ভারতের রাজনীতিতে এক প্রধান শক্তি হিসেবে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি-র অবস্থান সুসংহত হয়েছিল ‘রথ যাত্রা’ নামে এক কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে।
উত্তরঃ এটি ছিল যাকে বলা হয় এক পরিকল্পিত ‘রাজনৈতিক নাটক’ – যার লক্ষ্য ছিল ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগণের মনে বিজেপির রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করা।
এই রথযাত্রার পরিকল্পনা করা হয়েছিল জঙ্গী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির এক প্রচারমূলক মিছিল হিসেবে। এর সংগঠক ছিলেন বিজেপির নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এটা চলবে কয়েক সপ্তাহ জুড়ে এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গা হয়ে মোট ৮ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পবিত্র শহর অযোধ্যা পর্যন্ত যাবে।
এই রথ যাত্রার মূল দাবি ছিল অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষে জনমত সংগঠিত করা। অযোধ্যা শহরের যে জায়গায় এই রামমন্দির নির্মাণের কথা বলা হয়, সেখানেই দেবতা রামচন্দ্রের জন্ম হয়েছিল বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করে। কিন্তু সেখানে মোগল সম্রাট বাবর ষোড়শ শতাব্দীতে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন – যার নাম বাবরি মসজিদ এবং এ কারণে জায়গাটি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের কাছেও পবিত্র।
পরিকল্পনা করা হয়, রথযাত্রা অযোধ্যায় পৌঁছানোর পর মি. আদভানি সেই বিতর্কিত স্থানটিতে রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
সে সময় সাংবাদিক হিসেবে সেই রথযাত্রা প্রত্যক্ষ করেছিলেন আর কে সুধামন। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে তার পর থেকে কিভাবে বিজেপির উত্থান হয়েছে তাও দেখেছেন তিনি। তিনি কথা বলেছেন বিবিসির ফারহানা হায়দারের সাথে।
মি. সুধামন তখন কাজ করতেন সংবাদ সংস্থা পিটিআইতে। পিটিআই সেই ১৩ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ রথযাত্রা কভার করতে পাঠিয়েছিল তাকে, এবং গুজরাটের সোমনাথ শহর থেকে যখন এই মিছিল শুরু হয়, সেদিন থেকেই সেই রখযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণ করেছিলেন তিনি।
“বিজেপির তখন এমন একটা রাজনৈতিক আইডিয়ার দরকার ছিল যাতে দলটি টিকে থাকতে এবং বিকশিত হতে পারে। অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের এই কর্মসূচি শুরু করা ছিল মি. আদভানির দিক থেকে এক মাস্টারস্ট্রোক। এর লক্ষ্য ছিল ক্ষমতায় যাবার জন্য ভারতের হিন্দু ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে আনা” – বলছিলেন মি. সুধামন।
রথযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন মি. আদভানি তিনি বসেছিলেন একটি ট্রাকে যাকে সাজানো হয়েছিল প্রভু রামচন্দ্রের রথের আকার দিয়ে।
ভোট পাবার জন্যই কি বিজেপি এভাবে ধর্মকে ব্যবহার করেছিল?
প্রশ্ন করা হলে মি. সুধামন বলেন, “হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। এটাই ছিল তাদের রাজনীতির প্রধান অবলম্বন।”
আন্দোলনের ইতিহাস শুরুর দিকে
দেশ স্বাধীন হলো 1947 সালে। অযোধ্যার শ্রী রাম জন্মভূমিতে রামলালা বিরাজমান হলেন (12-13 ডিসেম্বর, 1949) তৎকালীন প্রশাসন শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলো। হিন্দুসমাজ আদালতে যায়। রাম চবুতরা ও সীতা রসুইয়ে পূজার আরজি নিয়ে। যা এতদিন চলে আসছিল। আদালত তাদের প্রার্থনা অনুমোদন করেন। শ্রী রামের নিত্য পূজা শুরু হয়।
এর পরের বছর (1950 সাল) গোপাল সিংহ বিশারদ আদালতে যান আর্জি নিয়ে যে কেউ যদি রামলালার দর্শন, পূজা ও আরতী করতে আসে তাহলে কোন ব্যক্তিত্ব বা প্রশাসন যেন বাঁধা না দেয়। এর ফলে ব্যবস্থাপনার জন্য একজন প্রশাসনিক কর্তা নিযুক্ত হন। নির্মোহী আখড়া (1959) আদালতে দাবি তোলে যে তাদের শ্রীরাম জন্মভূমির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হোক সরকারি ব্যবস্থার বিলোপ ঘটিয়ে।এরপর (1961 সালের
18 ডিসেম্বর) উত্তর প্রদেশের সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড আদালতে যান তিন গম্বুজ যুক্ত ধাচাকে সর্বজনীন মসজিদ বলে ঘোষণা করার দাবি নিয়ে।
এরকম একটা মাহেন্দ্রক্ষণ (1964) শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথিতে সন্দীপন আশ্রম ও সাধনালয়ে বিশ্বহিন্দুপরিষদের স্থাপনা হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্থাপনা ও হিন্দুশক্তি জাগরণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
উত্তর প্রদেশের মোজাফফরপুর শহরে (1983) প্রথম হিন্দু সম্মেলন আয়োজিত হয়।হিন্দু নেতারা ( বিশেষ করে দাউ দয়াল খান্না) জনতাকে আহবান জানান অযোধ্যা, মথুরা ও কাশির মন্দির গুলিকে পুনরুদ্ধারের জন্য।এরপরই সন্তদের প্রথম ধর্মসংসদ সম্মেলন ( 1984 7-8 এপ্রিল) হয় দিল্লিতে। সেই সভায় সর্বপ্রথম শ্রীরাম জন্মভূমিকে মুক্ত করার ডাক দেওয়া হয়।
এরপর শুরু হয় জন-জাগরনের কর্মসূচি।সর্বপ্রথমে মুখ্য কর্মসূচি রাখা হয় শ্রীরাম জন্মভূমিতে লাগানো তালা খুলতে হবে এবং হিন্দু-সমাজকে অবাধে পূজা ও আরতির সুযোগ দিতে হবে। সীতামাঢ়িতে রাম-জানকী রথের পূজন হয়। এই রাম জানকী রব আনা হয় ( ১৯৮৪ , ৭ অক্টোবর) অযোধ্যার নদীতটে। রথকে সামনে রেখে হাজার হাজার রামভক্ত হাতে সরযু নদীর পূর্ণ বারি নিয়ে শপথ নেন, “শ্রীরাম জন্মভূমিকে মুক্ত করবেন, প্রয়োজনে প্রাণ দেবেন কিন্তু রামলালাকে দুর্দশা (বন্দি আছেন) থেকে মুক্ত করবেন।
বিজেপির হিন্দু নেতারা বলতেন, ভারতে তাদের ভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে খুব বেশি মাত্রায় আপোষ করা হয়েছে। তারা বলতেন, এখন সময় এসেছে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কথা বলার ।
মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগ বিজেপি অস্বীকার করতো, কিন্তু তাদের জনসভাগুলো থেকে লোকেরা ঠিক এই বার্তাটি নিয়েই ঘরে ফিরতো।
শুরু হয় অযোধ্যার রাম মন্দিরের আন্দোলন
রথযাত্রা দিয়ে রথ-আন্দোলনের পুরোধারা হলেন লালকৃষ্ণ আদভানি, অশোক সিঙ্ঘল(বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) ও অযোধ্যার হিন্দু তপস্বী পরমহংস রামচন্দ্র দাস। পরমহংস রামচন্দ্র দাস হলেন সেই ব্যক্তি যিনি অযোধ্যার বাবরি ধাচার কেন্দ্রীয় গম্বুজের ভিতরে রামলালার প্রতিমা স্থাপন করেন।
আর অশোক সিঙ্ঘল হলেন সেই কার্যকর্তা (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) যিনি রাম মন্দিরের আন্দোলনের বিষয়ে প্রথম ধর্মসংসদের(1984) আয়োজন করেন এবং সাধু-সন্ত-রামভক্ত-দর্শনার্থীদের একত্রিত করে রাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। লালকৃষ্ণ আদবানি ছিলেন রাম-জানকী রথের সারথির ভূমিকায়।
সুপ্রিমকোর্টে রাম জন্মভূমি
হাইকোর্টের জমি ভাগের রায় ন্যায়সঙ্গত ছিলনা। সুপ্রিম কোর্টে সনির্বন্ধ আবেদন করা হলে (ডিসেম্বর 2010) আবেদনের শুনানি দীর্ঘদিন ঝুলে রইল (জুলাই 2017)। মামলাটি কোর্টে উঠলো (সেপ্টেম্বর 2017)। সমস্যা দেখা দিল বহু ভাষাভিত্তিক (হিন্দি, উর্দু, সংস্কৃত, ফারসি ও পারসিক) দলিল দস্তাবেজ। যার ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ প্রয়োজন। কারণ সুপ্রিমকোর্টের কার্যক্রম ও ইংরেজি ভাষায়। উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার চারমাসে দস্তাবেজ (14 হাজার পৃষ্ঠা) অনুবাদ করে দেন।
আদালতে শুনানি শুরু হয় 29 শে অক্টোবর 2018। বিচারালয় মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে শুনানি স্থগিত রাখেন জানুয়ারি 2019 পর্যন্ত। বলা হয় পাঁচ সদস্যের বিচার পিঠ ওই মামলাটি শুনবেন। বার্তালাপ এর মাধ্যমে সমাধান সূত্র বের করার জন্য ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। 6 মাস সময় দেওয়া হয়। আদালত 6 আগস্ট থেকে আবেদনের নিয়মিত শুনানির আদেশ দেন। টানা 40 দিন ধরে শুনানীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। এই পর্ব চলাকালীন উভয় পক্ষের বার্তালাপ এর কথা ওঠে কিন্তু রামলালার পক্ষ এর বিরোধিতা করেন এবং পত্র দিয়ে জানিয়ে দেন। শুনানি শেষ হয় 16 ই অক্টোবর। বিচারালয় ঘোষণা করে যে চূড়ান্ত নির্ণয় সুরক্ষিত।
সুপ্রিম কোর্ট রায় ঘোষণা করেন 1045 পৃষ্ঠার 9 নভেম্বর 2019। বলা হয় শ্রীরামচন্দ্র বিতর্কিত স্থানেই জন্মেছেন। এ নিয়ে যুক্তি নয়; বিশ্বাস, আস্থা ও উপলব্ধি মুখ্য। হিন্দুরা স্মরণাতীত কাল থেকে রামচবুতরা ও সিতারসুইয়ে পূজার্চনা করে এসেছেন। বিতর্কিত ধাচার নিচে প্রাচীন মন্দিরের অবশেষ পাওয়া গেছে যা বিজ্ঞানভিত্তিক। যেটি উত্তর ভারতীয় হিন্দু ধর্ম পূজা মূলের পরিচয় বহন করে। সুতরাং সমগ্র রাম জন্মভূমি হিন্দুদের দেওয়া হল।
ভারত সরকারকে রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি ন্যাস ( কমিটি ) তৈরি করতে বলা হয় তিন মাসের মধ্যে। যার মধ্যে নির্মোহী আখড়াকেও নিতে বলা হয়। অযোধ্যার মধ্যে 5 একর জমি দিতে বলা হয় যেখানে মসজিদ নির্মাণ করা হবে।
রথযাত্রা
রাম-জানকী রথ লখনৌ পৌঁছায় 14 ই অক্টোবর। রথযাত্রা সঙ্গে সঙ্গে জনজাগরণ শুরু হয়। হিন্দু সমাজ ক্রমশই রথের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে। সমাজে আসতে থাকে পরিবর্তন, যা বিরাট হিন্দু জাগরণ রূপে প্রকাশ পায়।
দুর্ভাগ্যবশত এই সময়ে ( 1984 30 শে অক্টোবর ) তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী হঠাৎ খুন হন। সারাদেশ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। রাম-জানকী রথের যাত্রা এক বছরের জন্য স্থগিত রাখা হয় সাধুসন্তদের আগ্রহ অনুযায়ী করসেবা (1990 24 শে জুন) শুরু করার জন্য সনির্বন্ধ অনুরোধ করা হয় এবং সেই মতো ঠিক হয় (1990 30 শে অক্টোবর)। অযোধ্যায় পুতজ্যোতি জালানো হয়। “আরণী মন্থন” (কাঠের সাহায্যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয়) সাহায্যে। এই পুতময় অগ্নি সারা ভারতের গ্রামে গ্রামে পাঠানো হয়। ক্ষতির আশঙ্কায় আদালতের দ্বারস্থ হয় বাবরি মসজিদ একশন কমিটি।নানান ঘটনার ঘটনায় রাম ভক্তরা অযোধ্যায় জড়ো হতে থাকে। কারণ এই বার করসেবা শুরু হবে। যার তারিখ অনেক আগেই ঠিক ছিল (30 শে অক্টোবর)। এই করসেবায় নেতৃত্বে দেয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং সংঘ। ভারতজুড়ে শ্রীরাম রথযাত্রার ঐতিহাসিক মিছিলের গতিরোধ হয় বিহারে লালু প্রসাদের নেতৃত্বে। বলা হয় বিহার রাজ্যের শান্তিশৃঙ্খলাজনিত কারণে রথযাত্রা গতিরোধ। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিং যাদবের নির্দেশে করসেবকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের আদেশে অযোধ্যায় প্রবেশের সমস্ত পথ অবরুদ্ধ ছিল। পরিবহন এর সমস্ত যানবাহন, রেলগাড়ি, বাস ( সরকারি ও বেসরকারি) এবং মোটরগাড়ি বন্ধ যাতে কোনোভাবেই প্রবেশ না করতে পারেন। সারা শহর ও শহরতলীতে নাকাবন্দি করে দেয়া হয় যাতে করে ‘মাছিও না গলতে পারে’। সরকারের এই কঠোর আচরণ কিন্তু হিন্দুদের মনোবলকে দমন করতে পারেনি, বরং হাজার হাজার করসেবক তৈরি হন অযোধ্যার রাম জন্মভূমির জন্য প্রাণ দিতে।
করসেবকরা যাত্রা শুরু করেন, পুলিশ গুলি চালায় ( 2 নভেম্বর 1990)। করসেবকরা শহীদ হন ( সরকারি হিসাবে 10 বেসরকারি হিসাবে অনেক বেশি)। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কলকাতা নিবাসী দুই সহোদর ভাই শ্রীরাম কোঠারি ও শ্রীশরৎ কোঠারি।
দিনের শেষে সরকার বাধ্য হন করসেবকদের অনুমতি দিতে দর্শনের জন্য। কারণ করসেবকরা বদ্ধপরিকর ছিলেন, রামলাল আদর্শ না করে ফিরবেন না। সম্পূর্ণ নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও শান্তিপূর্ণ করসেবকদের উপর গুলি চালালে সত্যাগ্রহ শুরু হয় এবং রোজ শতাধিক মানুষ এতে যোগদান করেন। দিল্লির বোটক্লাবে ( 4 এপ্রিল 1991) এক বিশাল ভারত হিন্দু সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিশাল জনসমাবেশ 25 লক্ষ লোকের বেশি।
উপসংহার
রাম জন্মভূমির নিষ্পত্তি ভারতবর্ষের জন্য এক নতুন অধ্যায়। আজকের ভারতবর্ষের যখন জাতীয়তাবাদী বনাম বাম-ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির লড়াই চলছে তখন আরো একবার জাতীয়তাবাদীদের জয় হল। কারণ রাষ্ট্রকে কেবল ভূখণ্ড নয়। বরং ওই ভূমিতে জন্মগ্রহণকারী এক জনগোষ্ঠীর একাত্মতার ভাবনা। এই একাত্মতাই ইতিহাস, পরম্পরা ও সংস্কৃতির নির্মাতা। তাই ভারতীয়রা জাতীয়তাবাদী অহিংস এবং সহিষ্ণু। যার জন্য হিন্দুসমাজ সবাইকে মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে চলে।
ফলে এরা এরপরে কোন বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ও আক্রমণাত্মক ভাষা ও ভঙ্গি দেখা যায়নি। বাস্তবে এই রায়ে কেউ পরাজিত হয়নি কারণ শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির নির্মাণ মন্দির–মসজিদ নয় বা হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষ নয় –এটা সত্যের জয়।
বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যাশা অনেক। আমরা অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছি। আরো অনেক পথ যেতে হবে। প্রাচীন ঋষি বলেছিলেন “চরৈবেতি চরৈবেতি”। বর্তমান পৃথিবীর অশান্ত, যার ছায়া আমাদের দেশেও পড়ছে। রাস্ট্র বিমুখ শক্তি প্রকাশ পাচ্ছে। সুতরাং প্রয়োজন সদিচ্ছা, প্রয়োজন সাক্ষরতা, প্রয়োজন শুভবুদ্ধি এবং প্রয়োজন জন-হিন্দু জাগরণ। চাই বিকাশ ও উন্নয়ন। সুতরাং সেকিউলারবাদীদের খন্ডিত ভারতবর্ষে চাই না, চাই সকলের বিকাশ ও সৃজনশীল সমাজ। সুতরাং ভারত নির্মাণের কাজ (সঙ্গে মন্দির নির্মাণের কাজ) যত এগোবে, সমাজে মর্যাদা, বিকাশ, সমরসতা, স্থিতিশীলতা ও হিন্দু শৈলীতে জীবনযাপন ততই সুপ্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন প্রজন্ম পাবে শক্তি, বল ও সাহস। ভারত আবার জগৎসভায় ‘শ্রেষ্ঠ আসন লবে’।
শ্রীরাম জন্মভূমির আন্দোলনের ইতিহাস ও তার পরিণতি আরো একবার প্রমাণ করলো হিন্দু জনজাগরণ ও তার সংহতি ক্ষমতার উৎস।এই জনজাগরণ, সংহতি ও একতা সঠিকভাবে বজায় থাকলে ও দিশা পেলে ভারতবর্ষের ইতিহাস সহজেই নতুন করে লেখা যাবে যা এতদিন মূলত সেকুলার বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে এবং তারাও ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন।