বুদ্ধির সংজ্ঞা:
বুদ্ধিমত্তা একটি বিমূর্ত ধারণা। মনোবিজ্ঞানীরা তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন। মনোবিজ্ঞানী পিন্টার বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞাকে ৪টি বিভাগে ভাগ করেছেন। এইগুলো–
1) জৈবিক সংজ্ঞা: এই সংজ্ঞাগুলি অভিযোজনের উপর জোর দেয়।
মনোবিজ্ঞানী স্টার্ন বলেন, “বুদ্ধিমত্তা হল জীবনের নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার সাধারণ মানসিক ক্ষমতা।”মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ডস বলেছেন, “বুদ্ধিমত্তা হল নমনীয় এবং বহুমুখীভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা।”
মনোবিজ্ঞানী ওয়েলসের মতে, “বুদ্ধিমত্তা হল যেভাবে মস্তিষ্ক আমাদের আচরণকে নতুন পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় পুনর্গঠিত করে।”
2) শিক্ষামূলক সংজ্ঞা: এখানে জোর দেওয়া হয় ব্যক্তির শেখার ক্ষমতার উপর।
মনোবিজ্ঞানী হলিংসওয়ার্থের মতে, “একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার প্রয়োজন অনুযায়ী শেখে।”
মনোবিজ্ঞানী বাকিংহাম বলেছেন, “বুদ্ধিমত্তা হল শেখার ক্ষমতা।”
শিক্ষক ডিয়ারবর্নের মতে, “বুদ্ধিমত্তা হল শেখার বা অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষার সুবিধা নেওয়ার ক্ষমতা।”
3) মনস্তাত্ত্বিক সংজ্ঞা: কিছু মনোবিজ্ঞানী বুদ্ধিমত্তাকে মানসিক ক্ষমতা বা গুণ হিসাবে বিবেচনা করেন।
মনোবিজ্ঞানী বিনেট বলেন, “বুদ্ধিমত্তা বলতে বোঝায় মানুষের উপলব্ধির সম্পূর্ণতা, আবিষ্কারের শক্তি, একাগ্রতা এবং বিচার।”
মনোবিজ্ঞানী টারম্যান ব্যাখ্যা করেন, “বুদ্ধি হল বিমূর্তভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা।”
মনোবিজ্ঞানী উড্রো বলেছেন, “বুদ্ধিমত্তা হল একটি সর্বজনীন ক্ষমতা যা অন্যান্য মাধ্যমিক ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করে।”
4) পরীক্ষামূলক সংজ্ঞা: এই সংজ্ঞাগুলি পরীক্ষামূলক ফলাফলের উপর জোর দেয়।
মনোবিজ্ঞানী থুরাটন বলেছেন, “বুদ্ধি হচ্ছে বিচার ও ত্রুটির মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করার ক্ষমতা।”
মনোবিজ্ঞানী সি. বার্টের মতে, “জৈব-মনস্তাত্ত্বিক সংস্থাকে পুনর্বিন্যাস করে তুলনামূলকভাবে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার ক্ষমতা হল বুদ্ধিমত্তা।”
মনোবিজ্ঞানী থর্নডাইক ব্যাখ্যা করেন, “বুদ্ধিমত্তা হল প্রাসঙ্গিক কারণের প্রতি আদর্শিকভাবে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা।”
বুদ্ধিমত্তার সমস্ত স্পষ্ট সংজ্ঞার পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এই সংজ্ঞাগুলির মধ্যে কোনও পরস্পরবিরোধী সম্পর্ক নেই। এইভাবে, জৈবিক সংজ্ঞা মানুষের অভিযোজনের উপর জোর দেয়। অন্যদিকে, শিক্ষাগত সংজ্ঞা শেখার ক্ষমতার উপর জোর দেয়। যা এক প্রকার অভিযোজন। অন্য কথায়, উভয় শব্দ একই। তদ্ব্যতীত, মনস্তাত্ত্বিক সংজ্ঞা মানসিক ক্ষমতা বিবেচনা করে। যেখানে প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ বিদ্যমান। এবং অভিজ্ঞতামূলক সংজ্ঞায় বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন। অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞাগুলো পরস্পর যুক্ত।
বুদ্ধির বৈশিষ্ট্য:
বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে, বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানী বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের তালিকা তৈরি করেছেন। এই তালিকায় মনোবিজ্ঞানী জি.ডি. Stoddard এর 9 টি উপসর্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এইগুলো—
i অসুবিধা: বুদ্ধিমত্তা উপাদানের অসুবিধার উপর ভিত্তি করে চিন্তা করার ক্ষমতা বিকাশ করে এবং মানসিক শক্তির কার্যকারিতা বাড়ায়।
II। জটিলতা: বুদ্ধিমত্তা একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া। কারণ একই সমস্যা সমাধানের অনেক উপায় রয়েছে।
iii. বিমূর্ততা: বুদ্ধিমত্তার কোনো নির্দিষ্ট রূপ বা আকৃতি নেই। এটি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এটি বিমূর্ত।
iv. সীমিত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা (ক্ষমতা): বুদ্ধিমত্তা সীমিত প্রতিক্রিয়া আছে যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য।
V. লক্ষ্যবস্তু অভিমুখীকরণ: বুদ্ধি সাধারণত লক্ষ্য বস্তুর দিকে অভিমুখী হওয়ার ইচ্ছা তৈরি করে।
VI. সামাজিক মূল্যবোধ: ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদির মতো সামাজিক সিদ্ধান্ত বিবেচনা করে যৌক্তিক মূল্যবোধ তৈরি করা হয়।
অবশেষ
vii. সৃজনশীলতার উত্স: বুদ্ধিমত্তা ব্যক্তি এবং শিশুর সৃজনশীল শক্তিকে জাগ্রত করে এবং উদ্ভাবনের জন্য স্থান দেয়।
viii. একাগ্রতা: একাগ্রতা বুদ্ধিমত্তার একটি গুণ। যার মাধ্যমে একজন মানুষ মনোনিবেশ করতে পারে। আর একাগ্র ব্যক্তির কাজ সহজ।
ix. মানসিক প্রতিরোধ: রাগ, ভয়, সাহস, হীনমন্যতা, হতাশা, দুঃখ ইত্যাদি আবেগকে বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সুতরাং, এই ধারণা অনুসারে, বুদ্ধিমত্তা হল ঘনত্বের সাথে কঠিন বিমূর্ত জটিল পরিস্থিতিতে বিষয়গত শক্তির বাধা অতিক্রম করার এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে মোট সামাজিক মূল্যের সৃজনশীল কাজ সম্পাদন করার ক্ষমতা।
বুদ্ধির প্রকৃতি:
প্রতিটি শিশু তার নিজস্ব ব্যক্তিত্ব নিয়ে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে যা তার পরবর্তী কাজের গুণমান নির্ধারণে সহায়তা করে। এই সারাংশ স্বাভাবিক এবং স্বাভাবিক। মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন বুদ্ধিমত্তা।
প্রতিটি শিশু নিজস্ব সত্বা নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণ করে যা তার পরবর্তিতে কাজের মান নির্ধারণে সাহায্য করে। এই সত্বাটি সহজাত এবং সাধারণধর্মী। মনোবিদরা এর নাম দিয়েছেন বুদ্ধি। এর প্রকৃতি বা স্বরূপ হল:
a. বুদ্ধি সহজাত এবং সাধারণধর্মী মানসিক ক্ষমতা।
b. এটি স্নায়ুতন্ত্র নির্ভর হলেও দৈহিক প্রক্রিয়া নয়।
c. বুদ্ধি সর্বজনীন ক্ষমতা যা অন্যান্য গৌণ ক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করে।
d. বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান, দক্ষতা এবং কৌশল অর্জনে বুদ্ধি সাহায্য করে। N.R.C-Edu-Sk.M.Ali
e. বুদ্ধি একাধিক বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সাহায্য করে।
f. ইহা বিমুর্ত চিন্তনের ক্ষমতা।
> i. অতীত অভিজ্ঞতার দ্বারা বুদ্ধি বর্তমান পরিস্থিতিকে বিচার বিশ্লেষণ করে।
h. বুদ্ধি নিজস্ব সাধারণ ক্ষমতা। তাই সকল মানুষের মধ্যে বুদ্ধি সমপরিমান থাকে না।
l. কমসময়ে একাধিক সমস্যার সমাধানে বুদ্ধি নতুন নতুন পরিস্থিতির অভিযোজনের কৌশল দিয়ে থাকে।
>j. বুদ্ধি মানুষ ছাড়াও একাধিক প্রাণীর মধ্যে রয়েছে।
>k. বুদ্ধি প্রয়োজনমতো প্রবৃত্তি এবং প্রক্ষোভকে সংযত করে। যা কোন উদ্দেশ্য পুরণের জন্য কর্মশক্তিকে নিযোগ করতে সমর্থ হয়।
সুতরাং, বুদ্ধি হল এমন একটি বিকাশধর্মী প্রক্রিয়া। যা ব্যক্তিকে বিমূর্ত চিন্তনে, সম্বন্ধস্থাপনে এবং উন্নত মানসিক ক্রিয়া সম্পাদনে সহায়তা করে। তাই বুদ্ধি ছাড়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে সংহতিবিধান একেবারেই অসম্ভব।