বর্ণ প্রথা প্রাচীন ভারতীয় সমাজের একটি সামাজিক স্তরবিন্যাস ব্যবস্থা, যা মানুষের পেশা এবং দায়িত্বের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করত। এই প্রথা চারটি প্রধান বর্ণে বিভক্ত ছিল: ব্রাহ্মণ (যাজক), ক্ষত্রিয় (যোদ্ধা ও শাসক), বৈশ্য (ব্যবসায়ী ও কৃষক), এবং শূদ্র (শ্রমিক)। এছাড়াও, বর্ণ প্রথার বাইরে ছিল একটি দল যারা “অস্পৃশ্য” হিসেবে পরিচিত ছিল, পরবর্তীতে এরা দলিত নামে পরিচিত হয়। বর্ণ প্রথা মূলত ধর্মীয় ও সামাজিক কাজের মাধ্যমে নির্ধারিত হত, এবং এতে সামাজিক গতিশীলতার সীমাবদ্ধতা ছিল। বর্তমান ভারতীয় সংবিধানে বর্ণ প্রথা অবৈধ হলেও, এর প্রভাব এখনও কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়।
সভা এবং সমিতির ওপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ | Write a short note on “Sabha’ and ‘Samiti”.
ভারতীয় সংস্কৃতিতে ‘সভা’ এবং ‘সমিতি’ ছিল প্রাচীনকাল থেকে প্রতিষ্ঠিত দুটি সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
সভা সাধারণত একটি পরামর্শমূলক সংস্থা ছিল, যা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত হত। রাজা বা শাসকগণ তাদের পরামর্শ ও সমর্থন পেতে সভার কাছে আসতেন। এরা রাজ্যের আইন প্রণয়ন, বিচার কার্যক্রম এবং নীতি নির্ধারণে সহায়তা করত।
সমিতি, অপরদিকে, সাধারণ নাগরিকদের নিয়ে গঠিত একটি বৃহত্তর সংস্থা ছিল। এটি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করত এবং বিভিন্ন সামাজিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে মতামত প্রদান করত। সমিতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার এক প্রকার প্রতিফলন ছিল, যা সাধারণ মানুষের আওয়াজ ও অভিজ্ঞতা রাজা বা শাসকদের কাছে পৌঁছাত।
মেগাছেন্সি কে ছিলেন | Who was Megasthenes?
মেগাস্থেনিস একজন প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ এবং ভূগোলবিদ ছিলেন, যিনি খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। তিনি সেলিউকাস নিকেটরের প্রতিনিধি হিসেবে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের (মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা) রাজদরবারে আসেন। তাঁর লেখা “ইন্ডিকা” বইটি প্রাচীন ভারতের সংস্কৃতি, রাজনীতি, এবং ভূগোল সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করে। মেগাস্থেনিসের বিবরণে ভারতের বিভিন্ন দিক যেমন শাসনব্যবস্থা, সমাজকাঠামো, প্রাণীজগৎ, এবং অর্থনীতি সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর কাজগুলি পরবর্তীতে ভারত সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের জ্ঞান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
মধ্যপন্থা বলতে কি বোঝ | What do you mean by ‘Middle Path”?
মধ্যপন্থা বলতে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি বোঝায় যা উগ্রতা বা চরমপন্থা এড়িয়ে চলে, এবং যা সাধারণত দুটি চরম মতামতের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। এটি একটি ব্যালান্সড বা মডারেট অবস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে সমঝোতা এবং যুক্তির মাধ্যমে সমাধান খোঁজা হয়।
ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি বা জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও মধ্যপন্থা প্রযোজ্য হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বৌদ্ধ ধর্মে “মধ্যম পথ” (মধ্যম মাগ্গা) একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা সংযম এবং সমতা বজায় রেখে চরম বিলাসিতা এবং চরম তপস্যার মধ্যে মধ্যবর্তী পথ অনুসরণ করার পরামর্শ দেয়। রাজনীতিতে, মধ্যপন্থীরা সাধারণত উদারপন্থী এবং রক্ষণশীল উভয় মতামতের মধ্যে অবস্থান করে।
অর্থশাস্ত্রের ওপর টীকা লেখ | Write a note on ‘Arthasastra’.
অর্থশাস্ত্র হলো প্রাচীন ভারতের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং প্রশাসন সংক্রান্ত একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ, যা মূলত চাণক্য বা কৌটিল্য রচনা করেছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে রচিত এই গ্রন্থটি মौर্য সাম্রাজ্যের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক নীতিগুলির ওপর বিশেষ আলোকপাত করে। এতে শাসনকলা, রাজস্ব সংগ্রহ, বাণিজ্য, আইন, যুদ্ধ এবং কূটনীতি সংক্রান্ত বিস্তৃত নির্দেশনা রয়েছে।
অর্থশাস্ত্র রাজ্য পরিচালনার একটি নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করত, যেখানে রাজা ও শাসকদের দায়িত্ব, আইন এবং শাসনব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার বিভিন্ন কৌশল ও নীতির কথাও তুলে ধরে। আধুনিক যুগেও, অর্থশাস্ত্র প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন গ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।