বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ সাধারণত চারটি প্রধান পর্বে ভাগ করা হয়:
১. প্রাচীন যুগ
২. মধ্যযুগ
৩. আধুনিক যুগ
৪. উত্তর আধুনিক যুগ
১. প্রাচীন যুগ (৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ – ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ)
বৈশিষ্ট্য:
- সংস্কৃতের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার প্রাথমিক বিকাশ।
- মৌখিক সাহিত্যের প্রাধান্য।
- প্রধানত ধর্মীয় ও লোকগাথা ভিত্তিক।
সাহিত্যিক নিদর্শন:
- চর্যাপদ (আনুমানিক ১০ম-১২শ শতাব্দী): বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
- প্রধান চর্যাপদ রচয়িতারা: লুইপা, কাহ্নপা, ভুসুকুপা।
২. মধ্যযুগ (১৩৫০ – ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ)
বৈশিষ্ট্য:
- ধর্মীয় প্রভাব (বিশেষত বৈষ্ণব ও ইসলামী সাহিত্য)।
- প্রেম, ভক্তি, এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলি সাহিত্যিক রচনায় প্রভাবিত।
- মূলত পদাবলী কাব্যের চর্চা।
সাহিত্যিক নিদর্শন:
- বৈষ্ণব পদাবলী: বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস।
- মঙ্গলকাব্য: কৃত্তিবাস ওঝা (কৃত্তিবাসী রামায়ণ), কাশীরাম দাস (মহাভারত)।
- ইসলামী সাহিত্য: সৈয়দ সুলতান (নবীবংশ), দৌলত কাজী (লোরচন্দ্রানী)।
৩. আধুনিক যুগ (১৮০০ – ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ)
বৈশিষ্ট্য:
- ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যধারার অনুপ্রবেশ।
- মানবতাবাদ, সামাজিক সংস্কার, এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর জোর।
- ছাপাখানার আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রাচুর্য বৃদ্ধি।
সাহিত্যিক নিদর্শন:
- প্রথম যুগের সাহিত্যিকরা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (বর্ণপরিচয়), মধুসূদন দত্ত (মেঘনাদবধ কাব্য)।
- রবীন্দ্রযুগ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (গীতাঞ্জলি, ছোটগল্প, নাটক)।
- সেকালের অন্যান্য সাহিত্যিক: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (আনন্দমঠ), শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (দেবদাস)।
৪. উত্তর আধুনিক যুগ (১৯৪৭ – বর্তমান)
বৈশিষ্ট্য:
- দেশভাগ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং বিশ্বায়নের প্রভাব।
- বহুমাত্রিক সাহিত্যিক অভিব্যক্তি এবং সামাজিক বাস্তবতা প্রতিফলিত।
- ছোট গল্প, কবিতা, এবং উপন্যাসে নতুন ধারার প্রচলন।
সাহিত্যিক নিদর্শন:
- জীবনানন্দ দাশ (বনলতা সেন, রূপসী বাংলা)।
- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (সেই সময়), শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় (জনার্দন যাত্রা)।
- সমরেশ মজুমদার (কালবেলা), শঙ্খ ঘোষ (দিনগুলি রাতগুলি)।
প্রতিটি যুগেই বাংলা সাহিত্যের বিকাশ ধাপে ধাপে সমাজ, সংস্কৃতি, এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে যুক্ত।