মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞে দাও। ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

সাধারণভাবে নাগরিকের অধিকারসমূহের মধ্যে যেগুলি ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য একান্তভাবে অপরিহার্য সেগুলিকে মৌলিক অধিকার বলে। এই অধিকারগুলি রাষ্ট্রীয় সংবিধান কর্তৃক বিশেষভাবে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত। আইনসভা সাধারণ আইনের পদ্ধতিতে এগুলিকে পরিবর্তিত করতে পারে না ।

ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি যেরূপ বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে বিশ্বের অন্য কোনো সংবিধানে তা লক্ষ যায় না। ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকারের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখযোগ্য।

এনজিও-র একটি প্রধান ভূমিকা রয়েছে এবং এটি সমাজে বর্ণিত মানুষের উন্নয়নের সবচেয়ে বড়ো কারণ। এইদিক দিয়েও একটি প্রশংসনীয় কাজ করছে। এটি দারিদ্র্য বিমোচনের মতো বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে এবং বিভিন্ন সামাজিক কুফল নিয়ে কাজ করছে। এটি বাঁধ, রেলপথ এবং রাস্তা নির্মাণে অবদান রেখেছে এবং সুবিধাবস্থিত, গ্রামীণ এলাকা এবং সমাজের দুর্বল অংশের জন্য সমস্ত মৌলিক সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। এনজিও-র কার্যাবলি মানবতার সেবায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এটি “সর্বজন হিতায়-সর্বজন সুখে”-এর মৌলিক নীতি অনুসরণ করছে এবং একে জাতি গঠনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্যগুলি:

প্রথমত, ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলি চরিত্রের দিক থেকে মূলত রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের ওপর এখানে কোনো গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি। কিন্তু ব্যক্তির বিকাশের জন্য অর্থনৈতিক অধিকার অপরিহার্য। বাকি অধিকারগুলি কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকগণই ভোগ করার অধিকারী।

 দ্বিতীয়ত, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির সবই সমস্ত ব্যক্তির জন্য নয়। কয়েকটি অধিকার দেশের নাগরিক ও বিদেশি সকলেই ভোগ করতে পারে। যেমন—আইনের দৃষ্টিতে সাম্য, জীবনের অধিকার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার। বাকি অধিকারগুলি কেবলমাত্র ভারতীয় নাগরিকগণই ভোগ করার অধিকারী।

• তৃতীয়ত, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য। এই অধিকারগুলিকে রক্ষা করা রাষ্ট্রের পক্ষে বাধ্যতামূলক। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে সংবিধানের ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন আদেশ বা নির্দেশ জারি করতে পারে।

চতুর্থত, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত নয়। কারণ অধিকার অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত হলে তা স্বৈরাচারে পরিণত হয়। কোনো । বিধিনিষেধ অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক হলে আদালত তাকে অবৈধ ও বাতিল বলে ঘোষণা করতে পারে। উদাহরণ হিসাবে স্বাধীনতার অধিকারের নিয়ন্ত্রণরূপে নিবর্তনমূলক আটক আইনের কথা বলা যায়। একই অভিপ্রায়ে কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাবশ্যক সংস্থাসমূহের কাজকর্ম চালু রাখা সংক্রান্ত আইন এবং সন্ত্রাস দমন আইন প্রবর্তন করে।

 পঞ্চমত, ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলি জরুরি অবস্থায় আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে রাষ্ট্রপতি মৌলিক অধিকারকে বলবৎ করার ক্ষরতা সংকুচিত করতে পারেন।

ষষ্ঠত, সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিকে দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়—ইতিবাচক এবং নেতিবাচক। যে অধিকারগুলি রাষ্ট্রের প্রতি নিষেধাজ্ঞা সৃষ্টি করে সেগুলিকে নেতিবাচক অধিকার বলা হয়। যথা-আইনের দৃষ্টিতে সাম্য। আবার অন্যদিকে যে অধিকারগুলি প্রত্যক্ষভাবে নাগরিককে দান করা হয়েছে সেগুলি হলো ইতিবাচক। যথা—মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading