‘মহেশ’ গল্পের শেষে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত আছে তার স্বরূপ
জগদীশচন্দ্র বসুর ‘মহেশ’ গল্পের শেষে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা সমাজের নির্মম বাস্তবতা এবং তার বিপর্যয়কর ফলাফলের প্রতিফলন। গল্পের শেষে মহেশ এবং গফুর দুজনই নির্মম মৃত্যু বরণ করে, যা সমাজের নিষ্ঠুরতা ও সহানুভূতির অভাবকে প্রকট করে তোলে। এই মৃত্যু সমাজের অবক্ষয় এবং মানবিক সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার প্রতীক।
গল্পের সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের ইঙ্গিতগুলো বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো উদঘাটিত হয়:
- প্রতিবাদের মাধ্যমে আত্মধ্বংস: গফুর তার প্রিয় মহেশকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া ছিল, কিন্তু সমাজের অবহেলা ও নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সে একা কিছু করতে পারেনি। তার চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ পায় যখন সে মহেশকে আঘাত করে, যা মূলত গফুরের সমাজের প্রতি প্রতিবাদ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এটি তার ব্যক্তিগত জীবনের চরম অসহায়ত্ব ও হতাশার বহিঃপ্রকাশ।
- শোষণ ও বঞ্চনার চূড়ান্ত পরিণতি: গফুর এবং মহেশের মৃত্যু কেবল তাদের ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং তা সমগ্র গ্রামীণ সমাজের অর্থনৈতিক শোষণ ও সামাজিক বঞ্চনার পরিণতি। গফুরের মতো সাধারণ মানুষদের প্রতি সমাজের অবজ্ঞা ও সহানুভূতির অভাব গল্পের শেষে করুণ পরিণতির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
- বৈষম্যমূলক সমাজের বিপর্যয়: সমাজের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের দ্বারা দরিদ্রদের ওপর যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, তা শেষ পর্যন্ত সমাজেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গফুর এবং মহেশের মৃত্যুর মাধ্যমে গল্পে দেখা যায় যে, একটি বৈষম্যমূলক সমাজ মানবিকতাকে ধ্বংস করে দেয় এবং সেই সমাজের অমানবিকতা ও নিঃসঙ্গতাই শেষ পর্যন্ত সমাজকে দুর্বল করে তোলে।
সংক্ষেপে, ‘মহেশ’ গল্পের শেষে সমাজের অবক্ষয়, মানবিক মূল্যবোধের অভাব, এবং শোষণমূলক ব্যবস্থার বিপর্যয়কর পরিণতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই পরিবর্তনের ইঙ্গিত সমাজের বিরুদ্ধে একটি নীরব কিন্তু গভীর প্রতিবাদ, যা মানবিকতার মৃত্যু এবং সহানুভূতির অভাবে সমাজের অনিবার্য পতনের দিকে নির্দেশ করে।