মুঘলদের চিত্রকলার প্রতিকৃতি এবং আভ্যন্তরীণ দৃশ্যের ধরন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা কর | Elaborately discuss the style of landscape and portraiture paintings, developed under the Mughal School

মােঘল চিত্রকলা মােঘল রাজবংশর শুরু থেকেই দেখে পাওয়া যায়। আর বাবর ছিলেন ইহাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি চিত্র শিল্পে প্রভূত অনুরাগী ও শিল্পে আসক্ত ছিলেন। ষােড়শ দশকে বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুন পার্সিয়ান চিত্রকলার প্রবেশ ঘটান। আর এই পার্সিয়ান চিত্রকলার প্রভাব প্রায় সারা মােঘল সাম্রাজ্য কালেই বিদ্যমান ছিল। ১৫৩৯ থেকে ১৫৫৫ সাল এর মধ্যে বাবর ও হুমায়ুন ইরাণে। ভ্রমণ করেন ও খুড়তুতাে ভাই Saha Tahmasp এর মাধ্যমে বিখ্যাত দুই চিত্র শিল্পী মীর সৈয়দ আলি এবং আব্দ অল সামাদ এর সহিত পরিচিত হন এবং এদের ভারতে নিয়ে আসেন।

প্রকৃত পক্ষে এর সাথে সাথে পার্শিয়ান ও মধ্য এশিয়া চিত্র কলা মােঘল চিত্রে প্রবেশ ঘটে এবং দীর্ঘ একশত বর্ষকাল ১৫৫০ থেকে ১৬৫০ সাল পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে অর্থাৎ বাবর হুমায়ুন জাহাঙ্গীর ও ঔরাঙ্গজেব কাল পর্যন্ত। এবং বিদেশি দুই শিল্পীর মৃত্যুর পরেও তাদের আত্মীয় এবং যারা তার সাথে। কাজ করেছিলেন তাঁহারা এই ধারায় সমগ্র মােঘল রাজত্বকালে চিত্র অঙ্কন করেন। শুধু তাই নয়, এই দীর্ঘ একশত বর্ষ ধরে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু শিল্পীকে পার্সিয়ান ও মধ্য এশিয়া শিল্প ধারা ও তত্ত্বাবধানে মােঘল রাজবংশের চিত্র অঙ্কনের কাজে জড়াে করা হয়েছিল।

পুথি illustration চিত্রণ। সেই সময় খুব সমৃদ্ধিলাভ করে। সেই সময় প্রথম বিরাট সুতি বস্ত্রের উপর “হামাজা-নামা” দীর্ঘ ধারাবাহিক বই (illustrations) আত্মপ্রকাশ করে। আকবর জাহাঙ্গীর এবং শাজাহানের জীবনী সম্বলিত পার্শিয়ান ও রাজপুত শিল্প শৈলী ও পাশ্চাত্য শিল্পরীতির মিশ্রণে চিত্র অঙ্কিত হয়। এছাড়াও আরও বিভিন্ন পুথিও আমরা পেয়ে থাকি। মূলতঃ মােঘল আমলে চিত্রগুলি ছােট আকারে অঙ্কিত হত।

দরবার বা মসজিদের দেওয়ালে এই ছবিগুলি টাঙানাে হত বা এ্যালবামে সংরক্ষিত করা থাকত। দরবারে বাদশাহের Portrait দেখতে পাওয়া যেত। এবং এই অঙ্কন পদ্ধতিতে অনেকে বাদশাহী’ কায়দা বলে থাকেন। ক্ষুদ্র কাজেও শিল্পীরা বেশ পারদর্শী ছিল প্রমাণ স্বরূপ হাতির দাঁতের উপর জাহাঙ্গীরের ও নুরজাহানের প্রতিকৃতি অঙ্কন, বিভিন্ন চিত্র ধারার প্রভাবের ফলে Realistic চিত্র অঙ্কনে মােঘল শিল্পীরা সচেষ্ট ছিলেন।

জাহাঙ্গীরের সময় 1628–54 মােঘল সবচাইতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন চিত্রশৈলী রেখাচিত্র, স্নিগ্ধ রং, mood ও হিন্দু চিত্রের আবেগ সহযােগে অঙ্কিত হয়েছে, যা আংশিক পার্শিয়ান Composition ধারা থেকে সরে এসে চিত্রাঙ্কন বলা যায়। আর 1654 খৃষ্টাব্দে ঔরঙ্গজেব তার পিতার হাত থেকে ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই ক্রমে মােঘল ঐতিহ্যের শিল্পীরা খাংড়া. বিকানিরের সমতল প্রভৃতি অঞ্চলে চলে যান এবং বলতে গেলে এখানেই মােঘল চিত্রের মৃত্যু ঘটে।
জাহাঙ্গীরের আমলে দিল্লী, লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি শহরে বহু শিল্প স্থাপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, ভারতীয় চিত্র ও স্থাপত্যের ইতিহাসে মােঘল শিল্পের একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। উপরােক্ত আলােচনা থেকে মােঘল চিত্রের বহু বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেলেও ‘পরিপ্রেক্ষিত’ চিত্রে প্রয়ােগ আমরা সেইভাবে দেখতে পাইনি। দূর্গস্থাপত্যেও যেমন তারা সুদক্ষ ছিল ও মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয় সেই রূপ চিত্রেও তারা সমান রুচিশীল ছিল। সূক্ষ্ম নক্সা, মিনিয়েচার পেইনটিং তথা কাগজে, কাপড়ের উপর ছবি অঙ্কনে ও প্রয়ােগে মােঘল শিল্পীরা সমান দক্ষ ছিলেন।মুঘল যুগের চিত্রকলার বৈশিষ্ট্য

ক) মুঘল স্থাপত্য শিল্প পারসিক স্থাপত্যকে অনুকরণ করেই তৈরী হয়েছিল। ঠিক তেমনি মুঘল চিত্রকলা তৈরির সময়ও ভারতীয় চিত্রকলার সাথে পারসিক চিত্রশিল্পের মেলবন্ধন ঘটে।

খ) ভারতীয় চিত্রশিল্পীরা পারসিক চিত্রশিল্পকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছিলেন। তবে ভারতীয় চিত্রশিল্পের মেজাজ, অনুভূতি ছিল আলাদা।

গ) মুঘল চিত্রকলার বিষয়বস্তুতে বাস্তব ঘটনাগুলির দেখা মেলে। এই যেমন কোনো শিকারের ঘটনা, গাছ, পশুপাখি, প্রাকৃতিক দৃশ্য ইত্যাদি বিষয়বস্তু ছিল মুঘল চিত্রকলার।

ঘ) মুঘল চিত্রশিল্পে ভারতীয় ধারার সাথে পারসিক, চীনা, বৌদ্ধ, ইরানীয় এইসবের মিশেল দেখা যায়।

ঙ) মুঘলদের শিল্পকলায় ‘ মিনিয়েচার পেন্টিং‘ বা ক্ষুদ্র চিত্র অঙ্কনের পদ্ধতির ব্যবহার হয়েছিল। ভারতবর্ষে এর আগে এইরকম আঁকা চিত্রের দেখা পাওয়া যায়নি।

চ) জাহাঙ্গীরের আমলেই মুঘল চিত্রশিল্পে চিত্রের বিষয়ের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

ছ) মুঘল যুগের শিল্পকলায় ইউরোপের চিত্রশিল্পের প্রভাব ছিল। এর কারণ, স্যার টমাস রো, উইলিয়াম হকিন্স প্রমুখরা মুঘল দরবারে এসেছিলেন। এর মধ্যে স্যার টমাস রো জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল দরবারে এসেছিলেন। তাই এঁদের আগমনের ফলে শিল্পকলাতে ইউরোপীয় প্রভাব পড়েছিল।

জ) সবচাইতে বড়ো বৈশিষ্ট্য হোলো, পারসিক শিল্পকলার সাথে ভারতীয় শিল্পকলার মিশ্রণ। যে মিশ্রণে প্রতিটি চিত্রের ভেতরের রূপ, রস বাইরে প্রকাশ পেয়েছে।

মুঘল যুগের চিত্রশিল্পীগণ:

শিল্পী ছাড়া শিল্প হয়না। একজন শিল্পী তাঁর দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় শিল্পকর্মকে করে তোলেন জীবন্ত। আর সেই শিল্পকর্ম যদি হয় চিত্রশিল্প বা ছবি আঁকা। শিল্পীর তুলির টানে ক্যানভাসে চিত্রগুলি ফুটে ওঠে। পরে তা দেখে দর্শকরা তাঁদের চোখ স্বার্থক করে। মুঘল চিত্রশিল্পীরাও ঠিক ছিলেন এমনই। মুঘল চিত্রশিল্পীদের আঁকা ছবিগুলি আজও বিভিন্ন মিউজিয়ামে শোভা পায়। ছবিগুলি যেন একেকটি মূল্যবান ঐতিহাসিক দলিল।

জাহাঙ্গীরের সময় মুঘল শিল্পকলা উন্নতির শিখরে উঠেছিল। জাহাঙ্গীর তাঁর রাজদরবারে নিযুক্ত করেছিলেন আগা-রিজাকে। আগা-রিজা ছিলেন হিরাটের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
মোঙ্গলীয় চিত্রশিল্পী ফারুক বেগও ছিলেন মুঘল যুগের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী।
আবদুস সামাদ, মীর সৈয়দ আলী, মহম্মদ নাদির, মহম্মদ মুরাদের মতো বিদেশি চিত্রকররা মুঘল দরবারকে অলংকৃত করেছেন।

মীর সৈয়দ আলী এবং আব্দুল সামাদ আকবরের রাজসভায় দুজন বিখ্যাত চিত্রকর ছিলেন।
চিত্রশিল্পী উস্তাদ মনসুর পশুপাখির চিত্র অঙ্কনে দক্ষ ছিলেন। উস্তাদ মনসুরের আঁকা সেইসমস্ত পশুপাখির চিত্রগুলি একেবারে জীবন্ত বলে মনে হোতো।

চিত্রে রঙের সঠিক ব্যবহার ঘটানোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন আবুল হাসান।
একেবারে হুবহু যে কারোর প্রতিকৃতি আঁকতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন চিত্রকর বসাওয়ান।
আবুল ফজলের রচনায় আকবরের আমলের ১৭ জন বিখ্যাত মুঘল চিত্রশিল্পীদের নাম পাওয়া যায়। জানা যায় যে, এর মধ্যে ১৩ জন হিন্দু ছিলেন।

এঁদের নামগুলি হোলো মধু, লাল, কানহা, মিসকিন, তারা, নানহা, ভগবান, কেসু প্রমুখ। জানা যায় যে, আকবর সপ্তাহে একদিন এই শিল্পীদের আঁকা ছবিগুলি দেখতেন। সেইসাথে তাঁদেরকে উৎসাহিত করতেন।জাহাঙ্গীরের আমলের হিন্দু চিত্রশিল্পীদের মধ্যে বিষেণদাস, মনোহর, গোবর্ধন, বিচিত্র প্রমূখরাও বিখ্যাত ছিলেন। শিল্পী বিষেণদাসের আঁকা রাজা দশরথের পুত্রলাভ যজ্ঞ এবং লঙ্কার রাজা রাবণের সীতাহরণ ও জটায়ু বধ মুঘল যুগের এক অসামান্য চিত্র।

জাহাঙ্গীরের চিত্রকলা:

জাহাঙ্গীর ছিলেন সম্রাট আকবরের জ্যেষ্ঠপুত্র। অম্বরের রাজকুমারী তথা বিহারিমলের কন্যা ছিলেন জাহাঙ্গীরের মা। জাহাঙ্গীরের প্রথম নাম ছিল সেলিম।

ছত্রিশ বছর বয়সে এই সেলিমই নুরুদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গীর নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন। সমগ্র জগতের কাছে পরিচিত হন জাহাঙ্গীর নামে।

জাহাঙ্গীরের পিতা সম্রাট আকবর স্থাপত্য নির্মাণের জন্য ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। কিন্তু জাহাঙ্গীরের ক্ষেত্রে পুরোটাই ছিল উল্টো।বরং জাহাঙ্গীরের ঝোঁক ছিল চিত্রশিল্প নির্মাণে। আর একারণেই তিনি ইতিহাসে প্রসিদ্ধ।জাহাঙ্গীরের জীবন জুড়ে শুধুই ছিল তুলি আর রঙ। জাহাঙ্গীরের পত্নী ছিলেন নুরজাহান। নুরজাহান কথার অর্থ ‘জগতের আলো’। অসামান্যা সুন্দরী ছিলেন বলেই তাঁর নামের এই অর্থ। নুরজাহান স্থাপত্য নির্মাণে বেশ অনুরাগী ছিলেন। তাইতো নুরজাহান নির্মাণ করেছিলেন ‘ইতমাদদ্দৌলা‘ ( Itmad-ud-daulah )।

এটি ছিল তাঁর পিতার সমাধিভবন। কিন্তু জাহাঙ্গীর মুঘল স্থাপত্য তৈরির থেকে দূরে ছিলেন।
তিনি প্রবর্তন করলেন মুঘল চিত্রশিল্প নামে এক নতুন চিত্র অঙ্কনের রীতি।জাহাঙ্গীর চিত্রশিল্পকে এতটাই ভালোবাসতেন যে, যে কোনো ছবি দেখেই বলে দিতে পারতেন ছবিটি কোন চিত্রকরের আঁকা।

এমনকি সুন্দর আঁকা ছবিকে সর্বাধিক মূল্য দিয়ে কিনতে দ্বিধাবোধও করতেন না। একজন সত্যিকারের শিল্প রসিকের মনে হয় এটাই পরিচয়। আসলে জাহাঙ্গীরের আমলেই মুঘল চিত্রকলার চরম উন্নতি ঘটে। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃতিপ্রেমিক। প্রকৃতির ফুল, গাছপালা, বাগান এই সবকিছুকেই জাহাঙ্গীর ভালোবাসতেন। সেই কোন কাল থেকেই কাশ্মীর ‘ভারতের ভূস্বর্গ’ বলে পরিচিত। কাশ্মীরের সৌন্দর্যের আকর্ষণে দেশ বিদেশের কতোই না পর্যটক ছুটে আসে। সম্রাট জাহাঙ্গীর একমাত্র মুঘল সম্রাট, যিনি প্রায় উনিশ বার কাশ্মীর ভ্রমণে গিয়েছিলেন।
কেন জানো ? কাশ্মীরের সৌন্দর্যের টানে। কাশ্মীরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে তিনি অভিভূত হয়েছিলেন। ফিরে এসে কাশ্মীরের সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে শিল্পীদের দিয়ে আঁকিয়েছিলেন সত্যিই জাহাঙ্গীর চিত্রকলার প্রকৃত সমঝদার ছিলেন।


জাহাঙ্গীরের চিত্রগুলির মধ্যে উস্তাদ মনসুরের আঁকা ‘সাইবেরিয়ান সারস‘ ছবিটি অনবদ্য। বর্তমানে কলকাতা জাদুঘরে ছবিটি রাখা আছে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজস্থানের আজমীরে খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগাহ পরিদর্শনের চিত্রটি ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে আজও যত্নসহকারে রক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়াও হিন্দুদের হোলি, দেওয়ালির মতো উৎসবের চিত্রও এইসময় তৈরি হয়েছিল। মিনিয়েচার পেন্টিং বা ক্ষুদ্র চিত্র অঙ্কন জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে শুরু হয়। অর্ধেক মুখচিত্রণ ছবিগুলি এইসময় নির্মিত হয়। বিষেণদাস, আবুল হাসান প্রমূখ চিত্রশিল্পীরা অর্ধ মুখচিত্রণ আঁকতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁর আত্মজীবনীতে এঁদের নাম উল্লেখ করেছেন।
জাহাঙ্গীরের চিত্রকরদের মধ্যে বিচিত্র ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ হিন্দু চিত্রকর। তিনি খুব সুন্দর পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতি আঁকতে পারতেন।

বিচিত্রের একটি অসাধারণ প্রতিকৃতি চিত্র হোলো, শাহজাহানের ভূমন্ডলে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা।
অর্থাৎ সমগ্র ভূমন্ডল শাহজাহানের পদানত এবং শাহজাহানের প্রভাব প্রতিপত্তি দেখাতে এই চিত্রটি আঁকা হয়েছিল।তাঁর আঁকা পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতিতে পা-গুলি হোতো চ্যাপ্টা ধরণের। হাত থাকতো মুঠোবদ্ধ অবস্থায়। আবার কোনোসময় হাত থাকতো বিশ্রাম ভঙ্গিতে বা অলঙ্কার জড়ানো অবস্থায়।

জাহাঙ্গীরের আমলে মুঘল চিত্রকলায় সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনশৈলীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।এমনকি বাদ যায়নি গ্রামীণ জীবনের দৃশ্যগুলিও। পাড় চিত্রণও জাহাঙ্গীরের আমলে বিকাশ লাভ করে। পাড় চিত্রণে জ্যামিতিক নকশা, পশুপাখি, লতাপাতা ইত্যাদিকে নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়। চিত্রকলার রীতিকে পারসিক প্রভাব থেকে ভারতীয় শিল্পে পরিণত করা জাহাঙ্গীরের সবচেয়ে বড়ো সাফল্য ও কৃতিত্ব। জাহাঙ্গীর যে একজন প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন তা আগেই বলেছি। প্রকৃতির প্রতি জাহাঙ্গীরের ভালোবাসা জাহাঙ্গীরকে সমাধিস্থ করে রেখেছে লাহোরের একটি সুন্দর বাগানে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার সমাধির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে এই প্রকৃতির আলো, বাতাস, বৃষ্টি ও শিশিরকণা’।

মুঘল চিত্রকলার শেষদিক:


জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহানও সৌন্দর্যপ্রিয় ছিলেন। শাহজাহানের আমলের বিখ্যাত চিত্রকর ছিলেন মীর হাসান, অনুপ, চিত্রা, চিত্রামণি। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বের বিখ্যাত চিত্র হোলো ‘শাহজাহাননামা‘ -র চিত্র অঙ্কন। কিন্তু পরবর্তীকালে সম্রাট ঔরঙ্গজেব চিত্রশিল্পের জন্য অর্থের খরচকে মোটেও ভালোচোখে দেখেননি। কারণ তিনি বিলাস, সৌখিনতা থেকে দূরে থাকতেন। ঔরঙ্গজেবের কাছে এগুলি ছিল ইসলাম বিরোধী। ধীরে ধীরে মুঘল চিত্রকলা তার জৌলুস হারিয়ে ফেলে। পরে সেই চিত্রশিল্পের দেখা পাওয়া যায় রাজপুতানায়। রাজপুত চিত্রশিল্প বিকাশলাভ করতে থাকে।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading