রবীন্দ্রানুসারী ও রবীন্দ্রবিরোধী কবিদের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং তাঁর অবদানগুলি ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং পালিত হয়েছে। যাইহোক, কিছু কবি ছিলেন যারা ঠাকুরের সাহিত্য শৈলী এবং পদ্ধতির সমালোচক ছিলেন। এখানে পাঁচজন সাহিত্যিক কবি রয়েছে যারা ঠাকুরের সমালোচনা করতে পরিচিত:

কাজী নজরুল ইসলাম – তিনি ঠাকুরের সমসাময়িক ছিলেন এবং তাঁর দৃঢ় ঔপনিবেশিক বিরোধী অবস্থান এবং ঠাকুরের কথিত অভিজাততা এবং দরিদ্রদের দুর্দশার প্রতি অবজ্ঞার সমালোচনার জন্য পরিচিত ছিলেন।

জীবনানন্দ দাশ – তিনি একজন কবি যিনি আধুনিকতাবাদী শৈলীতে লিখেছেন এবং ঠাকুরের রোমান্টিকতা এবং নস্টালজিয়ার সমালোচনা করেছিলেন।

সৈয়দ মুজতবা আলী – তিনি একজন লেখক, সাংবাদিক এবং অনুবাদক ছিলেন এবং তিনি তাঁর রাজনৈতিক ব্যস্ততার অভাব এবং গ্রামীণ জীবনকে আদর্শ করার প্রবণতার জন্য ঠাকুরের সমালোচনা করেছিলেন।

বুদ্ধদেব বসু – তিনি একজন কবি এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন, এবং তিনি তাঁর সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব এবং তাঁর রচনায় কঠিন সমস্যাগুলি মোকাবেলা থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতার জন্য ঠাকুরের সমালোচনা করেছিলেন।

রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী – তিনি একজন কবি এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন এবং তিনি তাঁর রাজনৈতিক ব্যস্ততার অভাব এবং তাঁর কাজে কঠিন সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতার জন্য ঠাকুরের সমালোচনা করেছিলেন। বীন্দ্রবিরোধী কবি হিসাবে যে পাঁচজন কবি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে বুদ্ধদেব বসুর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা কাব্যক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব ও প্রতিষ্ঠা এতটাই অপ্রতিরোধ্য ছিল যে তা উত্তরকালের কবিসমাজকে খুব সহজেই মায়াবী সুরে মোহাচ্ছন্ন করে তুলেছিল। ফলে রবীন্দ্রানুসারী একদল অক্ষম কবিসমাজ রবীন্দ্রনাথের জীবীতকালেই বাংলা কাব্যকলাকে গ্রাস করতে শুরু করেছিল। ফলে রবীন্দ্রনাথ বাংলা কাব্যধারায় যে উচ্ছ্বলতা এনেছিলেন তা আবার বিলম্বিতলয়ে বইতে শুরু করেছিল। কিন্তু কেন এমন হল—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বুদ্ধদেব বসু নিজেই এর দুটি কারণ দেখিয়েছেন। প্রথমত, রবীন্দ্রকাব্য মারাত্মককরূপে প্রতারক তা সম্মোহন করে কিন্তু সতর্ক করে না। দ্বিতীয়ত, উত্তরপর্বের কবিসমাজ শুধু বাঁশি শুনে মজেছিল, কিন্তু তার সত্যাসত্য বিচার করবার প্রয়োজনবোধ করেননি। তবে এই সবরকম যুক্তিতর্কের পরে বুদ্ধদেব বসুকে আপাত অর্থে রবীন্দ্র বিরোধী মনে হলেও নানা চিঠিপত্র, ব্যক্তিগত সম্পর্কের উম্মুতা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি তিনি অনেক বেশি রবীন্দ্র আপ্লুত কবি। নতুন সাহিত্যপথের সন্ধানে অথবা নতুনতর সাহিত্যরচনার ঝোঁক থেকেই তিনি রবীন্দ্রবৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। 

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading