শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় জার্মানির প্রাথমিক পশ্চাদপদতা সম্পর্কে একটি নোট লেখ। Write a note on the initial backwardness of Germany in the process of industrialization.

জার্মানি (তৎকালীন প্রুশিয়া) ১৯শ শতকের শুরুতে শিল্পায়নের প্রক্রিয়ায় কিছুটা পিছিয়ে ছিল, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, এই পিছিয়ে থাকা অবস্থার পরও, জার্মানি পরে দ্রুত শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয় এবং ইউরোপের শিল্পায়িত দেশগুলির মধ্যে একটি হয়ে ওঠে। জার্মানির শিল্পায়নের প্রাথমিক পিছিয়ে থাকার কিছু মূল কারণ নিচে উল্লেখ করা হল:

১. রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিতিশীলতা: ১৯শ শতকের প্রথমার্ধে জার্মানি রাজনৈতিকভাবে বহু ছোট ছোট রাজ্য ও রাজতন্ত্রে বিভক্ত ছিল। প্রুশিয়া, বাভারিয়া, স্যাক্সনি এবং অন্যান্য রাজ্যগুলি পৃথকভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। এই রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিতিশীলতা শিল্পায়নের জন্য একটি বড় বাধা সৃষ্টি করেছিল। একক বাজার এবং সমন্বিত শিল্প নীতি অভাব ছিল, যা শিল্পায়নের দ্রুত সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

২. অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের অভাব: বেশিরভাগ জার্মান রাজ্যগুলির মধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছিল সীমিত। পরিবহন অবকাঠামো যেমন রেলপথ ও সড়ক, প্রয়োজনীয় মান অনুযায়ী উন্নত ছিল না। এছাড়াও, শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন ও প্রযুক্তি সরবরাহের অভাব ছিল, যা শিল্পকারখানা স্থাপন ও পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করেছিল।

৩. শিল্প কারিগরী দক্ষতার অভাব: জার্মানি শিল্পায়নের শুরুতে কারিগরী দক্ষতার অভাব ছিল। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলির তুলনায়, জার্মানিতে প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম ছিল। এর ফলে, শিল্প উৎপাদন ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও দেশের পিছিয়ে থাকা অবস্থা ছিল।

৪. কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি: প্রথমদিকে জার্মানির অর্থনীতি ছিল কৃষিভিত্তিক এবং প্রধানত কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। শিল্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও নগরায়ন অপর্যাপ্ত ছিল। কৃষি ও শিল্পের মধ্যে একটি মসৃণ স্থানান্তর প্রক্রিয়া ছিল না, যা শিল্পায়নের গতি ধীর করে দিয়েছিল।

৫. সামরিক ও জাতীয় সংঘাত: প্রথম দিকে, জার্মানিতে সামরিক সংঘাত ও জাতীয় সংঘাত ছিল, যা দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তীতে, জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যগুলি যুদ্ধ ও সংঘাতের মধ্যে ছিল, যা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি বড় বাধা সৃষ্টি করেছিল।

উপসংহার: যদিও জার্মানি শিল্পায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা পিছিয়ে ছিল, তবে রাজনৈতিক ঐক্য ও সুষম পরিকল্পনার মাধ্যমে ধীরে ধীরে এটি শিল্পায়নের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সক্ষম হয়। ১৯শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রুশিয়া এবং অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে একীকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে জার্মানি একটি শক্তিশালী শিল্পজাত রাষ্ট্র হিসেবে উদিত হয়। এই পরিবর্তনগুলি পরবর্তী সময়ে জার্মানির অর্থনৈতিক ও শিল্প উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading