শরৎচন্দ্রের উপন্যাস-বৈশিষ্ট্য: বাংলা উপন্যাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (১৮৭৬-১৯৩৮ খ্রি.) অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
দেশপ্রেম এবং অবহেলিত জনগণের প্রতি অকৃত্রিম অনুরাগই তাঁকে সাহিত্যসাধনায় অনুপ্রাণিত করেছিল।
বাঙালির দুঃখ-দারিদ্র্য ও মর্মবেদনাকে তিনি মূর্ত করে তুলেছেন চোখের জলে, প্রেমের মাধুর্যে এবং জীবনদর্শনের গভীরতায়।
তাঁর উপন্যাসে একদিকে যেমন নিষ্ঠুর হৃদয়হীনতাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, ঠিক তেমনি কখনাে কখনাে তিনি সামাজিক মূঢ়তা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, দেশপ্রেমের নামে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়ে উঠেছেন।
পল্লিবাংলায় দারিদ্র ও কুসংস্কারের ফাঁসিকাঠে বলিপ্রদত্ত ঠি বাঙালিজীবনের ছবি আঁকাই শরৎ-উপন্যাসের সবথেকে বড়াে বৈশিষ্ট্য।
নারীমনের জটিলতা, তাদের সংস্কার ও প্রেমের দ্বন্দ্ব, যৌথ পরিবারের দৈনন্দিন জীবনচিত্র এবং সেখানে নারীদের স্থান ইত্যাদি নানা চোখের-জলে-ভেজা বাস্তবসম্মত কাহিনি রূপায়ণে বাংলা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র নিঃসন্দেহে এক অদ্বিতীয় কথাশিল্পী।
গল্প বলার সহজ-সরল অথচ চিত্তাকর্ষক রীতির জন্য তিনি প্রথম থেকেই অভিজাত পরিবার থেকে শুরু করে গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত বাঙালি পরিবারে সমাদর লাভ করেছেন।
পরিশেষে বলা যায়, অভিজ্ঞতার গভীর ও বিপুল বিস্তারে, প্রখর পর্যবেক্ষণ-শক্তিতে, সংস্কারমুক্ত মন ও মননে, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণে, আবেগের উচ্ছ্বাসে এবং সংবেদনশীলতায় ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা উপন্যাসের জগতে অমর হয়ে আছেন।