রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর | Point out the differences between State and Society.

Table of Contents

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য-

রাষ্ট্র (State) এবং সমাজ (Society) দুটি আলাদা ধারণা হলেও, তারা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। রাষ্ট্র একটি সংগঠিত রাজনৈতিক সত্তা যা সরকার, আইন, এবং শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়, এবং সমাজ হলো মানুষের একটি সম্প্রদায় যা সামাজিক সম্পর্ক, মানদণ্ড, এবং সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান দ্বারা গঠিত। নিচে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে প্রধান পার্থক্যগুলি উল্লেখ করা হলো:

১. রাষ্ট্র ও সমাজের সংজ্ঞা

  • রাষ্ট্র (State): রাষ্ট্র হলো একটি সংজ্ঞায়িত ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগণের ওপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব এবং আইন প্রণয়নকারী একটি রাজনৈতিক সত্তা। রাষ্ট্রের মূল উপাদানগুলি হলো জনসংখ্যা, ভৌগোলিক সীমান্ত, সরকার, এবং সার্বভৌমত্ব।
  • সমাজ (Society): সমাজ হলো ব্যক্তিদের একটি সংগঠিত গোষ্ঠী যা সামাজিক সম্পর্ক, আদানপ্রদান, এবং সাধারণ সংস্কৃতি, ভাষা, এবং মানদণ্ডের মাধ্যমে একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। সমাজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান যেমন পরিবার, ধর্ম, শিক্ষা, এবং অর্থনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

২. রাষ্ট্র ও সমাজের সংজ্ঞা উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম

  • রাষ্ট্র: রাষ্ট্রের প্রধান উদ্দেশ্য হলো শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করা, আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা, এবং জনগণের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র শৃঙ্খলা রক্ষা, বিচার প্রদান, এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে।
  • সমাজ: সমাজের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা উন্নয়ন করা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মানদণ্ড প্রচার করা, এবং একটি সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করা। সমাজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।

৩. কাঠামো ও সংগঠন

  • রাষ্ট্র: রাষ্ট্র একটি সুশৃঙ্খল ও সংগঠিত কাঠামো যা সাধারণত একটি সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের সরকার নির্বাহী, আইনপ্রণয়ন, এবং বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রের কাঠামো সংবিধান বা মৌলিক আইন দ্বারা পরিচালিত হয়।
  • সমাজ: সমাজ সাধারণত আনুষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া একটি স্বতঃস্ফূর্ত ও অব্যবস্থিত সংগঠন। এটি সামাজিক সম্পর্ক, রীতি-নীতি, এবং মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। সমাজে বিভিন্ন স্তরের এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক গোষ্ঠী থাকে, যেমন পরিবার, বন্ধু, সম্প্রদায়, এবং পেশাদারী গোষ্ঠী।

৪. সার্বভৌমত্ব ও ক্ষমতা

  • রাষ্ট্র: রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, যা তার ভৌগোলিক সীমার মধ্যে সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বলে বিবেচিত হয়। রাষ্ট্রের আইন এবং নীতিমালা সকল নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে মানতে হয়।
  • সমাজ: সমাজ সার্বভৌমত্বের অধিকারী নয়, বরং এটি ব্যক্তিদের মধ্যে সামাজিক নিয়ম, রীতি-নীতি, এবং মানদণ্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সমাজের সদস্যরা স্বেচ্ছায় এই নিয়মগুলি মানতে পারে, তবে এগুলি বাধ্যতামূলক নয়।

৫. সৃষ্টি ও ইতিহাস

  • রাষ্ট্র: রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির অধীনে গঠিত হয়। রাষ্ট্রের গঠন সাধারণত যুদ্ধ, বিপ্লব, বা রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
  • সমাজ: সমাজ মানুষের সাথে প্রাকৃতিকভাবে বিকাশ লাভ করে। এটি মানুষের মিথস্ক্রিয়া এবং সামাজিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত হয় এবং এর সৃষ্টির কোন নির্দিষ্ট সময় নেই।

উপসংহার

রাষ্ট্র ও সমাজ দুটি ভিন্ন হলেও, তারা পরস্পরের পরিপূরক। রাষ্ট্র একটি সংগঠিত রাজনৈতিক সত্তা যা শাসন এবং আইন প্রয়োগ করে, এবং সমাজ হলো একটি সম্প্রদায় যা সামাজিক সম্পর্ক এবং সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে গঠিত। রাষ্ট্র ও সমাজ উভয়েরই লক্ষ্য হলো মানুষের কল্যাণ এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করা, তবে তাদের কাজ এবং দায়িত্ব পৃথক।

আরো পড়ুন-

আদর্শ স্থাপনকারী দৃষ্টিভঙ্গী | Normative Approach

রাষ্ট্রের প্রকৃতির নিরিখে মার্ক্সীয় তত্ত্বটির মূল্যায়ন কর।

সমাজতত্ত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কি কি

বিতরণকারী ন্যায়ের তত্ত্বটি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর

রাষ্ট্রের উদ্ভবে সামাজিক চুক্তি মতবাদটি সংক্ষেপে আলোচনা কর

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নে আচরণবাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর

জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দাও। জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা কর

স্বাধীনতার সংজ্ঞা দাও। স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলি আলোচনা কর। স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর |

সার্বভৌমিকতার একত্ববাদী তত্ত্বটি আলোচনা কর |

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও পরিধি সম্পর্কে আলোচনা কর |

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading