বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট সম্পর্কে যা জান লেখ।

প্রাক উপনিবেশিক ভারতে চিত্রকলা উপনিবেশিক আমলের তুলনায় ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতো। সেই সময় গ্রন্থ বা পুথি অলংকার সহ মন্দির গাত্র মাটির বাড়ির দেয়াল ইত্যাদি ছবি করার মতো কাজে চিত্রশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার পরিলক্ষিত করা হয়। তবে ভারতে ব্রিটিশ শাসন শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার এ দেশে প্রকৃতি ও মানুষের সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার জন্য যেমন চিত্রকলাকে ব্যবহার করতে শুরু করে। তেমনি এদেশের মানুষের সাংস্কৃতিকে জানা ও বোঝার জন্য চিত্র কলা ব্যবহার হতে থাকে। আর এ ধরনের অংকনের জন্য মূলত দেশীয় শিল্পীদেরকে প্রথম যুগে ব্যবহার করা হলেও তাদের উপর তদারকি করার জন্য নয় চিত্র অংকনের জন্য ইউরোপীয় চিত্র দিয়ে নিযুক্ত করা হতো।

এর ফলে ভারতীয় এবং ইউরোপীয় চিত্রশিল্পীদের মধ্যে শৈল্পিক আদান প্রদান চলতে থাকে যার মধ্যে দিয়ে জন্ম নেই “কোম্পানি স্কুল অফ পেইন্টিং”। এই ধারার অঙ্কিত চিত্রগুলি কেবল ভারতের নয় ইংল্যান্ডে ও জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের ক্যামেরার ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারা চিত্রগুলি তাদের জনপ্রিয়তা হারায়। আর ইংরেজদের প্রতিষ্ঠিত আর স্কুল থেকে পাশ করা শিল্পীদের অঙ্কিত তৈল চিত্রগুলি জনপ্রিয় হতে শুরু করে। এই ধারার চিত্রশিল্পীদের মধ্যে অন্যতম ছেলের রাজা রবি বর্মা।

বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট শব্দটি সম্পূর্ণ যথাযথ নয় কারণ বাংলায় প্রথম আধুনিক জাতীয় ভাবধারার অনুপ্রাণিত আকার স্কুল খোলার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাকে বল বাঙ্গালীদের একক প্রয়াস ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল একটি শিল্প আন্দোলন যার জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা শহরে। তবে কলকাতার শুরু হলেও এই আন্দোলন দেখে বিভিন্ন বড় শহরসহ বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়েছিল যার মধ্যে অন্যতম ছিল শান্তি নিকেতন যেখানে স্বদেশী আন্দোলনের সময় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের প্রথম জাতীয় আর্ট স্কুল।

এ কাজে অবনীন্দ্রনাথ একইসঙ্গে ব্রিটিশ সরকার ও কলকাতার সরকারি স্কুলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ই বি হাবেল উপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা ও ভারতীয় সংস্কৃতির উপর আরোপিত অংকন সংস্কৃতির শৈল্পিক সমালোচক। তারা ভারতীয় সংস্কৃতির জাত একটি নতুন শিল্প শৈলী গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন আর এক্ষেত্রে তারা উপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা শৈলীর তুলনায় মুঘল ও পাহাড়ি চিত্রকলার উপর অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর:
১৮৯৬ সালটি ভারতীয় ভিসুয়াল হিস্ট্রির ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বছরগুলি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ই বি হাভেল ভিসুয়াল আর্টস এক্ষেত্রে ভারতীয় আদর্শ অনুযায়ী ভারতীয় চিত্রকলা নতুন রূপ নিয়ে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। যা কলকাতা সরকারি আর্টস স্কুল থেকে বাস্তবায়িত হতে শুরু করে পরে অনুরূপ আর্টস স্কুল লাহোর, বোম্বাই ও মাদ্রাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যদিও তাদের মূল লক্ষ্য চিত্রকলা ছিল না ছিল বস্তুগত শিল্প দ্রব্য তৈরি কিন্তু কলকাতার অবস্থিত আর্টস স্কুল মূলত চিত্রকলার ভারতীয়করণ বা বলা ভালো ভারতীয় দর্শন ও সংস্কৃতি নির্ভরশিল্প দ্রব্য সৃষ্টির ক্ষেত্রেই হয়েছিল।

ভারতীয় আদর্শ অনুযায়ী চিত্রকলার ভারতীয়করণ ঘটানোর ক্ষেত্রে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত মুঘল রাজপুত চিত্রশৈলীর সঙ্গে অজান্তার চিত্রশিল্পের সার্থক সংমিশন ঘটান। প্রখ্যাত শিল্প ঐতিহাসিক পার্থ মিত্র লিখেছেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ভারতীয় চিত্রকলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিককে পুনঃ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। যা ভারতীয়দের মধ্যে তাদের চিত্রশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতার বিকাশ ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে আর এদের সম্মিলিত উদ্যোগে বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টস ভারতীয় চিত্রকলার ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের জন্মদিন যা সমসাময়িক সদস্য আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছিল।

Share
error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading