ভারতীয় আর্যভাষার উদ্ভব ও যুগবিভাগ-
পৃথিবীর ভাষাবংশগুলির মধ্যে সর্বপ্রধান হল ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাবংশ। ‘আর্য’ এখানে কোনো জাতি নয়-ভাষা। ম্যাক্সমুলার বলেছেন, “Aryan, in scientific language, is utterly inapplicable to race. It means language and nothing but language…” (Max Miiller Friedrich: ‘Collected Works’, New Impression, 1898, Vol. X, p. 90.)
সুতরাং, ইন্দো-ইউরোপীয়দের আদিভাষা অর্থে ‘আর্য’ শব্দটি গ্রহণযোগ্য। বর্তমানে অবশ্য ‘আর্য’ শব্দের অর্থবিস্তারের ফলে ‘আর্য’ শব্দে জাতিকেও বোঝানো হয়। মূল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী জাতির যে-একটি শাখা ভারত ও ইরানে চলে আসে, যাকে আমরা ইন্দো-ইরানীয় বলি, শুধু সেই শাখার লোকেরাই প্রথমে নিজেদের ‘আর্য’ বলে অভিহিত করতেন। পরে অর্থবিস্তার ঘটায়, সমগ্র ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের সব শাখার জাতিকেই ‘আর্য’ নামে অভিহিত করা হয়।
মূল ইন্দো-ইউরোপীয় বা মূল আর্যভাষায় লিখিত কোনো গ্রন্থ বা প্রত্নলিপি পাওয়া যায়নি। তাই এই ভাষার আদিরূপ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই। এই মূল ভাষা থেকে জাত প্রাচীন ভাষা বৈদিক সংস্কৃত, আবেস্তীয়, গ্রীক, ল্যাটিন ইত্যাদির তুলনামূলক আলোচনা করে মূল ভাষার একটি অনুমান-গঠিত রূপ তৈরি করা হয়েছে।
মূল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাভাষী আর্যজাতির একটি শাখা ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। একেই আমরা বলি ভারতীয় আর্যভাষা বা Indo-Aryan বা Indic Language। আনুমানিক ১৫০০ খৃ. পূর্বাব্দে ভারতে এই আর্যভাষার অনুপ্রবেশ ঘটে। আর্যরা অসংখ্য ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রথমে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে এবং পশ্চিম পাঞ্জাবে উপনিবিষ্ট হয়। পরে পূর্ব পাঞ্জাব, মধ্যদেশ ও উত্তরাপথের প্রাচ্য অঞ্চলে আর্যভাষার একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারতে অনুপ্রবেশের কাল থেকে আজ পর্যন্ত হিসেব করলে, এই আর্যভাষার বিস্তৃতিকাল প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর। এই সুদীর্ঘ বছরের ভাষা-ইতিহাসকে তিনটি প্রধান যুগে ভাগ করা হয়-
(১) প্রাচীন ভারতীয় আর্য (Old Indo-Aryan = OIA)
(২) মধ্য ভারতীয় আর্য (Middle Indo-Aryan = MIA)
(৩) নব্য ভারতীয় আর্য (New Indo-Aryan = NIA)
ভারতীয় আর্যভাষার বিভিন্ন যুগের কালগত সীমা, যুগগত নাম ও নিদর্শন নিম্নলিখিতভাবে উপস্থাপিত করা যায়। ডঃ রামেশ্বর শ’-এর ‘সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা’ গ্রন্থ [তৃতীয় সং., ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪০৩, আনন্দ,] অনুসরণে এই সারণি প্রস্তুত হয়েছে।