ভগবদগীতায় বর্ণিত নিস্কাম কর্মের ধারণাটি আলোচনা কর। Discuss the concept of niskama karma as stated in the Bhagavadgitä.

Table of Contents

ভগবদগীতায় নিস্কাম কর্মের ধারণা

ভগবদগীতা, যা হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় গ্রন্থ, সেই সঙ্গে একটি দার্শনিক পুস্তকও। এটি মহাভারতের অংশ এবং কৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি গূঢ় আলোচনার প্রতিফলন। এই আলোচনার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হল নিস্কাম কর্ম। নিস্কাম কর্মের ধারণা ভগবদগীতায় কেন্দ্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং এটি একটি গভীর দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা।

নিস্কাম কর্মের সংজ্ঞা

নিস্কাম কর্ম (অর্থাৎ ‘কর্মের প্রতি আকাঙ্ক্ষাহীনতা’) হল এমন কর্মযাত্রার ধারণা যেখানে কর্মের ফলাফল বা পুরস্কারের প্রতি কোনো আকাঙ্ক্ষা বা লোভ থাকে না। এটি কর্মের নিঃস্বার্থতা এবং কর্মের ফলাফলের প্রতি মনোযোগ না দেওয়ার আদর্শকে বোঝায়। নিস্কাম কর্ম হল এমন কর্ম যা স্রষ্টার প্রতি কর্তব্যপালনের উদ্দেশ্যে করা হয়, যার ফলস্বরূপ কোনও ব্যক্তিগত লাভ বা ক্ষতির চিন্তা করা হয় না।

ভগবদগীতায় নিস্কাম কর্মের ভূমিকা

ভগবদগীতায়, কৃষ্ণ অর্জুনকে নিস্কাম কর্মের গুরুত্ব বোঝান। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন যে, কর্মের ফলাফল সম্পর্কে চিন্তা না করে, নিজের কর্তব্য পালন করতে হবে। কৃষ্ণের মতে, কাজের প্রতি নিঃস্বার্থ মনোভাব থাকা উচিত, এবং শুধুমাত্র কর্তব্য পালনের উদ্দেশ্যেই কাজ করা উচিত। এই ধারণাটি সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ভগবদগীতার ৩.১৯ শ্লোকে:

তস্মাৎ স্বামীৎ করমণি অক্র্যূঃ কৃতা নিস্কাম সঞ্জীবনী।”

এখানে, কৃষ্ণ অর্জুনকে নির্দেশ দেন যে, কর্মের প্রতি নিঃস্বার্থতা (নিস্কামতা) এমন একটি গুণ যা অন্তর্দৃষ্টি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

নিস্কাম কর্মের মৌলিক উপাদান

  1. কর্মের প্রতি নিঃস্বার্থতা: নিস্কাম কর্মের মৌলিক উপাদান হল কর্মের প্রতি নিঃস্বার্থ মনোভাব। এখানে ব্যক্তিগত লাভ বা ক্ষতির চিন্তা করা হয় না। ব্যক্তি কাজ করে যাচ্ছে কেবলমাত্র নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য এবং ধর্মীয় আদেশ পালন করার জন্য।
  2. ফলাফলের প্রতি অমনোযোগ: নিস্কাম কর্মে কর্মের ফলাফলের প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। এটি বোঝায় যে, কর্মের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে চিন্তা না করে, কেবলমাত্র কর্মের প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত। ফলাফল সৃষ্টিকর্তার হাতে রয়েছে এবং এটি কি হবে তা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
  3. সত্যনিষ্ঠা ও কর্তব্যপালন: নিস্কাম কর্মের উদ্দেশ্য হল কর্তব্যপালন। এটি এমন একটি জীবনধারা যে, প্রতিটি কাজ সম্পাদিত হয় সৎ উদ্দেশ্যে এবং যথাযথভাবে।
  4. আধ্যাত্মিক উন্নতি: নিস্কাম কর্মের অনুশীলন আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সহায়ক। এটি একজন ব্যক্তির আত্মার উন্নয়ন ও মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয়। ব্যক্তিরা যখন নিজেদের কর্তব্যের প্রতি নিঃস্বার্থভাবে মনোনিবেশ করেন, তখন তাদের আধ্যাত্মিক জ্ঞান বৃদ্ধি পায় এবং তারা আরও গভীরভাবে আত্মার সঙ্গে যুক্ত হয়।

নিস্কাম কর্মের বাস্তব প্রয়োগ

নিস্কাম কর্মের ধারণা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে:

  1. পেশাগত জীবনে: কাজের প্রতি নিঃস্বার্থ মনোভাব রাখলে, কর্মজীবনে শান্তি ও সাফল্য আসতে পারে। কর্মের ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে, নিজস্ব কর্তব্যে মনোনিবেশ করলে কর্মক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  2. পারিবারিক জীবন: পরিবারে নিঃস্বার্থ মনোভাব বজায় রেখে পরিবারিক দায়িত্ব পালন করলে সম্পর্কগুলো শক্তিশালী হয়। ব্যক্তি শুধুমাত্র পরিবারে কর্তব্য পালন করেন এবং ফলাফল নিয়ে চিন্তা করেন না, যা সম্পর্কের মাধুর্য বাড়ায়।
  3. সামাজিক দায়িত্ব: সমাজসেবা ও সমাজিক দায়িত্ব পালন করার সময় নিঃস্বার্থ মনোভাব রাখলে সমাজের উন্নতি হয়। এখানে ব্যক্তি শুধুমাত্র সেবার উদ্দেশ্যে কাজ করেন, যা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সহায়ক হয়।

উপসংহার

ভগবদগীতায় নিস্কাম কর্মের ধারণাটি আত্মসাধনার, আধ্যাত্মিক উন্নতির, এবং জীবনের সকল কাজের প্রতি এক ধরনের সৎ এবং নিঃস্বার্থ মনোভাব প্রদর্শন করে। এটি ব্যক্তির অন্তর্দৃষ্টি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নিস্কাম কর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি কর্মের প্রতি এক ধরনের স্বর্গীয় মনোভাব রাখতে পারে, যা আধ্যাত্মিক উন্নতি, সামাজিক সম্পর্ক, এবং ব্যক্তিগত শান্তির জন্য সহায়ক হতে পারে। ভগবদগীতার এই শিক্ষা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, যা আমাদের একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ জীবন লাভ করতে সহায়ক হবে।

ব্রাহ্মণের উপনিষদীয় ধারণা আলোচনা কর

বেদ শব্দটির অর্থ কী? বেদের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর

আমাদের ব্যবহারিক জীবনে ভগবদগীতার গুরুত্ব কী

চতুর্বর্ষম মায়া স্রোলান্ গুণকর্মবিগ্যাস্কল” ৪(১৩) ভগবদগীতা অনুসরণের উপরের শ্লোক 

কর্ম এবং ভক্তি কিভাবে সম্পর্কিত

ভগবদগীতা অনুসারে কর্মযোগের অর্থ কী

আপনারমতে আরমানের টার্লি স্টেজ কি?

স্প্যানিয়ার্ডদের মধ্যে যুক্তির প্রকৃতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত নোট লেখ 

সপ্রাপঞ্চ ব্রাহ্মণ এবং নিস্প্রাপঞ্চ ব্রাহ্মণের মধ্যে পার্থক্য করুন

ভারতীয় দর্শনের ভিত্তি হিসেবে এল’এডাসের গুরুত্ব আলোচনা কর

ভগবদগীতায় বর্ণিত নিস্কাম কর্মের ধারণাটি আলোচনা কর।

B.A 1ST SEM MAJOR PHILOSOPHY SHORT QUESTION ANSWER 2023

Share

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading