বিপন্ন ভাষা কাকে বলে?
বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা একটি ভাষা । একটি ভাষা বিপন্ন হওয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে তুলনামূলকভাবে অল্প সংখ্যক বক্তা, ভাষীর সংখ্যা হ্রাস, এবং একটি নির্দিষ্ট বয়সের উপরে বক্তারা (অর্থাৎ, শিশুরা ভাষা শিখছে না)।
বিপন্ন ভাষা:
বিপন্ন ভাষা (Endangered Languages) এমন ভাষাগুলিকে বোঝায় যেগুলির প্রয়োগ ও টিকে থাকার সম্ভাবনা হুমকির মুখে রয়েছে। বিপন্ন ভাষা সাধারণত ভাষার সংখ্যাগরিষ্ঠতা, ভাষার ব্যবহারের ক্ষেত্র, এবং ভাষার শিক্ষার জন্য উত্সাহের অভাবের কারণে সংকটে পড়ে। বিপন্ন ভাষার সংরক্ষণ একটি আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন বিষয় এবং অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ।
বিপন্ন ভাষার শ্রেণীবিভাগ:
বিপন্ন ভাষাগুলিকে সাধারণত বিভিন্ন স্তরের ঝুঁকির ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়:
জীবিত ভাষা (Vulnerable):
এই ভাষাগুলি বর্তমানে কিছু মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে, তবে প্রজন্মের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষার ব্যবহার কমে যেতে পারে।
উদাহরণ: কানাডার ক্রী ভাষা।
ঝুঁকিতে থাকা ভাষা (Endangered):
এই ভাষাগুলির ব্যবহার কমে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
উদাহরণ: উত্তর আমেরিকার নাভাহো ভাষা।
প্রায়-বিলুপ্ত ভাষা (Moribund):
ভাষার নতুন প্রজন্মের সদস্যরা ভাষা ব্যবহার করছে না বা খুবই কম ব্যবহার করছে।
উদাহরণ: ওস্ট্রেলিয়ার বাওগা ভাষা।
বিলুপ্ত ভাষা (Extinct):
ভাষার কোনও জীবিত বক্তা নেই এবং ভাষার পুনরুদ্ধার কার্যত অসম্ভব।
উদাহরণ: লাতিন ভাষা (যদিও এটি ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়, তবুও দৈনন্দিন ব্যবহারে এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে)।
বিপন্ন ভাষার কারণসমূহ:
1. ভাষার শিখন ও শিক্ষার অভাব:
নতুন প্রজন্ম ভাষা শিখছে না বা ব্যবহার করছে না।
2.ভাষার প্রতিস্থাপন:
এক ভাষা অন্য ভাষার দ্বারা প্রতিস্থাপন হচ্ছে, যেমন একটি জাতীয় ভাষার প্রভাব বেড়ে যাচ্ছে।
3.সাংস্কৃতিক প্রভাব:
গ্লোবালাইজেশন এবং আধুনিক সংস্কৃতি স্থানীয় ভাষার ওপর প্রভাব ফেলছে।
4. আর্থিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ, নীতি বা সরকারি সহায়তার অভাব।
5.শিক্ষার অভাব:
ভাষার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা।
বিপন্ন ভাষার সংরক্ষণ
বিপন্ন ভাষার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়:
1. ভাষার ডকুমেন্টেশন:
ভাষার তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা।
উদাহরণ: ভাষার শব্দকোষ, ব্যাকরণ, এবং কথোপকথন রেকর্ড করা।
2. ভাষা শিক্ষার কার্যক্রম:
ভাষার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান।
উদাহরণ: ভাষার পাঠ্যক্রম তৈরি করা, ভাষা শিক্ষা ক্লাস পরিচালনা করা।
3. মিডিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রচার:
ভাষার মাধ্যমে মিডিয়া সামগ্রী তৈরি করা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা।
উদাহরণ: ভাষায় বই, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন শো তৈরি করা।
4.কমিউনিটি এনগেজমেন্ট:
স্থানীয় সম্প্রদায়কে ভাষার সংরক্ষণে যুক্ত করা।
উদাহরণ: ভাষার শিক্ষা কর্মসূচি, সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি।
5.আইন ও নীতিমালা:
ভাষার সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য সরকারী নীতি ও আইন প্রণয়ন।
উদাহরণ: রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি প্রদান, ভাষার জন্য বিশেষ তহবিল সৃষ্টি।
বিপন্ন ভাষার উদাহরণ
1. উত্তর আমেরিকার চিপেওয়া ভাষা:
এটি একটি স্থানীয় ভাষা যা বর্তমানে খুবই বিপন্ন।
2. অস্ট্রেলিয়ার টাঙ্গা ভাষা:
একটি বিপন্ন ভাষা যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবহার কমে যাচ্ছে।
3.ইউরোপের কেল্টিক ভাষা:
কিছু কেল্টিক ভাষা যেমন কোর্নিশ এবং গ্যালিক বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে।