“সকলই নিয়মের ফল, সাহিত্যও নিয়মের ফল’ লেখকের এরূপ বক্তব্যের কারণ-
“সকলই নিয়মের ফল, সাহিত্যও নিয়মের ফল” এই বক্তব্যের মাধ্যমে লেখক একটি মৌলিক তত্ত্ব তুলে ধরতে চেয়েছেন, যা সাহিত্য এবং শিল্পের সৃষ্টি এবং বিবর্তনের মধ্যে নিয়ম ও কাঠামোর গুরুত্বকে নির্দেশ করে। এই বক্তব্যের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
১. শিল্প ও সাহিত্য নির্মাণের কাঠামো:
সাহিত্য এবং অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম এবং কাঠামো কাজ করে। ভাষার গঠন, সাহিত্যিক শৈলী, এবং কাহিনীর কাঠামো নির্দিষ্ট নিয়ম ও কাঠামোর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। সাহিত্যিক কাজের মধ্যে বিষয়বস্তু, চরিত্র নির্মাণ, এবং প্লট গঠন—এগুলি সবই নির্দিষ্ট নিয়ম ও কাঠামো অনুসরণ করে। যেমন একটি কবিতার ছন্দ, চরণের সংখ্যা, এবং রূপ-রেখা প্রভৃতি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টি হয়।
২. সাহিত্যিক শৈলীর উন্নতি:
যেকোনো সাহিত্যিক শৈলীর উন্নতি ও বিকাশও নিয়মের ফল। সাহিত্যে নতুন শৈলী ও ভাবনা সবসময় পূর্ববর্তী নিয়ম ও কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে চলে। নতুন ধারণা এবং শৈলী পূর্ববর্তী সাহিত্যিক কাজের নিয়ম ও পরম্পরার মধ্যে অবস্থান করে এবং সেখান থেকে নতুন দিশা নেয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি নতুন সাহিত্যিক আন্দোলন যেমন রোমান্টিসিজম বা রিয়েলিজম পূর্ববর্তী শৈলী ও নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে আবির্ভূত হয়।
৩. সৃজনশীলতার নিয়ম:
সৃজনশীলতা এবং নতুনত্ব সাধারণত একটি নির্দিষ্ট নিয়মের বাইরে গিয়ে সৃষ্টি হয়, কিন্তু সেই নিয়মের প্রেক্ষাপটে। সাহিত্যিকরা সাধারণত নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে নতুন ধারার সৃষ্টি করেন। এই নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধতা সৃজনশীলতার দিক থেকে একটি চ্যালেঞ্জের মতো কাজ করে, যা সাহিত্যিকদের নতুন সমাধান ও নতুন শৈলীর খোঁজে উৎসাহিত করে।
৪. সাহিত্যের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়ম:
সাহিত্য সমাজের একটি প্রতিচ্ছবি, এবং সমাজের নিজস্ব নিয়ম ও কাঠামো সাহিত্যেও প্রতিফলিত হয়। সামাজিক নিয়ম, সাংস্কৃতিক পরম্পরা, এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্যিকদের কাজ সেই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিয়মের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয় এবং সাহিত্যিক নির্মাণের সময় এই নিয়মের প্রতিফলন ঘটে।
৫. বৈজ্ঞানিক ও নৈমিত্তিক নিয়ম:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সাহিত্যের নিয়মে প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, প্রযুক্তিগত উন্নতি সাহিত্যকে নতুন বিষয়বস্তু ও শৈলী প্রদান করে। এই বৈজ্ঞানিক নিয়ম এবং প্রযুক্তির প্রভাব সাহিত্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিব্যক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।
উপসংহার:
“সকলই নিয়মের ফল, সাহিত্যও নিয়মের ফল” বক্তব্যের মাধ্যমে লেখক নির্দেশ করতে চেয়েছেন যে সাহিত্য নির্মাণ ও বিকাশের প্রক্রিয়ায় নিয়ম ও কাঠামোর গুরুত্ব অপরিসীম। সাহিত্যও সেই নিয়মের মধ্যে থেকেই নতুন সৃজনশীলতা এবং ধারার সৃষ্টি করে, যা শিল্পের একটি অপরিহার্য অংশ। এই নিয়ম ও কাঠামো সাহিত্যিক কাজের বুনিয়াদ তৈরি করে এবং সাহিত্যিকদের নতুন চিন্তা ও ভাবনার জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করে।