সামাজিকীকরণ কি?
সামাজিকীকরণ এমন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানব শিশু সমাজের একজন কাঙ্ক্ষিত পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানী কিংসলে ডেভিসের মতে, “সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি পুরোপুরি সামাজিক মানুষে পরিণত হয়।” সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া একটি জীবনব্যাপী এবং বহুমুখী প্রক্রিয়া।
সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবারের ভূমিকা-
পরিবার সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুর জীবনের ভালো ও খারাপ অভ্যাস পরিবারের সামাজিকীকরণের ফল। পরিবারের মধ্যেই শিশুর সামাজিক নীতিবোধ, নাগরিক চেতনা, সহযোগিতা, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, আত্মত্যাগ ও ভালোবাসা জন্মে। পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, পিতা-মাতার বিচ্ছেদ, ভিন্ন গৃহে বসবাস, পিতা কিংবা মাতা অথবা পিতা-মাতা উভয়ের মৃত্যু শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। এসব পরিবারে শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণ হয় না। এসব শিশুর আচরণে একাকিত্ববোধ, প্রতিহিংসা, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব, লজ্জাহীনতা, ধূর্ততা প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। পরিবারে যাতে এসব সমস্যার সৃষ্টি না হয়, এ জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। তাই শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় দেখা যায়, পিতার অত্যধিক শাসন কিংবা মায়ের অধিক স্নেহ শিশুর সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত করছে। এ কারণে শিশুর আচরণ গঠনের প্রতি পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকার সমন্বয় করতে হবে। পরিবারের সব সদস্যের ভূমিকার মধ্যে সমন্বয় সাধনই শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এসব শিশুকে আত্মসচেতন, ব্যক্তিত্ববান হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
এতদিন পর্যন্ত শিশুর লালন-পালন পরিবারেরই প্রধান দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছেÑ যেগুলো শিশু লালন-পালনের দায়িত্ব যতœসহকারে বহন করে। তবে শহরেই এসব প্রতিষ্ঠান বেশি গড়ে উঠেছে। যেমনÑ চাকরিজীবী পিতা-মাতার সন্তানরা বেবি হোম, ডে-কেয়ার সেন্টার কিংবা অন্যভাবে লালন-পালন হচ্ছে। পরিবারের অনেক দায়িত্ব এখন বিভিন্ন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পালন করছে।