‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে হাস্যরস নির্মাণে গল্পকারের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

Table of Contents

অথবা, ‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় কৌতুকরসের মোড়কে সমাজার বিদ্রূপ করেছেন-সমালোচকের এই মন্তব্যটি পর্যালোচনা কর।

‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে হাস্যরস নির্মাণে গল্পকারের কৃতিত্ব-

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প রচনার ক্ষেত্রে কিছু কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। স্টে সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর প্রেমের গল্প কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ দাম্পত্য জীবনের মিষ্টি প্রেমের গল্পে সীমাবদ্ধ থেকেছে। কিশোর যুবক, নব্য যুবক-যুবতীর মিলনাকাঙ্ক্ষায়, স্ত্রীর পতিব্রহ স্বামীর প্রতি প্রগাঢ় প্রেমের প্রকাশ প্রভৃতি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে তিনি অনেক গল্প র‍্যন করেছেন। কোনো গল্পেই রুচির অভাব ঘটেনি। কিন্তু ‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পটি দাম্পত্র লীলার অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু নায়িকা রসময়ী স্বামীগতপ্রাণা হলেও রুদ্র রসের অধিকারিণী স্বামী ক্ষেত্রমোহনের আঠারো বছরের বিবাহিত জীবনে অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ ও সন্ধির কারন রসময়ী। ক্ষেত্রমোহন মুখে যাই বলুক না কেন, মনে মনে স্ত্রীকে যথেষ্ট সমীহ করে চলে। আবার মাঝে মাঝে সন্তান লাভের বাসনায় মনে মনে দ্বিতীয়বার বিবাহের কথা ভাবেন। এই প্রসঙ্গ দিয়ে গল্পের কাহিনি শুরু করে গল্পকার সমাজকে বিদ্রুপ করতে করতে এর পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছেন। ‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে নায়ক ক্ষেত্রমোহনকে উপলক্ষ্য করে লেখক রসময়ীর মাধ্যমে সমাজকে ব্যঙ্গ করেছেন। কৌতুকরসের মোড়কে লেখক হাস্যরসের মজার আমেজ ছড়ালেও কেবলমাত্র কৌতুকময় হাস্যরস সৃষ্টি করা তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না।

সমাজ সমালোচক হিসেবেই তিনি সমাজে অন্ধতাজনিত ত্রুটিগুলি দেখাতে চেয়েছেন। সেই স্যাটায়ার সৃষ্টির কাজে কোনোরকম জোর খাটাননি গল্পকার। গল্পের স্বাভাবিক গতিতে হাসির ফোয়ারা ছোটার পাশাপাশি বিদ্রুপের বাণ ছুটিয়েছেন। আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে যে অন্ধতা, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন গল্পকার। প্রথমত আঠারো বছর ধরে সন্তানাদি না হওয়ার দায় চাপানো হয়েছে নারীর উপর। এমনকি বারবার কন্যাসন্তান প্রসব করার দায়ও দেওয়া হয় নারীকে। এই অপরাধের জন্য পুরুষ দ্বিতীয়বার বিবাহ করত। সমাজব্যবস্থায় এই বিষয়টি এত দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগরও বহুবিবাহ নিরোধ আলোচনায় নিঃসন্তানের কারণে কোনো পুরুষের দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার পত্নীগ্রহণকে বৈধ বলে উল্লেখ করেননি। সন্তান সম্ভাবনায় পত্নীর সঙ্গে যে স্বামীর ভূমিকা কোনো অংশে কম নয় এই কথা অজ্ঞানতার কারণে মানা হত না। আলোচ্য গল্পেও সেই দিকের প্রতি কটাক্ষ করেছেন গল্পকার।

দ্বিতীয়ত, রসময়ীর মৃত্যুর পর ক্ষেত্রমোহনের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন তার বিয়ের জন্য পাত্রীর খোঁজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমাদের দেশে প্রবাদ আছে ভাগ্যবানের বৌ মরে। তার মানে এই নয় যে, বৌ-এর মুখড়া দজ্জাল স্বভাব থেকে সে মুক্তি পায় কিংবা আর-একটি কিশোরী বা নবযুবতীকে সমাজ স্বীকৃত প্রেম নিবেদনের সুযোগ পায়, যুবতীর সঙ্গে বেশ কিছু সম্পদ লাভ হয়।

আলোচ্য গল্পে দেখা যায়, ক্ষেত্রমোহন রসময়ীর মৃত্যুর পর যখন বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে গেলেন-‘মেয়েটি ডাগড়-দেখিতেও ভালো। মেয়ের পিতা একটি বড়ো জমিদারের নায়েব ওদিককার মামলা মোকদ্দমাগুলি এই সূত্রে ক্ষেত্রমোহনবাবুর করায়ত্ত হইবে।’ এই আশাতে ক্ষেত্রমোহন বিবাহে রাজি হয়েছিল। আলোচ্য গল্পে বিপত্নীক ক্ষেত্রমোহনের পাশাপাশি বিধবা বিনোদিনীকেও দেখিয়েছেন লেখক। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে তার জায়গা হয়নি, বাপের বাড়িতে একমাত্র জপের মালাটা সম্বল করে তাকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এছাড়া সংসারের সমস্ত কাজ তাকেই করতে হয়।

গুপ্তবিদ্যা, প্রেততত্ত্ব, ব্রহ্মতত্ত্ব, রহস্যময় বিদ্যা প্রভৃতি নিয়ে আলোচনা করেন থিয়োজফিস্ট মনোহরবাবু। রসময়ীর রসিকতায় পূর্ণ পত্রকে মনোহরবাবু ভৌতিক কর্মকাণ্ড-বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, যা গল্পে হাস্যরসের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে।

• এইভাবে দেখা যায় যে, গল্পকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় কৌতুকময় সরস গল্প লেখার অছিলায় সমাজ সমালোচনামূলক গল্প লিখেছেন। এই দিক থেকে বিচার করে দেখলে সমালোচকের মন্তব্যটির সাথে তামরা সহমত পোষণ করি।

আরো পড়ুন,

‘স্টোভ’ গল্পে শশিভূষণের চরিত্র আলোচনা করো।

‘নিমগাছ’ গল্পটি কোন গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত? নিমগাছের প্রতীকে গল্পকার যে সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন তা বুঝিয়ে দাও।

‘রস’ গল্প অবলম্বনে মাজু খাতুনের চরিত্রটি আলোচনা করো।

‘পাড়ি’ গল্পটি রচনার প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দাও।

‘পুঁইমাচা’ গল্পে প্রতিফলিত সমাজচিত্র আলোচনা করো।

‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে হাস্যরস নির্মাণে গল্পকারের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

‘মৌরীফুল’ গল্পে প্রকৃতি ও মানবের মেলবন্ধন কীভাবে ঘটেছে বুঝিয়ে দাও।

‘ছিন্নমস্তা’ গল্পে একটি পুরুষ চরিত্রকে ঘিরে মাতা ও বধূর যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।

‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।

‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।

‘পুঁইমাচা’ গল্পটি নামকরণের সার্থকতা বিচার কর ?

“ রস ” গল্পের নামকরণ সার্থকতা বিচার কর ?

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ?

দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ও নাম করনের সার্থকতা বিচার কর ?

রবীন্দ্রনাথ ও প্রভাতকুমারের মধ্যে তুলনা কর ?

‘দেবী’ গল্পের মূল চরিত্রের পরিণতির জন্য কোন কোন ঘটনা দায়ী উল্লেখ করো।

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading