বাংলা হাস্যরসাত্মক গল্পধারার একটি রূপরেখা নিম্নলিখিতভাবে তৈরি করা যেতে পারে:
১. প্রাচীন কালের হাস্যরস
- মহাকাব্য ও পৌরাণিক হাস্যরস: প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে হাস্যরস প্রায়ই মহাকাব্য ও পৌরাণিক কাহিনীর অংশ হিসেবে দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ‘অভিনন্দন’ বা ‘গল্পসঙ্গী’ প্রভৃতি পুরনো কাব্যগ্রন্থে হাস্যরসের প্রয়োগ।
২. ঊনবিংশ শতাব্দীর হাস্যরস
- সাহিত্যের প্রচলন: ১৯শ শতকের শুরুতে বাংলা সাহিত্যকে হাস্যরসের নতুন মাত্রা দেন রামেশ্বর বিদ্যাবাগীশ ও শশীভূষণ মুখোপাধ্যায়। এ সময় হাস্যরসের মূল বিষয় ছিল সামাজিক কটাক্ষ ও চরিত্রের হাস্যকর দিক।
৩. বিংশ শতকের হাস্যরস
- ক্লাসিক হাস্যরসের উন্মেষ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সেলিনা হোসেন, মুনীর চৌধুরী প্রভৃতি লেখকরা তাদের রচনায় হাস্যরসের বিশেষ ধরণ প্রবর্তন করেন। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলিতে যেমন “বিষাদ সিন্ধু” ও “প্রথম বিস্ময়” হাস্যরসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে।
৪. আধুনিক বাংলা হাস্যরস
- আধুনিক হাস্যরসের বৈশিষ্ট্য: হাস্যরসাত্মক গল্পের আধুনিক ধারা বেড়ে ওঠে ১৯৪০-এর দশক থেকে, যেখানে হাস্যরসের কৌশলগুলো আরও বৈচিত্র্যময় এবং সমাজের বিভিন্ন দিককে কেন্দ্র করে তৈরি হয়।
- বিখ্যাত লেখক: হুমায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি লেখক আধুনিক হাস্যরসের নতুন পথিকৃৎ।
৫. হাস্যরসের ধরণ
- বৈষম্য এবং চরিত্রের বৈপরীত্য: হাস্যরসের মূল বিষয় হল চরিত্রের বৈপরীত্য ও সামাজিক বৈষম্য। হাস্যকর চরিত্রের সংকট, অদ্ভুত আচরণ এবং বিশ্রী পরিস্থিতি হাস্যরসের মূলে।
- সামাজিক কটাক্ষ: সামাজিক অবস্থার প্রতি বিদ্রূপ এবং সমালোচনা, যা হাস্যরসের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৬. বিশেষ উদাহরণ
- জীবনানন্দ দাশ: আধুনিক হাস্যরসের বিশেষ ধারায় জীবনানন্দ দাশের কিছু হাস্যরসাত্মক রচনা এবং কবিতা।
- মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: হাস্যরসের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা ও চরিত্রের গভীরতা বিশ্লেষণ।
৭. হাস্যরসের প্রভাব ও পর্যালোচনা
- সমাজ ও সাহিত্য: হাস্যরসাত্মক গল্পগুলো সমাজে সুখাদ্য সৃষ্টি করে এবং পাঠকদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বাড়ায়।
- বহুবিধ রূপ ও আঙ্গিক: গল্পের হাস্যরসের বিভিন্ন আঙ্গিক যেমন ফারসি, বাঙালি, এবং আধুনিক শহুরে পরিবেশে প্রকাশিত হয়েছে।
সংক্ষেপে, বাংলা হাস্যরসাত্মক গল্পধারা সামাজিক প্রতিকূলতা, চরিত্রের বৈপরীত্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে হাস্যরসের মাধ্যমে উদঘাটিত করে এবং এটি সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত।