সংস্কৃতির উপাদান: মানুষ একটি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক জীব। সংস্কৃতি মানবসমাজে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সংস্কৃতির বিভিন্ন সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্যসমূহ থেকেই উপলব্ধি করা যায়। অতএব সংস্কৃতির উপাদান সম্পর্কে আলোচনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে থাকে। নিম্নে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
• মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যবহৃত বস্তু: পৃথিবীর সকল বস্তুই সংস্কৃতির উপাদান নয়। কেবলমাত্র যে-সমস্ত দ্রব্য মানুষের স্বাভাবিক প্রয়োজন মেটাতে পারে সেই সমস্ত বস্তুই সংস্কৃতির উপাদান। মানুষ সর্বদাই তার বহুমুখী চাহিদা পূরণের তাগিদে বিভিন্ন ব্যবস্থা বা উপায় অবলম্বন করে থাকে। আর এইসব উপায় বা
ব্যবস্থা সংস্কৃতির অঙ্গীভূত উপাদান হিসাবে পরিগণিত হয়। আবার বস্তুর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতও সংস্কৃতির উপাদান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়-গভীর অরণ্যের একটি গাছ মানুষের সংস্কৃতির উপাদান নয় কিন্তু সেই গাছের দ্বারা তৈরি আসবাবপত্র সংস্কৃতির উপাদান।
• উপাদানের শ্রেণিবিভাগ: মানবসমাজের এই সংস্কৃতি দু’টি ভাগে বিভক্ত। যথা- (ক) বস্তুগত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদান (Material element)। (খ) অবস্তুগত বা মানসিক উপাদান (Non-material or mental element)
(ক) বস্তুগত বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদান মানুষ তার বিচারবুদ্ধি, জ্ঞান এবং কর্মকুশলতাকে খাটিয়ে বিবিধ বস্তু উৎপাদন করে। এসব বস্তুর মধ্যে আবার কতকগুলোর উপর পৃথক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ মূল্যমান বা আদর্শ আরোপিত হয়। এধরনের আদর্শযুক্ত বা মূল্যমানযুক্ত বাহাবস্তুকে সংস্কৃতির দ্যোতক বলে অভিহিত করা। হয়। যেমন-ঘরবাড়ি, স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদ, অফিস-আদালত ইত্যাদি সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদানের অন্তর্গত।
(খ) অবস্তুগত বা মানসিক উপাদান: মানবসংস্কৃতির যেসব উপাদান কেবলমাত্র উপলব্ধি ও অনুধাবন করা যায়, তাকে সংস্কৃতির অবস্তুগত বা মানসিক উপাদান বলা হয়। এইসব উপাদান সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গের আদর্শ, বিশ্বাস, ধ্যানধারণা, আনন্দ, বেদনা, মূল্যবোধ ইত্যাদি মানসিক অনুভূতিকে ইঙ্গিত করে থাকে।