‘সম্মুখেতে আসি…… তৃণ শূন্য করি’-কে কার সম্মুখে দাঁড়ালো? তার এই মানসিক পরিবর্তনের কারণ কি?

সম্মুখেতে আসি…… তৃণ শূন্য করি”—এই পঙক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীরপুরুষ” কবিতার একটি অংশ। এখানে কবি একটি চরিত্রের মানসিক পরিবর্তন এবং তার অন্তর্গত সংকল্প ও লক্ষ্যকে তুলে ধরেছেন।

সম্মুখেতে আসি…… তৃণ শূন্য করি” পঙক্তির ব্যাখ্যা:

১. পঙক্তির বিশ্লেষণ:

এই পঙক্তিতে কবি একটি ঐতিহাসিক বা কাল্পনিক বীরপুরুষের কথা বলছেন, যে তার সামনে এসে দাঁড়াতে চায় এবং তার শক্তি ও ক্ষমতা দিয়ে তৃণ (ঘাস) শূন্য করে দেবে। এখানে ‘সম্মুখেতে আসি’ মানে হল সামনে এসে দাঁড়ানো এবং ‘তৃণ শূন্য করি’ মানে হল সমস্ত বাধা-বিপত্তি দূর করে দেওয়া।

২. সম্মুখে দাঁড়ানো:

এই পঙক্তির মাধ্যমে চরিত্রটি এক প্রতীকী বা বাস্তব সম্মুখের সামনে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। এখানে সম্মুখ বলতে বোঝানো হচ্ছে সামনে থাকা সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা অথবা যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছা। চরিত্রটি সম্মুখের সব বাধা দূর করে একটি নতুন পথের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

৩. তৃণ শূন্য করা:

‘তৃণ শূন্য করা’ একটি প্রতীকী ভাষা। এখানে তৃণ বলতে বোঝানো হচ্ছে ছোটখাটো বাধা বা প্রতিবন্ধকতাগুলি। চরিত্রটি তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সমস্ত তুচ্ছ বাধা বা ছোটো ছোটো সমস্যা দূর করতে চায়। এটি একটি উচ্ছ্বাসপূর্ণ এবং অদম্য মনোভাবের প্রকাশ।

মানসিক পরিবর্তনের কারণ:

১. চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সংকল্প:

চরিত্রের মানসিক পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো তার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সংকল্প। যখন একজন মানুষ নিজেকে সম্মুখে এসে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত করে, তখন তার মানসিকতা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার মধ্যে এক ধরনের নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাস জন্ম নেয় যা তাকে সকল বাধা অতিক্রম করতে সহায়তা করে।

২. প্রত্যাশা ও সংকল্পের প্রকাশ:

চরিত্রটির মানসিক পরিবর্তনের আরেকটি কারণ হলো তার প্রত্যাশা ও সংকল্পের প্রকাশ। যখন কেউ একটি বড় লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য স্থির করে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমস্ত বাধা দূর করার সংকল্প নেয়, তখন তার মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই পঙক্তির মাধ্যমে চরিত্রটি একটি বড় কাজ করার প্রস্তুতির প্রকাশ ঘটাচ্ছে।

৩. অভ্যন্তরীণ শক্তি ও আত্মবিশ্বাস:

চরিত্রটির মানসিক পরিবর্তনের আরেকটি কারণ হলো তার অভ্যন্তরীণ শক্তি এবং আত্মবিশ্বাস। ‘তৃণ শূন্য করা’ শব্দগুচ্ছটি চরিত্রটির নিজের ক্ষমতা ও শক্তির প্রতি আত্মবিশ্বাসের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি তার আত্মবিশ্বাস এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির এক নতুন উপলব্ধি প্রকাশ করে।

৪. কর্মের প্রতি আগ্রহ:

এই মানসিক পরিবর্তনের একটি কারণ হলো চরিত্রটির কর্মের প্রতি আগ্রহ। চরিত্রটি তার সামনে আসা সমস্ত বাধা কাটিয়ে তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রস্তুত। এই আগ্রহ এবং উদ্যম তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় এবং তাকে কর্মের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

উপসংহার:

সম্মুখেতে আসি…… তৃণ শূন্য করি” পঙক্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যিক ভাষায় একটি শক্তিশালী এবং সংকল্পবদ্ধ চরিত্রের মানসিক পরিবর্তন এবং তার উদ্দেশ্যের প্রতি অটুট দৃঢ়তার প্রতীক। চরিত্রটির সামনে আসার ইচ্ছা এবং সমস্ত বাধা দূর করার সংকল্প তার মানসিক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কাজ করে, যা তার অভ্যন্তরীণ শক্তি, আত্মবিশ্বাস, এবং কর্মের প্রতি আগ্রহের প্রতিফলন ঘটায়।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading