বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে ‘ভোরের পাখি’ হিসেবে কে পরিচিত? তাঁর কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের নাম উল্লেখ করো। তাঁর কবিপ্রতিভার পরিচয় লিপিবদ করো।

বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে ‘ভোরের পাখি’ হিসেবে পরিচিত কবি বিহারীলাল চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-“বিহারীলাল তখনকার ইংরেজি ভাষায় নব্যশিক্ষিত কবিদিগের ন্যায় যুদ্ধবর্ণনা সংকুল মহাকাব্য, উদ্দীপনাপূর্ণ দেশানুরাগমূলক কবিতা লিখিলেন না এবং পুরাতন কবিদিগের ন্যায় পৌরাণিক উপাখ্যানের দিকেও গেলেন না, তিনি নিভৃতে বসিয়া নিজের ছন্দে নিজের মনের কথা বলিলেন।” তাঁর উল্লেখ যোগ্য কাব্যগুলি হল ‘বন্ধুবিয়োগ’, ‘নিসর্গ সন্দর্শন’, ‘বলাসুন্দরী’, ‘সারদামঙ্গল’ ও ‘সাধের আসন’।

বিহারীলালের প্রথম রচনা ‘স্বপ্নদর্শন’ হলেও দ্বিতীয় কাব্য ‘সঙ্গীত শতক’ থেকেই তাঁর কবিপ্রতিভার পূর্ণ বিকাশ লক্ষ করা যায়। ‘সঙ্গীত শতক’ একশোটি গানের সংকলন। ‘বাসুন্দরী’ কাব্যে কবি বঙ্গানারীকে নানাভাবে চিত্রিত করেছেন। এইসব চিত্রণ বিহারীলালের একান্ত নিজস্ব। ফলে মধ্যযুগ ও মহাকাব্যের নারী থেকে স্পষ্ট পৃথক অবস্থান এখানে লক্ষ করা যায়। সুরবালার যে মূর্তি আমরা পাই তা বেশ জীবন্তভাবে পাঠককে নাড়া দেয়-

“মধুর তোমার ললিত আকার মধুর তোমার চাঁচর কেশ মধুর তোমার পারিজাত হার মধুর তোমার মনের বেশ।”

‘বন্ধুবিয়োগ’ কাব্যে তিনি চার বন্ধুর বিয়োগব্যথাকে স্মরণ করেছেন। ‘নিসর্গ সন্দর্শন’ কাব্যে প্রকৃতির এক নিবিড় চিত্র অঙ্কনে অগ্রসর হয়েছেন। তবে সেই প্রকৃতির মধ্যে প্রেম, প্রকৃতি এনে তিনি এক অনবদ্য ক্যানভাস অঙ্কন করেছেন।

বিহারীলালের কবিপ্রতিভার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য। তিনি নিজেই জানিয়েছেন-মৈত্রী বিরহ, প্রীতি বিরহ ও সরস্বতী বিরহে উন্মত্ত হয়ে তিনি এ কাব্য রচনা করেন। এ কাব্যে তিনি ত্রিবিধ সরস্বতীর আরাধনা করেছেন। এই সারদাকে তিনি কখনও জননীরূপে, কখনও প্রেয়সী ও কন্যারূপে কল্পনা করেছেন। তবে এটি কিন্তু কোনো মঙ্গলকাব্য নয়। তিনি মঙ্গলকাব্যের ধাঁচে নতুন জীবনবোধের গল্প শোনাতে চেয়েছেন। নিজের অন্তরে প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে তিনি একান্তভাবে এই সারদাকে গড়ে তুলেছেন। এজন্যই সারদাকে কবির দেখার একান্ত বাসনা-

“দাঁড়াও হৃদয়েশ্বরী ত্রিভুবন আলো করি

দু নয়ন ভরি ভরি দেখিব তোমায়।”

রবীন্দ্রনাথের বউঠান কাদম্বরী দেবী ছিলেন বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গল’-এর ভক্ত পাঠিকা। সারদামঙ্গল-এর কিছু পক্তি তিনি এক আসনে লিখে তা বিহারীলালকে উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল-“হে যোগেন্দ্র। যোগাসনে/ঢুলুঢুলু দুনয়নে/বিভোর বিহ্বল মনে কাঁহারে ধেয়াও।” এ প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যই বিহারীলাল লিখেছিলেন ‘সাধের আসন’ কাব্য। কিন্তু তার আগেই কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু ঘটে, ফলে উত্তর আর তিনি বিহারীলালের কবিপ্রতিভার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘সারদামঙ্গল’ কাব্য। তিনি নিজেই জানিয়েছেন-মৈত্রী বিরহ, প্রীতি বিরহ ও সরস্বতী বিরহে উন্মত্ত হয়ে তিনি এই কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যে তিনি সরস্বতীর আরাধনা করেছেন। এই সারদাকে তিনি কখনও জননীরূপে, কখনও প্রেয়সী ও কন্যারূপে কল্পনা করেছেন। তবে এটি কিন্তু পুরোনো মঙ্গলকাব্য নয়। তিনি মঙ্গলকাব্যের পাঁচ নতুন জীবনবোধের গল্প শোনাতে চেয়েছেন। নিজের অন্তরে প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে তিনি একান্তভাবে এই সারদাকে গড়ে তুলেছেন। এজন্যই সারদাকে কবির দেখার একান্ত বাসনা-

“দাঁড়াও হৃদয়েশ্বরী

ত্রিভুবন আলো করি

দু নয়ন ভরি ভরি দেখিব তোমায়।”

রবীন্দ্রনাথের বউঠান কাদম্বরী দেবী ছিলেন বিহারীলালের ‘সারদামঙ্গল’-এর ভক্ত পাঠিকা। ‘সারদামঙ্গল’-এর কিছু পত্তি তিনি এক আসনে লিখে তা বিহারীলালকে উপহার দিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল “হে যোগেন্দ্র। যোগাসনে/দুলুঢুলু দুনয়নে/বিভোর বিহবল মনে কাঁহারে ধেয়াও।” এ প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্যই বিহারীলাল লিখেছিলেন ‘সাধের আসন’ কাব্য। কিন্তু তার আগেই কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু ঘটে, ফলে উত্তর আর তিনি শুনে যেতে পারেননি। কবি লিখেছিলেন-“কাহারে ধেয়াই আমি নিজে আমি জানি নে।”

বিহারীলাল আধুনিক গীতিকবিতার প্রবর্তক। তাঁর হাত ধরেই বাংলা আধুনিক গীতিকবিতার যেমন সূচনা হয়েছিল তেমনি উনিশ শতকে কিছু কবি বিহারীলালকে সামনে রেখে কাব্য পরিক্রমায় যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-“সে প্রত্যুষে অধিক লোক জাগে নাই এবং সাহিত্যকুঞ্জে বিচিত্র কলগীত কূজিত হইয়া উঠে নাই। সেই ঊষালোকে কেবল একটি ভোরের পাখি সুমিষ্ট সুন্দর সুরে গান ধরিয়াছিল। সে সুর তাহার নিজের।”

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading