বীরাঙ্গনা’ কাব্যে রামায়ণের কোন্ কোন্ চরিত্র
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বীরাঙ্গনা‘ কাব্যে রামায়ণের বিভিন্ন চরিত্র স্থান পেয়েছে, তবে এই কাব্যের মূল কেন্দ্রে যে চরিত্রগুলো উঠে আসে, সেগুলি হলো—সীতা, রাবণ, লক্ষ্মণ, রাম, শূর্পণখা এবং তারা। রবীন্দ্রনাথ তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা ও কাব্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই চরিত্রগুলিকে পুনর্লিখন করেছেন এবং বিভিন্ন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তাদের গঠন করেছেন।
এই কাব্যে সীতা এবং তার বীরত্বের ভূমিকা অন্যতম প্রধান বিষয়। তবে কাব্যটির যে পত্রে সীতা চরিত্রকে কেন্দ্র করে গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে, সেটি হলো “সীতা“ পত্র।
“সীতা” পত্রের ভাববস্তু বর্ণনা
‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের “সীতা“ পত্রে, সীতা চরিত্রের ভেতর থেকে তার দুঃখ, সংগ্রাম, মানসিক শক্তি এবং প্রাধান্য তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সীতা কোনও সাধারণ নারী চরিত্রের মতো নয়, বরং তিনি এক স্বতন্ত্র বীরাঙ্গনা, যিনি জীবনের চরম সংকটের সম্মুখীন হয়ে এগিয়ে যান। এই পত্রে সীতার বেদনা এবং তার সংগ্রামের অভ্যন্তরীণ পৃথিবীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ভাববস্তু:
সীতা, রাম এবং তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে এক অনন্য দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছে। কবি সীতার মধ্যে রামের প্রতি অগাধ প্রেম এবং তার প্রতি শ্রদ্ধার অনুভূতি ফুটিয়ে তুলেছেন, কিন্তু একই সঙ্গে তাকে তার অসহ্য কষ্ট ও পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে ভেতর থেকে শক্তি অর্জন করতে দেখানো হয়েছে। সীতা জানেন যে তাকে এক নির্দিষ্ট আদর্শের অনুসরণ করতে হবে, তবে তার এই আদর্শের পথ যেন তাকে এক কঠিন পথে নিয়ে যায়।
কাব্যে সীতার দুঃখ শুধু তার নিজস্ব নয়, বরং প্রতিটি নারী চরিত্রের দুঃখ এবং তার সংগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করে। সীতা যেমন রাবণের অপমান সহ্য করেছেন, তেমনি তাঁর আত্মমর্যাদার প্রশ্নেও এক কঠিন লড়াই চালিয়েছেন। কবি সীতার মানসিক শক্তির প্রসঙ্গ তুলে তাকে ‘বীরাঙ্গনা’র মতো একটি ভূমিকার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বিচ্ছেদের অনুভূতি:
সীতা তার স্বামী রামের সঙ্গে বিচ্ছেদের যন্ত্রণা অনুভব করছেন, তবে তাকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়তে দেখা যায় না। বরং তিনি এক ধরনের শক্তি অর্জন করেন, যা তার আত্মবিশ্বাস এবং নৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও দৃঢ় করে তোলে। এই সীতার চরিত্রের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ নারীর শক্তির, তাঁর সম্মানের, এবং পরিপূর্ণ আত্মমর্যাদার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
উপসংহার:
‘বীরাঙ্গনা’ কাব্যের “সীতা“ পত্রে সীতার চরিত্রের গভীরতা এবং বীরত্ব কাব্যিক শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। সীতা শুধু একটি অসহায় নারী নয়, তিনি এক শক্তিশালী চরিত্র, যিনি শুধুমাত্র নিজের দুঃখই অনুভব করেন না, বরং তার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমস্ত নারীর শৌর্য ও মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেন।