সাধারণ বিল কাকে বলে:
অর্থনৈতিক বিষয় ছাড়া যে-কোনো বিষয় সংক্রান্ত বিলকে বলা হয় ‘সাধারণ বিল’ বা Ordinary Bill | সাধারণ বিল সরকারি অথবা বেসরকারি যে-কোনো সদস্য উত্থাপন করতে পারেন এবং এই বিল সংসদের যে-কোনো কক্ষে উত্থাপন করা যায়।
সাধারণ বিল পাসের পদ্ধতি:
সংসদের যে-কোনো কক্ষে সাধারণ বিল উত্থাপন করা যায়। সাধারণ বিলকে আইনে পরিণত করতে হবে কতকপুজি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়।
[1] বিল উত্থাপন:
বিল উত্থাপনের জন্য উত্থাপক লিখিত নোটিশ দ্বারা বিল উত্থাপন করেন। সভার অনুমতি নিয়ে
বিলের শিরোনাম পাঠ করা হয়। বিলটির উত্থাপক মনে করলে এই সময় উত্থাপিত বিলটির উদ্দেশ্য, প্রকৃধি
এবং পুরুত্বের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করতে পারেন। সভার বেশিরভাগ সদস্য সমর্থন জানালে তা আলোচনার জর গৃহীত হবে। এইভাবে বিল উত্থাপনের প্রক্রিয়াকে বলা হয় বিলের প্রথম পাঠ। এরপর উত্থাপিত বিলটি সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হয়।
[2] বিলের মূলনীতি ও বৈশিষ্ট্য বিষয়ে আলোচনা:
বিলটির দ্বিতীয় পাঠ শুরু হয় বিল উত্থাপনের কিছুদিন পর। এই দ্বিতীয় পর্যায়ে বিলের মূলনীতি সম্পর্কে ও বিলটির বৈশিষ্ট্য বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই সময় উথাগর নিম্নে বর্ণিত যে-কোনো একটি প্রভাব উত্থাপন করতে পারেন-
a. ওই কক্ষ বিলটি বিবেচনা করুক,
b. জনমত জানার জন্য বিলটি গ্র্যারিত হোক,
c. বিলটিকে সংসদের উভয় কক্ষের যুক্ত কমিটিতে পাঠানো হোক,
d. সিলেক্ট কমিটির কাছে বিলটি পাঠানো হোক।
মন্ত্রীগণ সরকারি বিলের উত্থাপক হন বলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় পাঠের সময় বিলটি আলোচনার জব গ্রহণ করা হলে এর অন্তর্নিহিত নীতি নিয়েও আলোচনা চলে। তবে এই সময় বিলের ধারা বা উপধারা সম্পর্কে সার্বিকভাবে কোনো আলোচনা হয় না বা বিতর্ক চলে না। বিলটির অন্তর্নিহিত মূলনীতি গ্রহণ করা হলে এ দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়।
(3) বিলটির বিচারবিবেচনা:
সিলেক্ট কমিটির নিকট বিলটি পাঠানো হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি বিলটির খুঁটিন বিচারবিবেচনা করে দেখে। যদি বিলটির কোনো অংশ সংশোধন বা পরিবর্তণের প্রয়োজন হয় তাহলে সে সম্পর্কে কমিটি সুপারিশ করে। এরপর কমিটির সুপারিশ ও রিপোর্ট-সহ সংশ্লিষ্ট কক্ষের কাছে পাঠানো হয়। কমিটির পাঠানো রিপোর্টটি আলোচনার জন্য গ্রহণ করা হলে বিল পাসের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হয়।
(4) বিলের ধারা, উপধারা বিষয়ক বিতর্ক ও আলোচনা:
চতুর্থ পর্যায়ে কমিটির পাঠানো রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই পর্যায়ে বিলের ধারা, উপধারা প্রভৃতি নিয়ে বিতর্ক ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কোনো সদস্য যদি মনে করেন বিলটির ওপর সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করবেন, তাহলে তাঁকে এর জন্য সুযোগ দেওয়া হয়। তবে সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করতে হলে সে ব্যাপারে একদিন আগে নোটিশ দিতে হয়। বিলটি সম্পর্কে বিশেষভাবে আলেইনার পর ভোট নেওয়া হয়। এইভাবে বিলটির চতুর্থ পর্যায়ের ও দ্বিতীয় পাঠের (Second Reading) কাজ শেষ হয়।
[5] বিলগ্রহণ অথবা বাতিলের প্রস্তাব:
এই পর্যায়ে বিলের তৃতীয় পাঠের কাজ শুরু হয়। এই সময় সংশ্লিষ্ট কক্ষে
বিষটির উত্থাপক বিলটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করেন। এই পর্যায়ে বিলের কোনো ধারা অথবা উপধারার ওপর কোনোরূপ বিতর্ক লেবে না অথবা কোনো সংশোধনী প্রভাবও আনা যাবে না। সামগ্রিকভাবে বিলটিকে গ্রহণ করা হবে না বর্জন করা হবে তার প্রস্তাব করা হয় এই পর্যায়ে। বিলটির ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন থাকলে বিলটি গৃহীত হবে, সমর্থন না থাকলে তা বাতিল হয়ে যাবে। তবে বিলটি যদি রাজ্যসভায় গৃহীত হয় তাহলে রাজ্যসভার সভাপতিকে একটি সার্টিফিকেট দিতে হয়, আবার যদি বিলটি লোকসভা গ্রহণ করে তাহলে স্পিকারকে সে সম্পর্কে একটি সার্টিফিকেট দিতে হয়।
[6] বিলটি সম্পর্কে সিদ্ধান্তগ্রহণ:
এই পর্যায়ে সংসদের যে কক্ষে বিলটি গৃহীত হয়, গৃহীত বিলটি অপরককে পাঠানো হয়। য়। অপরকক বিলটি সম্পর্কে চার ধরনের সিদ্ধান্ডের একটি গ্রহণ করে। যেমন-
(a) তারা বিলটিকে গ্রহণ করতে পারে,
[b] বিলটি গ্রহণ না করে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে,
(c) বিলটিকে সংশোধনের: কথা বলতে পারে,
[d] প্রয়োজন হলে বিলটিকে আটকে রাখতে পারে। অপরকক্ষ যদি বিলটি গ্রহণ করে তাহলে গৃহীত বিলটিকে পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁর সম্মতির জন্য। অপরকক্ষ বিলটি গ্রহণ না করে যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে রাষ্ট্রপতি একটি যৌথ অধিবেশন ডেকে বিলটি সম্পর্কে মতভেদ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করেন। অপর কক্ষ বিলটিকে সংশোধনের কথা বললে এবং অন্যকক্ষ দ্বারা ওই প্রস্তাব গৃহীত হলে তা সংশোধিত আকারেই প্রকাশ করা হবে। প্রস্তাব উত্থাপক কক্ষটি যদি সংশোধনী প্রস্তাবটি গ্রহণ না করে তাহলে উভয়কক্ষের মধ্যে যে মতভেদ উপস্থিত হয়, তার নিষ্পত্তির জন্য রাষ্ট্রপতি একটি যৌথ অধিবেশন ডাকেন। আবার অপরকক্ষ বিলটি আটকে রাখলেও যে বিরোধ দেখা দেয় সেই বিরোধের নিষ্পত্তি করার জন্য রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন আহবান করেন।
[7] বিলটিতে রাষ্ট্রপতির সম্মতি:
সংসদের উভয়কক্ষ অর্থাৎ লোকসভা ও রাজ্যসভা উভয় কক্ষেই যদি বিলটি গৃহীত হয় তাহলে সেটিকে পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতির কাছে। রাষ্ট্রপতির সম্মতি পেলে বিলটি আইনে পরিণত হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতি না পেলে তা আইনে পরিণত হতে পারে না। রাষ্ট্রপতি যদি সংসদে বিলটির পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠান এবং সংসদ পুনর্বিবেচনা করে তা পুনরায় রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠিয়ে দেয় তাহলে তাতে সম্মতি জানাতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য।