বাংলা নাটকে গিরিশচন্দ্রের অবদান আলোচনা করো। অথবা, অভিনেতা ও নাট্যকার হিসেবে উনিশ শতকের বাংলা নাটক বিকাশে গিরিশচন্দ্রের ভূমিকা কতখানি প্রাসঙ্গিক-আলোচনা করো।

শুধু নাট্যকার নন, অভিনেতা ও মঞ্চ প্রযোজক হিসেবে গিরিশচন্দ্র ঘোষ নাট্য সাহিত্যের ইতিহাসে এক মাইলস্টোন। সাধারণ রঙ্গালয়ের সূচনা হয়েছিল গিরিশচন্দ্র ঘোষের হাত ধরে। নাট্যশিল্প শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত মানুষের জন্য নয়, তা সাধারণ মানুষের

 বিনোদনের সঙ্গী: নাটককে উচ্চবিত্তের অন্দরমহল থেকে সাধারণ মানুষের দরবারে উপস্থিত করার কৃতিত্ব তাঁরই। প্রসঙ্গত স্মরণ করা যেতে পারে, নাট্য সমালোচক অপরেশ মুখোপাধ্যায়-এর কথা-

“গিরিশচন্দ্র এদেশের নাট্যশালার প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন মানে-তিনি অন্ন দ্বারা ইহার প্রাণ রক্ষা করিয়াছিলেন, বারবার স্বাস্থ্যকর আহার দিয়া ইহাকে পরিপুষ্ট করিয়াছিলেন; ইহার মজ্জায় মজ্জায় রসসঞ্চার করিয়া ইহাকে আনন্দপূর্ণ করিয়া তুলিয়াছিলেন; আর এই জন্যই গিরিশচন্দ্র Father of the Native Stage-ইহার খুড়ো জ্যাঠা আর কেহ কোনোদিন ছিল না।”

গিরিশচন্দ্র যখন রঙ্গমঞ্চে প্রবেশ করেন তখন নাটকের শৈশব দশা। রঙ্গমঞ্চের প্রয়োজনে যেমন তাঁকে নাটক লিখতে হয়েছে তেমনি মঞ্চের প্রয়োজন মেটাতে উপন্যাসের নাট্যরূপও দিতে হয়েছে। সাধারণ রঙ্গালয়কে কেন্দ্র করে তখন বাংলা নাট্যসাহিত্যে জোয়ার এসেছে। নাট্যমোদী দর্শকদের পিপাসা মেটাতে গিরিশচন্দ্র ঘোষকে যেন অবিরাম নাটক লিখে যেতে হয়েছে। গিরিশচন্দ্রের নাট্যধারাকে নানা ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

ক। পৌরাণিক নাটক ‘অভিমন্যু বধ’, ‘রাবণবধ’, ‘পান্ডবের অজ্ঞাতবাস’, ‘দক্ষযজ্ঞ’, ‘চৈতন্যলীলা’ ও ‘বিশ্বমঙ্গল’।

খ। ঐতিহাসিক নাটক: ‘কালাপাহাড়’, ‘সিরাজদৌল্লা’, ‘মীরকাশিম’, ‘ছত্রপতি শিবাজী’ ও ‘অশোক’।

গ। গীতিনাট্য: ‘অকালবোধন’, ‘আগমনী’, ‘স্বপ্নের ফুল’ ও ‘অশ্রুধারা’।

ঘ। সামাজিক নাটক ‘প্রফুল্ল’ (১৮৮৯), ‘হারানিধি’, ‘মায়াবসান’ ‘বলিদান’ (১৯০৫)।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading