বাংলা কাব্যে মানকুমারী বসুর অবদান

মানকুমারী বসু (১৮৬৩ খ্রীঃ-১৯৪৩ খ্রীঃ)■

উনিশ শতকের বাংলাদেশে স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তার, স্ত্রীলোক-পাঠ্য পত্রিকা প্রকাশ (যেমন ‘মাসিক পত্রিকা’, ‘বামাতোষিণী’ ইত্যাদি) এবং নারী কল্যাণমূলক বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস প্রকাশের পরমা ফলশ্রুতি হল মহিলা-কবিদের আবির্ভাব। এইসব কবিদের মধ্যে মধুসূদনের ভ্রাতুস্পুত্রী মানকুমারী বসু সহজাত কবি-প্রতিভা নিয়ে বাংলা কাব্যের জগতে আবির্ভূতা হয়েছিলেন।

কাব্যের শ্রেণী ও বিষয়: সমালোচক শ্রীযোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত মানকুমারীর গীতি- কবিতাসমূহকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন: (১) সামাজিক, (২) প্রাকৃতিক, (৩) জাতীয়তা বা স্বাদেশিকতা, (৪) সাময়িক ঘটনা (৫) পৌরাণিক শিশু কবিতা। এছাড়া অভিমন্যু-বধ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘বীরকুমার বধ কাব্য’ মুখ্যতঃ এপিক লক্ষণাক্রান্ত।

কৌলীন্য প্রথা এবং বৈধব্যের জন্য বঙ্গললনাদের দুঃখভোগের পরিচয়দান অথবা পতিতা নারীর প্রতি অবিচারের সমারেমে মরমে মার ইলিনীনা কুমারীদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন:

কবি মানকুমারীর নিজের বৈধব্য জীবনের যন্ত্রণাময় অভিজ্ঞতা এই কবিতার মধ্যে অভিব্যক্ত। তাঁর ‘সহমরণ’, ‘অভাগিনী’, ‘পতিতোদ্ধারিণী’ ইত্যাদি কবিতায় নারীর প্রতি সমাজের নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে অপরিসীম মমতা এবং ব্যঙ্গের কষাঘাত অনুভব করা যায়; যেমন ‘পতিতোদ্ধারিণী’ কবিতায় আছে কিভাবে আমাদের সমাজে পতিতা নারীর আত্মশুদ্ধির চেষ্টা ব্যর্থ হয় |

ছাদেশিক মহিমায়ও প্রদীপ্ত। তাঁর রচিত ‘সাধের মরণ’, ‘মায়ের সাধ’ প্রভৃতি কবিতাগুলি এক্ষেত্রে স্মরণযোগ্য। যেমন ‘সাধের মরণ’ কবিতায় আছে|

(শিবপূজা’ কবিতায় দেখা যায় “সর্বজীবে সম্প্রীতিময় প্রেমিক শিবের উদার উন্মুক্ত প্রাণখোলা প্রীতি ও প্রেমনিষ্ঠা’র (দ্রষ্টব্যঃ ‘বঙ্গের মহিলা কবি’, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৩৮) প্রকাশ |

প্রেম-বিষয়ক কবিতাঃ মানকুমারীয় প্রেম-বিষয়ক কবিতার সংখ্যা স্বর, কিন্তু তবু তা স্বতন্ত্র অনুভবে দীপ্ত। গগনবিহারী সূর্যের সঙ্গে ধরাতলবাসিনী নলিনীর সম্বন্ধ-নির্ণয়

করতে গিয়ে তাঁর অনুপম উক্তি “নলিনীর ভালোবাসা-শুনে হাসি পায়,

সেতো ফোটে ঘোর পাঁকে,

‘কার মুখ চেয়ে থাকে? যে রাজা বিরাজে নিত্য আক্রাশের গায়।”

ভালোবাসার আকর্ষণীয় মোহময় শক্তি নরনারীর হৃদয়ে এমনভাবে ব্যাপ্ত হয় যে শত

বছরের ব্যবধানেও তা বিস্তৃত হয় নাঃ

“শত বছরের পথ,

তব পূর্ণ মনোরথ,

পরাণ জড়ান তবু পরাণের গায়,

আপনাকে প্রকাশ করিয়াছেন” (‘বঙ্গের মহিলা কবি’, পূর্বোক্ত, পৃষ্ঠা ১৩৫)। অন্তঃপুরবাসিনী ও বাল্যবিধবা হলেও কবি মানকুমারী বসু ছিলেন স্বশিক্ষিতা। বাংলা কাব্যের আসরে তাঁর প্রবেশ নীরবে ঘটলেও তাঁর কাব্যকবিতা নজরে পড়ার যোগ্য।

Share

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

error: Content is protected !!

Discover more from

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading