সময়ীর রসিকতা গল্পের বিষয়বস্তু-
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পটি কৌতুক রসে মিশ্রিত হয়ে শিল্পসার্থকতায় উত্তীর্ণ হয়েছে। দাম্পত্য প্রেমের মধ্যেও যে পরিহাস বা ঠাট্টা রয়েছে তা আলোচ্য গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্প সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন- “তোমার গল্পগুলি ভারি ভালো। হাসির হাওয়ায় ঝোঁকে পালের উপর পাল তুলিয়া একেবারে হু হু করিয়া ছুটিয়া চলিয়াছে, কোথায় যে কিছুমাত্র ভার আছে বা বাধা আছে তাহা অনুভব করিবার জো নাই। ছোটগল্প লেখায় পঞ্চপাণ্ডবের মধ্যে তুমি যেন সব্যসাচী অর্জুন, তোমার গাণ্ডীব হইতে তীরগুলি ছোটে যেন সূর্যের রশ্মির মত।” প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালি পাঠকের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন মুখ্যত তাঁর হাস্যরসাত্মক গল্পের জন্য। ‘কালের পুত্তলিকা’ গ্রন্থে অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন- “গল্প সূচনায় পরিচ্ছেদগুলি পড়েই পাঠকমন এক ঘটনা -প্রত্যাশায় কৌতূহলী হয়ে ওঠে। লেখকের গল্প বলার ভঙ্গিটি আপাত-নিরীহ, আপাত- নিরাসক্ত, ভিতরে ভিতরে কৌতুকের ফন্তু প্রচ্ছন্নভাবে প্রবহমান। পড়তে না পড়তেই পাঠকের মনে হয়, এবার বোধ হয় মজা শুরু হবে।” (পৃষ্ঠা-১৪২) ‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে রসময়ীর আচরণে পাঠকদের মনে হাস্যরসের সঞ্চার করেছে। রসময়ী বলেছে- “রসি বামনি তেমন মেয়ে নয়। আমি মানা করা সত্যেও বিবাহ করিবে। এখনও সাবধান হও। এ দুরমোতি পরিত্যাগ কর। নহিলে একদিন গভীর রাত্তিরে তুমি যখন ঘুমাইয়া থাকিবে বটগাছ হইতে নামিয়া তোমার বুকে একখান দসমুনে পাতর চাপাইয়া দিব। ঘুম আর ভাঙ্গিবে না।” কৌতুক রসে পূর্ণ লাইনগুলি পাঠ করে গল্পে পাঠক না হেসে থাকতে পারেনি। রসময়ীর কর্মকাণ্ডের জন্যেই সমস্ত পাঠক কৌতুক রস উপভোগ করেছে। ‘বাংলা ছোটগল্পের দিগ্বলয়’ গ্রন্থে- অধ্যাপক তরুণ মুখোপাধ্যায় বলেছেন-“গল্পের মধ্যে ও শেষে চমক সৃষ্টিতে কিংবা অপ্রত্যাশিত পরিণাম রচনাতে প্রভাতকুমার তুলনাহীন। এই ধরণের গল্প বাছাই করা মুশকিল। তবু তাঁর ‘মাস্টার মহাশয়’, ‘বাজীকর’, ‘রসময়ীর রসিকতা’ ইত্যাদি গল্প পাঠকের সহজেই মনে পড়ে।” (পৃষ্ঠা- ২৫) ক্ষেত্রমোহনবাবু তাঁর স্ত্রী রসময়ীকে নিয়ে কলহে ও সন্ধিতে জীবন কাটিয়ে যখন বিপর্যস্ত, তখন, রসময়ীর লেখা চিঠি ক্রমাগত আসে এবং ক্ষেত্রমোহনবাবুকে অস্থির করে তোলে। ক্ষেত্রমোহনবাবু ভাবেন গয়ায় পিণ্ড দিলে শান্তি পাবেন ও পুনর্বার বিবাহ করতে পারবেন।
তখনই মৃতা স্ত্রীর চিঠি পান- “গয়ায় যদি যাও তবে চোরের বেশ ধরিয়া রেল গাড়ীতে প্রবেশ করিয়া তোমার বুকে ছোরা বসাইয়া দিব।” ঘটনা প্রবাহ যখন অলৌকিক রসে সিক্ত, তখনই সমাপ্তিতে চমক লক্ষ্য করা যায়। হালিশহরে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে ক্ষেত্রমোহন খুঁজে পান রসময়ীর হাতে লেখা নানা চিঠি ও তার নামে লেখা খাম। নানা অবস্থা কল্পনা করে রসময়ী সতর্কবাণীতে যা লিখেছে, তা পড়েই তিনি মূল ব্যাপার বা রহস্য বুঝতে পারেন। গল্পটি ভৌতিক নয়, কিন্তু পরিবেশ, আবহ রচনার প্রেতলোক যেন জীবন্ত হয়েছে। গল্পের উপসংহার এতই চমকপ্রদ ও আকস্মিক যে, এ কাজের জন্যে লেখককে ধন্যবাদ দিতেই হয়।
আরো পড়ুন,
‘স্টোভ’ গল্পে শশিভূষণের চরিত্র আলোচনা করো।
‘নিমগাছ’ গল্পটি কোন গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত? নিমগাছের প্রতীকে গল্পকার যে সমাজচিত্র তুলে ধরেছেন তা বুঝিয়ে দাও।
‘রস’ গল্প অবলম্বনে মাজু খাতুনের চরিত্রটি আলোচনা করো।
‘পাড়ি’ গল্পটি রচনার প্রেক্ষাপট বুঝিয়ে দাও।
‘পুঁইমাচা’ গল্পে প্রতিফলিত সমাজচিত্র আলোচনা করো।
‘রসময়ীর রসিকতা’ গল্পে হাস্যরস নির্মাণে গল্পকারের কৃতিত্ব আলোচনা করো।
‘মৌরীফুল’ গল্পে প্রকৃতি ও মানবের মেলবন্ধন কীভাবে ঘটেছে বুঝিয়ে দাও।
‘ছিন্নমস্তা’ গল্পে একটি পুরুষ চরিত্রকে ঘিরে মাতা ও বধূর যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছবি প্রকাশিত হয়েছে তার পরিচয় দাও।
‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।
‘আহ্নিকগতি ও মাঝখানের দরজা’ গল্পের নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।
‘পুঁইমাচা’ গল্পটি নামকরণের সার্থকতা বিচার কর ?
“ রস ” গল্পের নামকরণ সার্থকতা বিচার কর ?
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ?
দেবী গল্পের বিষয়বস্তু ও নাম করনের সার্থকতা বিচার কর ?
রবীন্দ্রনাথ ও প্রভাতকুমারের মধ্যে তুলনা কর ?
‘দেবী’ গল্পের মূল চরিত্রের পরিণতির জন্য কোন কোন ঘটনা দায়ী উল্লেখ করো।