ভারতের হিন্দি সিনেমনায় কিভাবে জাতীয়তাবাদ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেটা নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখ | ভারতে হিন্দি ছবিতে জাতীয়তা কীভাবে চিত্রিত হয় তা একটি প্রবন্ধ লিখুন

ভারতে বলিউড সিনেমা-র কাহিনীর প্রধান চরিত্রগুলোতে দেশের নিম্নবর্ণের মানুষের যে প্রায় কোনও ঠাঁই নেই, সেই তথ্যই বেরিয়ে এসেছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়।

ভারতের নামী সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’ আজ তাদের সংকলিত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানিয়েছে গত দুবছরে বলিউডে যে প্রায় তিনশো ছবি মুক্তি পেয়েছে তার মধ্যে মাত্র ছটি ছবিতে নায়কের চরিত্রে একজন নিচু জাতের বা অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষকে দেখা গেছে।

২০১৪ সালে মাত্র নটি হিন্দি সিনেমায় প্রধান চরিত্র ছিল একজন মুসলিম, অল্প কয়েকটিতে শিখ বা খ্রীষ্টানরা এবং স্পষ্টতই বলিউডের পক্ষপাত দেখা যাচ্ছে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের প্রতি।

বলিউড সিনেমার গল্পগুলোতে সমাজের কোন ধরনের বা কোন শ্রেনীর মানুষ প্রাধান্য পেয়ে থাকেন, তা নিয়েই এই গবেষণাটি করেছিল হিন্দু।

২০১৩ ও ২০১৪তে মুক্তি পাওয়া সব হিন্দি ছবির গল্প আর চরিত্রদের নাম ধরে ধরে বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছে, গত বছর মাত্র দুটো ছবিতে প্রধান চরিত্র ছিল পশ্চাৎপদ শ্রেণীর – মঞ্জুনাথ আর হাইওয়ে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ছবিটিতে নায়ক ছিল একজন গুজ্জর অপরাধী।

এছাড়া মাধুরী দীক্ষিতের ছবি গুলাব গ্যাং বা বাচ্চাদের ছবি হাওয়া হাওয়াইতে প্রধান চরিত্র নিচু জাতের হলেও হতে পারে – যদিও তা স্পষ্ট করে বলা নেই।

রিপোর্টের অন্যতম প্রণেতা, গবেষক উদ্ধব নাইগ বিবিসিকে বলছিলেন, ‘হিন্দি ছবিতে – বিশেষ করে বড় বাজেটের, বড় প্রোডাকশন হাউসের ছবিতে প্রায় অবধারিতভাবে গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে একটি পাঞ্জাবি, ধনী বা ব্যবসায়ী পরিবার – যারা হবেন উঁচু জাতের। নিচু জাতের লোকজনকে নিয়ে গল্প বলার চল বলিউডে নেই বললেই চলে।’
সমীক্ষায় যে তিনশোরও বেশি ছবি বিশ্লেষণ করা হয়েছে তোর একটিতে উপজাতীয় নারী, বক্সার মেরি কম প্রধান চরিত্রে এসেছেন।

দুটি ছবিতে প্রধান চরিত্র ছিল খ্রীষ্টান, নটিতে মুসলিম আর তিনটিতে নায়ক ছিল খ্রীষ্টান। বাদবাকি সব ছবিতেই প্রধান চরিত্র হিন্দু – এবং স্পষ্টত উঁচু জাতের হিন্দু।

‘মাই ব্রাদার নিখিল’ বা ‘বাস এক পলে’র মতো ছবির পরিচালক ওনির এখন দলিত এক কিশোরকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছেন, কিন্তু বলিউড যে উঁচু জাতের হিন্দুদের নিয়ে কাজ করতেই স্বচ্ছন্দ তা তিনি অস্বীকার করেন না।

অনিরের কথায়, ‘হিন্দি ছবির প্রধান বাজার এখনও কিন্তু হিন্দিভাষী উত্তর ভারত – যেখানে জাতপাত বা খাপ পঞ্চায়েতের রাজনীতি এখনও সরগরম। কাজেই ছবিতেও সেই উঁচু জাতের গল্পই প্রাধান্য পায়।’
তবে জাতপাতের বিভাজনের ভাষাভাষী অর্থনৈতিক বিভাজনেরও এখানে একটা ভূমিকা আছে। অনির যেমন বলছিলেন, ‘মাল্টিপ্লেক্সে যারা সিনেমা দেখতে যান তারা পয়সাওলা এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উঁচু জাতের। ফলে ফিল্ম নির্মাতারাও তাদের চেনা গল্প বলতেই বেশি ভালবাসেন!’

সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণীকে নিয়ে বহু সিনেমা করেছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তিনি বিবিসিকে বলছিলেন বাণিজ্যিক হিন্দু ছবির নির্মাতাদের কেন নায়ক-নায়িকার চরিত্রর জন্য উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দিকেই ঝুঁকতে হয়।

মি দাশগুপ্তর মতে, ‘এই পরিচালকরা ভাবেন নিচু জাতের নায়ক হলে ওভাবে গাইতে পারবে না, কিন্তু নিচু জাতের নায়িকা ওভাবে নাচতে পারবে না। অন্তত লোকের চোখে সেটা বিশ্বাসযোগ্য হবে না বলেই তাদের ধারণা!’
ভারতীয় সমাজে জাতি বা ধর্মের যা প্রকৃত অবস্থা – বলিউড যে তার সঠিক প্রতিফলন নয়, সেটা আগেও জানা ছিল এবং এই সমীক্ষাতেও তা আরও একবার প্রমাণিত হল।

কিন্তু হিন্দি ছবির দুনিয়ায় যতদিন বাণিজ্যিক সাফল্য আছে – ততদিন এই ইন্ডাস্ট্রির তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনও দায়ও নেই, এটাও সবারই জানা।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading