যেতে নাহি দিব’ কবিতাটির অন্তর্নিহিত ভাববস্তু-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “যেতে নাহি দিব” কবিতা প্রেম, আকাঙ্ক্ষা এবং বিচ্ছেদের গভীর বেদনাকে কেন্দ্র করে রচিত। এটি প্রেমের আবেগঘন অভিব্যক্তি, যেখানে প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে না চাওয়ার ব্যাকুলতা অত্যন্ত মর্মস্পর্শীভাবে ফুটে উঠেছে। কবিতাটি বিচ্ছেদের চিরন্তন বেদনা এবং তার বিপরীতে প্রিয়জনকে ধরে রাখার দৃঢ় ইচ্ছার দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে।
অন্তর্নিহিত ভাববস্তু বিশ্লেষণ
১. প্রেমের আবেগ এবং আকাঙ্ক্ষা:
কবিতার মূল সুর হলো প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে না চাওয়ার তীব্র আকুতি। প্রিয়জনের সান্নিধ্য একটি নিরাপত্তা ও শান্তির আশ্রয়, যা হারানোর ভয়ে ভীত কবি। এই আবেগ প্রেমের গভীরতাকে চিত্রিত করে, যেখানে প্রিয়জনকে ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষা প্রেমিকের হৃদয়গ্রাহী ভাষায় প্রকাশিত।
২. বিচ্ছেদের অনিবার্যতা:
কবিতায় যদিও প্রিয়জনকে যেতে না দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশিত, তবু এর গভীরে লুকিয়ে আছে বিচ্ছেদের অনিবার্যতা। কবি উপলব্ধি করেন যে বিদায় অবশ্যম্ভাবী, কিন্তু সেই সত্যকে মেনে নিতে তিনি প্রস্তুত নন। এই দ্বন্দ্ব প্রেমিক হৃদয়ের চিরন্তন দুর্বলতার প্রকাশ।
৩. মানসিক দ্বন্দ্ব:
কবিতায় দ্বন্দ্বমুখর আবেগ প্রকট। একদিকে রয়েছে প্রিয়জনকে ধরে রাখার বাসনা, অন্যদিকে বিচ্ছেদের অপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা। এটি মানবমনের অন্তর্গত দ্বন্দ্বের প্রতীক, যেখানে আবেগ এবং যুক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
৪. প্রেম ও সত্তার সংযোগ:
প্রিয়জনের প্রতি প্রেম শুধু আবেগ নয়, বরং তা প্রেমিকের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। প্রিয়জনের প্রস্থান প্রেমিকের জীবনে শূন্যতা এবং হতাশার সৃষ্টি করবে—এই উপলব্ধি কবিতায় বারবার ফুটে উঠেছে।
৫. কাব্যিক ভাষার সুষমা:
কবিতার ভাষা অত্যন্ত সরল, কিন্তু আবেগঘন। প্রতিটি পঙক্তি প্রেমিকের মনের গভীরতম অনুভূতির প্রতিধ্বনি। “যেতে নাহি দিব” বাক্যটি বারবার পুনরাবৃত্ত হয়ে কবির হৃদয়ের আর্তি এবং প্রিয়জনকে ধরে রাখার আবেগময় আকুতিকে আরও জোরালো করে তোলে।
উপসংহার:
“যেতে নাহি দিব” কবিতাটি প্রেমিক হৃদয়ের গভীর আকাঙ্ক্ষা এবং বিচ্ছেদের যন্ত্রণার এক অমর প্রতিচ্ছবি। এটি মানবিক অনুভূতির সেই দিককে তুলে ধরে, যেখানে প্রিয়জনের সান্নিধ্য হারানোর ভয় এবং তাকে ধরে রাখার তীব্র আকুতি একসঙ্গে মিশে যায়। কবিতাটি প্রেমের চিরন্তন সত্য এবং মানবিক আবেগের সারল্যকে অসাধারণভাবে উপস্থাপন করে।