মাইকেল মধুসূদন দত্তের অন্যতম কাব্য ‘ব্রজঙ্গনা কাব্য’। কাব্যটি ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। রাধার বিরহবিধুর চিত্তের এক আবেগঘন অবস্থা তিনি সৃষ্টি করেছেন এই কাব্যে। যদিও প্রথমে তিনি কাব্যটির নাম রেখেছিলেন ‘রাধাবিরহ’। এই রাধা বৈষুব পদাবলিতে চিত্রিত রাধা বা রাধার অনুকরণ নয়। এ-রাধা মধুসূদনের স্বনির্মিত রাধা। মধুসুদন নিজেই এই রাধা সম্পর্কে জানিয়েছেন-‘Poor lady of Braja’ তেমনি কাব্যটি রচনার একটি ইতিহাস আছে। প্রিয়বন্ধু ভূদেব মুখোপাধ্যায় একসময় মধুসূদনের কাছে জানিয়েছিল-“ভাই, তুমি ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃত্বের বংশীধ্বনি করিতে পার?” তিনি উত্তর দিয়েছেন এই কাব্য রচনা করে। রাধার প্রেমের পাশাপাশি বলাদেশের শ্যামল প্রকৃতির সহাবস্থান লক্ষ করা যায় এই কাব্যে। প্রেম-প্রকৃতির মিশ্রণে এক অনবদ্য ক্যানভাস এঁকেছেন মধুসুদন এই কাব্যে। ‘যমুনাতটে’ ও ‘নিকুঞ্জবনে’ পর্যায়ের কবিতাগুলিতে শ্রেষ্ঠত্বের প্রকাশ লক্ষ করা যায়। কাব্য পরিক্রমায় আমরা শুনতে পাই-“যে যাহারে ভালোবাসে, সে যাইবে তার পাশে/মদন রাজার বিধি লঙ্ঘিবে কেমন?” কবি মূলত রাধার হৃদয়চিত্তের দিকেই বিশেষভাবে নজর দিয়েছিলেন। মধুসূদন যেমন মহাকাব্য, পত্রকাব্যের অষ্টা; তেমনি বাংলায় তিনিই প্রথম ‘ওড’ জাতীয় কাব্যরচনা করেন। যার সূত্রপাত হয়েছিল ‘ব্রজঙ্গনা কাব্য’-এর মধ্যে দিয়ে। উনিশ শতকের নবজাগরণের পটভূমিকায় ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। আমাদের চিরকালীন রাধাকেই তিনি নতুনভাবে নির্মাণ করে নিলেন।