বিদ্রোহী কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলাম পরিচিত। তাঁর কাব্যে সর্বদা বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের সুর ধ্বনিত হয়েছে। সামাজিক শোষণ, অত্যাচারের বিরুদ্ধে তাঁর কলম গর্জে উঠেছে। সমাজের নানা ধরনের ভণ্ডামির মুখোশ তিনি খুলে দিয়েছেন। ব্রাহ্মণ্যশাসন, মৌলবাদী অত্যাচার, শাসকের রক্তচক্ষু, ইংরেজ সরকারের নানা জুলুমবাজি, সাধারণ মানুষকে শোষণ, কৃষক-শ্রমিককে সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত করা-সমস্ত শোষণ, ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন কবিতার মধ্যে দিয়ে। কবিতা লেখার জন্য জেল খেটেছেন। ফলে তিনি তো লৌহকপাট ভেঙে দেবার ডাক দেবেন-ই। জীবনের প্রথম কবিতা ‘বিদ্রোহী’। প্রথম থেকেই তিনি প্রবলভাবে সমস্ত নঞর্থক, অপকর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। শিল্প সম্পর্কে নিজেই বলেছেন-“স্রষ্টাতে আমি দেখিনি কিন্তু মানুষকে দেখেছি। এই ধূলিমাখা পাপলিপ্ত অসহায় দুঃখী মানুষই একদিন বিশ্ব নিয়ন্ত্রিত করবে-কিছু করতে যদি নাই পারি তাদের সাথে প্রাণ ভয়ে যেন কাঁদতে পারি।” ‘বিদ্রোহী’ কবিতায় এক প্রবল প্রতিবাদ ও বিদ্রোহের সুর নিয়ে উপস্থিত হলেন। প্রতিটি শব্দের মধ্যেই যেন রণঝংকার বাজিয়ে তুলতে চাইলেন। ক্রমাগত ‘আমি’ শব্দের ব্যবহার করে প্রতিবাদের সুর ধ্বনিত করতে থাকেন। কবিতায় ধ্বনিত হয়-“আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম, ভাসমান মাইন/আমি ধূর্জ্জটী, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল বৈশাখীর।” আবার ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় কবি সাম্যের কথা ঘোষণা করেছেন কৃষক, শ্রমিকদের জয়গান গেয়েছেন। সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে তিনি মানুষের জয়গান গেয়েছেন। ‘সাম্যবাদী’ কবিতায় শুনতে পাই-“গাহি সাম্যের গান-/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।” নজরুলের কাব্যের নামগুলি স্মরণ করলেই স্পষ্ট হবে, সেখানে বিদ্রোহ, প্রতিবাদের সুর রয়েছে। যথা-‘অগ্নিবীণা’, ‘ভাঙার গান’ ও ‘সর্বহারা’। তিনি তাঁর কলমেই যুখ নামিয়ে আনেন। ‘আমার কৈফিয়ৎ’ কবিতায় শুনতে পাই-“রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা/তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা।”