রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক পর্বের কাব্যগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক পর্বের কাব্যগুলির মধ্যে রয়েছে ‘খেয়া’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’ ও ‘গীতালি’। এই পর্বে এসে রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতীয়ত্ববোধ থেকে আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করেন। প্রমথনাথ বিশীর মতে-“খেয়া মৃত্যুর কাব্য নহে, জীবনের কাব্য-নবতর জীবনের এবং নবতর কর্মপ্রবাহের।” এই কাব্যের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি হল-‘শেষ খেয়া’, ‘আগমন’, ‘পথিক’, ‘বিদায়’, ‘পথের শেষ’ ইত্যাদি। ‘শেষ খেয়া’ কবিতায় শুনতে পাই-“দিনের শেষে ঘুমের দেশে ঘোমটা পরা ওই ছায়া/ভুলালো রে ভুলালো মোর প্রাণ।” আবার ‘আগমন’ কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে জীবনের কথা-“ওরে

দুয়ার খুলে দে রে/বাজা, শঙ্খ বাজা।/গভীর রাতে এসেছে আজ/আঁধার ঘরে রাজা।” ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যটি প্রকাশিত হয় ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে। এই কাব্যে ১৫৭টি গান রয়েছে। এখানে কবি অন্তরের দেবতাকে প্রিয়ারূপে, সখারূপে, প্রাণেশরূপে উপলব্ধি করলেন। ‘২০’ নং কবিতায় শুনতে পাই-“আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার/পরাণসখা বন্ধু সে আমার।” ‘গীতিমাল্য’ কাব্যে ১১১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে পূর্ণ দৃষ্টির পরিচয় এখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে। এই কাব্য সম্পর্কে অজিতকুমার চক্রবর্তী লিখেছেন-“গীতিমাল্য বঁধুর গলায় গীতিমাল্যের উপহার। দূরত্বের সব বাধা দূর হইয়া অত্যন্ত নিকট নিবিড় পরিচয়।” গ্রহণ নয়, সমস্ত দান ও ত্যাগের মধ্যেই জীবনের পূর্ণতা। তাই ‘১০১’ নং কবিতায় শুনতে পাই-“আমার যে সব দিতে হবে, সে তো আমি জানি/আমার যত বিত্ত প্রভু, আমার যত বাণী।” ‘গীতালি’ কাব্যে অধ্যাত্ম চেতনার নবরূপ দেখা দিয়েছে। এই কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ঈশ্বরের প্রতি গভীর ভালোবাসা। ‘৭৯’ নং কবিতায় শুনতে পাই-“তোমায় সৃষ্টি করব আমি/এই ছিল মোর পণ/দিনে দিনে করেছিলাম/তারই আয়োজন।”

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading