভাবে ভালোবাসেন। তাই কবি হয়তো বাংলার মাঠে, ঘাটে, ক্ষেতে, জলাঙ্গীর ডাঙায় কোন প্রাণীর মধ্যে মিশে থাকতে পারেন । হয়তো তিনি হতে পারেন শিমুল গাছের ডালে বসে ডাকতে থাকা এক শ’স্পেশ্চাও। আবার তাকে দেখা যেতে পারে উঠোনের ঘাসে ধান ছড়াতে থাকা এক শিশুর মধ্যে কিংবা বুপসা নদীর ঘোলা জলে সাদা ছেড়া পাল তুলে ডিঙা বাইতে থাকা কোন এক কিশোরের মধ্যে। তিনি ফিরে আসতে পারেন রাঙা মেঘের ভেতর দিয়ে সন্ধ্যার আকাশে নীড়ে ফিরে আসা কোন সাদা বকের প্রতি ছিবির মধ্যে। পরনে এদের সবার ভিড়ে কবি নিজেকে ফিরে পেতে চান। কবির এ বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে কবিতায় ফুটে উঠেছে।

কবির অনুভূতি :-

আবার আসিব ফিরে কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার বুকে জন্ম নিয়া বাংলার অপরুপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে  বাংলার প্রতিটি প্রাকৃতিক বিষয়ের সৌন্দর্যের শোভা উপভোগ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন বেশে বাংলার বুকে  বার বার ফিরে আসতে চান। বাংলার বুকে অমৃতের মত প্রবাহমান অপরুপ স্রোতস্বিনী নদীর শোভা দেখতে, মনের আনন্দে নদীর জলে খেলতে ধানসিঁড়ির মত নদীর তীরে ফিরে আসতে চেয়েছেন। কখনো শালিক, কখনো শঙখচিল বেশে কখনোবা সুদর্শন পোকার মত উড়তে, কখনো শীতের চাদর মুড়ি দিয়া, কখনো বা কাঠাল বনে, মাঠে ঘাটেও ফিরে এসে বিচরন করতে চান। কবি বাংলা মায়ের কোল ছেড়ে কোথাও যে যেতে চান না, মানুষ রুপে না পারলেও পরের জনমে অন্য রুপের বেশেও শুধু বাংলার বুকে আসার বাসনা পোষন করেছেন। কবি বাংলার অপরুপ প্রাকৃতিক  শোভা ও স্বদেশ মাতৃভূমির সৌন্দর্যে বিমোহিত ও গভীর মমত্ববোধ যেন নাড়ির বাধন ধরে রাখতে বার বার যেকোন রুপে যেকোন ভাবে বাংলা মায়ের কোলে ফিরে এসে নিজ হৃদয়কে স্বার্থক করার ইচ্ছাপোষন করেছেন এই ছন্দময় কবিতার মাধ্যমে।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading