“ রস ” গল্পের নামকরণ সার্থকতা-
যেকোনো সৃষ্টিরমূলক রচনার একটা সার্থক নাম দিতে হয় । সেই নাম ঘটনা ভিত্তিক বা চরিত্র নির্ভর ব্যঞ্জনাধর্মী হতে পারে । ছোট গল্পের ক্ষেত্রে ব্যঞ্জনাধর্মী বা তাৎপর্য নির্দেশক নামকরণই বেশি ব্যবহৃত হয় । নরেন্দ্র মিত্র রচিত “ রস ” গল্পটির নামকরণ এই তাৎপর্য নির্দেশক নামকরণ । তাই এ নামকরণ অব্যশই সার্থক ।
এই গল্পের কাহিনী দীর্ঘ নয় , চরিত্র বাহুল্য নেই । একজন রস গুড়ের কারবারি মোতালেফের চরিত্রের মনুস্তত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । স্বার্থসিদ্ধির জন্য একজন মানুষ কতটা ছলনার আশ্রয় নিতে পারে , তা স্পষ্ট করে তোলা হয়েছে এ গল্পে । মোতালেফ আপন করে পেতে চাই সুন্দরী ফুলবানুকে । কিন্তু তার বাবা এলেম শেখ ১০০ টাকা পণ চায় । সেই টাকা সঞ্চয়ের জন্যই মোতালেফ রাজেকের বিধবা মাজু খাতুনকে নিকা করে । তাঁর হাতের তৈরী গুড় বাজারের সেরা । বেশী দামে বিক্রি হয় ।
মাজুকে বিবি করে এনে মোতালেফ অনেক গাছ নিয়ে বেশি বেশি রস নিয়ে আসে । মাজু যত্নের সঙ্গে গুড় তৈরী করে দেয় । মোতালেফ তা বেশি দামে বিক্রি করে টাকা সঞ্চয় করে । তারপর রসের মরসুম শেষ দেয় মাজুর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দেই তালাক দিয়ে । তারপর নিকা করে আনে ফুলবানুকে ।
পছন্দের পাত্রী সুন্দরী ফুলবানুর সঙ্গে রসের কথা , প্রেমের কথা , সোহাগের কথা বলে কাটানো যায় , কিন্তু বেশিদিন সংসার করা যায় না । কারণ তার কোনো গুণ নেই । মোতালেফ এনে দেওয়া রসের থেকে সে যা গুড় বানায় তা নিকৃষ্ট । বাজারে বিক্রি হয় না । একবার যে কেনে সে আর মোতালেফের গুড় কেনে না । মোতালেফের বাজারে এমনই পরিচিত হয়ে গেল যে , তার গুড় আর বিক্রি হয় না । তখনই তার মনে পড়ে মাজু বিবির গুণের কথা । কিন্তু সে এখন নাদির সেখের বিবি । তাই নিজের দূরবস্থার কথা মাজুকে জানাবার জন্য সে নাদির সেখের সঙ্গে ভাব জমিয়ে অবিক্রিত গুড় উপহার দেয় । তারপর একদিন দু ভাড় রস নিয়ে নাদির সেখের বাড়িতে হাজির । খাওয়াতে নয় , সের দুই ভালো গুড় তৈরি করিয়ে নিয়ে বাজারে বেঁচে বদনাম ঘোচাতে ।
গল্পের বিষয়ের মধ্যে খেজুর রস মুখ্য ভূমিকা নিয়েছে । শুধু এই কারণেই যে “ রস ” সার্থক তা নয় । সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যের বস্তু ধর্মী নামকরন সার্থক হয় না । এখানে ‘ রস ’ কথাটির মধ্যে দিয়ে আরেকটি অর্থের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে সেটি জীবন রস । গল্পের নায়ক মোতালেফ পেতে চেয়েছিল সুন্দরী ফুলবানুর সাহচর্য ও প্রণয় । কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না । মোতালেফ ফুলবানুর প্রণয়ন রস , দাম্পত্য সুখ , জীবন রস আস্বাদন করার জন্য একটা ভয়ঙ্কর ঘৃণ্য ছলনার আশ্রয় নিয়েছে । মাজু খাতুন কে জীবন রস আস্বাদনের প্রলোভন দেখিয়ে বিবাহে রাজি করিয়ে ঘরে এনে তাকে ভালো গুড় তৈরির কাজে নিযুক্ত করেছে । তারই তৈরি উন্নতমানের গুড় বেশি দামে বেঁচে সে পয়সা জমায় ।প্রয়োজন মতো পয়সা জমার পর সে মাজুকে বদনাম দিয়ে , তালাক দিয়ে তাড়িয়েছে ।
কিন্তু , যে জন্য এত বড়ো প্রতারণা , সেটা আশানুরূপ হল না । ফুলবানুর সঙ্গে মিলন হলেও তা বেশিদিন প্রণয় রসসিক্ত থাকল না । রসের মরসুম আসতেই খেজুরের রস ঘরে পৌঁছাতে মোতালেফ ফুলবানুর প্রণয় রস শুকোতে শুরু করেছিল । কারণ , ফুলবানুর রূপ যৌবন যতই থাক গুন ছিল না । খেজুর রস কে ভালো গুড়ে পরিণত করার দক্ষতা তাঁর না থাকায় মোতালেফের বদনাম ও লোকসান বাড়তে লাগল । তাই তার জীবন নীরস হয়ে উঠল । এ দিক থেকে রস আর জীবনরসই যে এ গল্পের অবলম্বন তা বোঝা যায় । তাই , ‘ রস ’ নামকরণ এ গল্পের বিষয় এবং তাৎপর্যের দিক থেকে খুবই সার্থক হয়েছে ।
আরো পড়ুন,
‘স্টোভ’ গল্পে শশিভূষণের চরিত্র আলোচনা করো।
‘নিমগাছ’ গল্পটি কোন গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত? নিমগাছের প্রতীকে গল্পকার যে সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন তা বুঝিয়ে দাও।
‘রস’ গল্প অবলম্বনে মাজু খাতুনের চরিত্রটি আলোচনা করো।
‘পাড়ি’ গল্পটি রচনার প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দাও।
‘পুঁইমাচা’ গল্পে প্রতিফলিত সমাজচিত্র আলোচনা করো।
‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে হাস্যরস নির্মাণে গল্পকারের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
‘মৌরীফুল’ গল্পে প্রকৃতি ও মানবের মেলবন্ধন কীভাবে ঘটেছে বুঝিয়ে দাও।
‘ছিন্নমস্তা’ গল্পে একটি পুরুষ চরিত্রকে ঘিরে মাতা ও বধূর যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।
‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।
‘পুঁইমাচা’ গল্পটি নামকরণের সার্থকতা বিচার কর ?
“ রস ” গল্পের নামকরণ সার্থকতা বিচার কর ?
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ?
দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ও নাম করনের সার্থকতা বিচার কর ?
রবীন্দ্রনাথ ও প্রভাতকুমারের মধ্যে তুলনা কর ?
‘দেবী’ গল্পের মূল চরিত্রের পরিণতির জন্য কোন কোন ঘটনা দায়ী উল্লেখ করো।